জাহিদ হোসেন: গণপিটুনি, গণহিংসা বা গণঘৃণা প্রিয় বিনোদন হয়ে উঠছে। বুঝতেই পারছি না কীভাবে দ্রুত একটা ‘মব নেশনে’ পরিণত হচ্ছি আমরা। বিদেশ থেকে দেশে বেড়াতে আসা ভাগ্নিদের নিয়ে রাস্তায় তার হেনস্থার কথা লিখেছেন আমিনুল ইসলাম নামের ফেসবুকের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। রিসোর্টে গিয়ে পরিবার সহ হামলার শিকার হয়েছেন এক পরিবার। ছোট ছোট আতঙ্কিত শিশুর প্রতিও হামলাকারীরা রহম করেননি। বিদেশি এক নারী কক্সবাজার বিচে সানবাথ নেওয়ার সময় একটা ভিডিও করে এক্স হ্যান্ডেলে ছেড়েছেন। অবদমিত কামনাকাতর গরিষ্ঠের ‘চোখের জেনা’। একটুও জানার চেষ্টা না করে গরিষ্ঠ জনতা হিজড়াকে জেন্ডার মনে করলো। ট্রান্সজেন্ডারকে ইন্টারসেক্স মনে করলো। কোন বিদ্যা দিয়েই তাদেরকে বুঝানো গেল না।
প্রাপ্তবয়স্ক তিশা আইন অনুসারেই বিয়ে করলেন। বারবার বিভিন্ন মাধ্যমে বললেন যে বিয়েতে তার ফুল, ফ্রি এন্ড ইনফরমড কনসেন্ট ছিল, তবু গরিষ্ঠ ধরে নিল তার উপর অন্যায় হয়েছে। গরিষ্ঠ ধরে নিল যে, তিনি বাচ্চা একটি মেয়ে, তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করে ‘অপরাধ’ করেছে মোশতাক। এবং গরিষ্ঠের সবচেয়ে বঞ্চিত সবচেয়ে অবদমিত তারুণ্য একত্রিত হয়ে প্রবল বিক্রমে তাকে আর তার স্বামীকে বইমেলা থেকে বের করে দিল। বইমেলা কর্তৃপক্ষ রইল নীরব। গরিষ্ঠ জনতা এখন মোরাল-পুলিশ। তারা মিলিতভাবে ‘বিচার’ করতে চাচ্ছে, ‘সমাজ’ আর ‘নৈতিকতা’ কে রক্ষা করার মহান দায়িত্ব ভলনাটারিলি কাধে তুলে নিচ্ছে।
ভিন্নমত ও বিদ্যাকে বাতিল করে দিচ্ছে, অন্যচিন্তার আর রুচির মানুষকে বহিষ্কার করে দিচ্ছে। এই যে ধরে নেওয়া, তিশাকে এক্সপ্লয়েট করা হয়েছে, অসমবয়সী বিয়ে মানেই ‘অন্যায়’ এটাই জাজমেন্টালিজম। এই যে ধরে নেওয়া, বয়স্ক বড়লোক মানেই সুগার ড্যাডি, এটাই বায়াস। আর এই যে মুখে মুক্ত জীবনের কথা বলা আর মনে মনে মোশতাককে হিংসা করা, এটাই হিপোক্রেসি। রেখা মাত্রই সরলরেখা হবে, তা নয়। বক্ররেখাও রেখা। নিজের জীবনকেই পুরো বুঝি না, অন্যের জীবনের কতটুকু চিনি আমরা? কটা জীবনকে জানি? ফেসবুকে ১০-২-২০২৪ প্রকাশিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :