শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪৩ রাত
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৪:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাহিব রেজাকে এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়নি, রোগীর পরিবার আমাদের চেষ্টায় হ্যাপি ছিলো: ডা. স্বপ্নীল

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

ভূঁইয়া আশিক রহমান : [২] দৈনিক আমাদের নতুন সময় : রাহিব রেজা আপনার কাছে যেদিন এন্ডোসকপি করাতে এসেছিলেন, সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই, কী ঘটেছিলো সেদিন?


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় : দেখুন রাহিব রেজা আমাকে যেদিন দেখাতে আসেন, সেদিন তার অন্যতম একটি কমপ্লেইন ছিলো পেটে ব্যথা। আমি তাকে এন্ডোসকপি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিই। আমার কাছে যখন কোনো রোগী এন্ডোসকপি করতে আসেন, তখন আমি তাকে দুইভাবে পরীক্ষাটি করার প্রস্তাব দিইÑ হয় ঘুম পাড়িয়ে, অথবা ঘুম না পাড়িয়ে। কেউ যখন ঘুম পাড়িয়ে এন্ডোসকপি করতে সম্মত হন, তখন তাকে এন্ডোসকপি করার আগে একটি সম্মতিপত্র বা ইনফমর্ড কনসেন্ট ফর্মে স্বাক্ষর করতে হয়। এরপর আমরা তাকে মিডাজোলাম নামক একটি ঘুমের ওষুধ লো ডোজে শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করে থাকি। রোগী ঘুমিয়ে গেলে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য এন্ডোসকপি চলাকালীন সময়ে মনিটর ও ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে, যা রাহিব রেজার বেলাতেও ছিলো। 

[৩] এন্ডোসকপি করতে কতোক্ষণ সময় লাগে?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : রাহিব রেজার এন্ডোসকপিটি করতে এক মিনিটের আশেপাশে সময় লাগে এবং এন্ডোসকপি শেষে তাকে ট্রলি বেডে করে অবজারভেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সিস্টার দেখতে পান যে তার পালস, ব্লাডপেশার ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন ফল করছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বিষয়টি জানান এবং আমরা দ্রুতই তাকে রিসাসিটেট করতে সক্ষম হই। 

[৪] তারপর পরিস্থিতি কোনদিকে গেলো? আপনাদের ব্যবস্থাপনা কী ছিলো?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : এ সময় রাহিব রেজার স্যাচুরেশন আবারও ফল করতে শুরু করলে আমি তার আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ করি। আমরা তার একজন বন্ধুকে খুঁজে পাই এবং তার কাছে রাহিব রেজার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করি এবং জানাই যে রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে, আমাদের দ্রুত তাকে আইসিইউতে শিফট করতে হবে। তিনি উত্তরে আমাদের জানান যে, তাকে রাহিব রেজার বোনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। আমরা তাকে জানাই, আমরা এখনই রোগীকে আইসিইউতে শিফট করছি। তিনি যেন রাহিব রেজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরই মধ্যে আমরা আইসিইউকে ইনফর্ম করি এবং অক্সিজেন সাপোর্টসহ রাহিব রেজাকে ওই একই ট্রলিতে করে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের দোতলার এন্ডোসকপি স্যুইট থেকে তিন তলায় আইসিইউতে শিফট করি। সেখানে রাহিব রেজাকে ভেন্টিলেটারে তোলা হয়। এর মধ্যে তার আত্মীয়-স্বজন সেখানে উপস্থিত হন এবং তাদের পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়। 

[৫] পরিবারের অভিযোগ, রাহিব রেজার চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। আপনি কি চিকিৎসা চলাকালে সর্বক্ষণ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হলেও আমি ছাড়াও আইসিইউ, নিউরোমেডিসিন, পালমোনোলজি, কিডনি, মেডিসিন ও কার্ডিওলোজি বিশেষজ্ঞ রাহিব রেজাকে দেখে যান এবং তার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্বন্ধে তার আত্মীয়দের অবহিত করেন। এদিন আমার প্রয়াত মায়ের চল্লিশার জন্য আমি রাহিব রেজার আত্মীয়দের অবহিত করে দিনাজপুর যাই, তবে সেখানে আমার অবস্থান সংক্ষিপ্ত করে আমি সেদিনই ঢাকায় ফিরে আসি এবং আইসিইউতে তাকে দেখতে যাই।
 
[৬] পরিবারকে কি রাহিব রেজার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়েছিলো? মেডিকেল বোর্ড গঠনের কথা বলছিলেন আপনি বিভিন্ন মিডিয়ায়। ব্যাপারটা কি একটু খুলে বলা বলবেন?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : রাহিব রেজার আত্মীয়দের অনুরোধে আমরা ১৭ ফেব্রুয়ারি, শনিবার দুপুরে একটি মেডিকেল বোর্ডের ব্যবস্থা করি। সেখানে তার আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীদের তার সর্বশেষ অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করা হয়। রবিবার সকালে রাহিব রেজার ব্রেন ডেথ হয়। এ সময় আমি নিজে তার আত্মীয়দের এ বিষয়টি অবহিত করি। তাদের অনুরোধেই রোগীর ভেনটিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখি। চিকিৎসা চলাকালীন সময় রাহিব রেজার আত্মীয়দের অনুরোধে আমরা চিকিৎসার বিস্তারিত তথ্যাদি লিখিতভাবে তাদের প্রদান করি। রোগীর পরিবার সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও ঢাকার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের জানান যে সেসব হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়েছে, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসাপাতালে তাকে যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে এবং হচ্ছে তা সঠিক। কিন্তু আমাদের সব প্রয়াসকে ব্যর্থ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে রাহিব রেজা মারা যান। 

[৭] বলা হচ্ছে আপনি রাহিব রেজার আগের রিপোর্টগুলো ঠিকমতো দেখেননি। তার অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ছিলো, যা আপনি ইগনোর করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? 

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : দেখুন রাহিব রেজার সমস্ত প্রাপ্ত রিপোর্ট আমি দেখেছি। তার এমন কোনো রোগ ছিলো না যে কারণে তাকে মিডাজোলাম দিয়ে ঘুম পারিয়ে এন্ডোসকপি করা যাবে না। মিডাজোলাম ওষুধটি বাজারে ডরমিকাম, হিপনোফাস্ট, মাইলাম ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই ওষুধটি খেয়ে ঘুমাতে যান। তাদের কেউই এই ওষুধটি খাওয়ার আগে প্রি-এনেসথেটিক চেকাপ করেন না বা কোনো বিশেষজ্ঞ এনেসথেসিস্টের সাহায্য নিয়ে ঘুমাতে যান না। তাছাড়া রাহিব রেজা বা তার বন্ধু কেউই আমাদের তার অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার বিষয়ে অবহিত করেননি। তার এই রোগ থাকার স্বপক্ষে কোনো পরীক্ষার রিপোর্টও আমরা পাইনি। আপনাদের অবগতির জন্য বলতে চাই যে, অবস্ট্র্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ডায়াগনোসিস করতে হলে রোগীকে এক রাত একটি মেশিন লাগিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করতে হয় যাকে আমরা পলিসমনোগ্রাফি বলি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালেও একদিনে একজনের বেশি রোগীর পলিসমনোগ্রাফি পরীক্ষা করা যায় না।

[৮] পরিবার কি রাহিব রেজার চিকিৎসা ব্যবস্থায় হ্যাপি ছিলো?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : হ্যাঁ- রোগীর পরিবার আমাদের ওপর আস্থাশীল ছিলেন। বলেছিলেন, আপনারা সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। আমরা আমাদের চিকিৎসাবিদ্যার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। রোগী সর্বক্ষণ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে ছিলেন। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম। সেখানে রোগীর একজন পরিচিতি চিকিৎসকও ছিলেন। রোগীর পরিবারের সদস্যও ছিলেন। চিকিৎসা কার্যক্রমে রোগীর পরিবার হ্যাপি ছিলো। কারণ তারা কাছ থেকে দেখেছিলেন, আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টাটুকু। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না। 

[৯] হ্যাপি থাকলে পরে এতো অভিযোগ কেন করেছিলো রাহিব রেজার পরিবারের পক্ষ থেকে?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : সেটা তো আমরা জানি না। তবে রোগীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের কোনো অভিযোগ ছিলো না। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আস্থা দেখিয়েছেন। বিশ্বাস রেখেছিলেন। পরে কী হলো কেবল তারাই বলতে পারবেন। 

[১০] অভিযোগ উঠেছে, আপনি ভিআইপিদের ডাক্তার। রোগী রেখে বাইরে চলে যান। মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। এ ব্যাপারে কী বলবেন আপনি?


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : যারা আমার পরামর্শ নিতে আসেন, তারা কি তাহলে সবাই ভিআইপি? আপনি আমার চেম্বারে আসলে দেখতে পাবেন, এর সত্যতা কতোটুকু কী। আমি আসলে সবার ডাক্তার। ভিআইপিরাও এ দেশের নাগরিক। ভিআইপিরা যেমন আমার পরামর্শ নেন, ধনী-গরিব, মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সব শ্রেণির রোগীই আসেন আমার এখানে। প্রতিদিন শত রোগী আসেন আমার পরামর্শ নিতে। সবাই কি তাহলে ভিআইপি? না। এর মধ্যদিয়েই প্রমাণিত হয়, অভিযোগের সত্যতা নেই। রোগীরা আমার ওপর আস্থা রেখে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। কেউ এসে আমার পরামর্শ ছাড়া চলে যাবেন, এটা কী করে হয়। ফলে যারাই আসেন তাদের আমি পরামর্শ দিই, সেটা যতো রাতই হোক না কেন। এ কারণে অনেকসময় আমাকে মধ্যরাত পর্যন্ত হসপিটালে থাকতে হয়। কেউ কি ইচ্ছে করে হসপিটালে বসে থাকে? থাকে না। আপনারা কি চানÑযারা আমার পরামর্শ নিতে আসেন, তাদের হতাশ করে আমি বাসায় চলে যাই? এটা কি মানবিক কাজ হবে? হবে না। মানবিক কারণেই আমি রোগী দেখা শেষ করেই বাসায় ফিরি। এতে আমার অনেক কষ্ট হয় বটে, তবে চিকিৎসাসেবার ব্রত নিয়ে যখন চিকিৎসক হয়েছি, তখন মেনে নিয়েছে এই কষ্ট। মানুষের সেবায় এই কষ্ট নিতে আমি রাজি আছি, আমৃত্যু। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়