শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:১৬ রাত
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অসম-বয়েসী দাম্পত্য-বিরোধী জনতার মনোবিশ্লেষণ

মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বার্ষিক বইমেলায় এক প্রৌঢ় তাঁর যুবতী স্ত্রীকে নিয়ে গেলে সেখানে গণ-গঞ্জনার শিকার হয়ে মেলা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। কেউ- কেউ বলেছেন, জনতা ঐ দম্পতিকে বহিষ্কার করেছে। লক্ষ করছি, ফেইসবুকে অগণিত পৌস্ট প্রকাশিত হয়েছে ঘটনার প্রতিবাদে ও নিন্দায়। ঘটনাটি আমার কাছে যতো-না আবেগ-উদ্রেকিক, তার চেয়েও অধীক আগ্রহোদ্দীপক। জনতা যে-কারণে গঞ্জনা করেছে ঐ দম্পতিকে, গঞ্জনা-বিরোধীদের মতে, এর পেছেনে রয়েছে দোঁহের অসম-বয়েসী বিয়ে, যাদের মধ্যে বয়োঃপার্থক্য নানা-নাতনীর মতো, যদিও নাতনী-সদৃশ বধূটি বলেছেন সম্পর্কটি স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত। সমালোচক ও প্রতিবাদীগণ যথার্থই বলেছেন বিয়েটি সম্পূর্ণরূপে আইনসঙ্গত ও ধর্মসঙ্গত। একদম ঠিক!  প্রৌঢ়ের সাথে যুবতীর বিয়েতে না আছে রাষ্ট্রীয় নিষিদ্ধতা, না আছে ধর্মীয় পাপ - না হিন্দুত্বে না ইসলামে।

প্রশ্ন হতে পারেঃ তাহলে, অসম-বয়েসী এ-বিয়ের প্রতি এহেন জনতিক উষ্মা ও ক্ষোভের উৎপাদক কী? বিষয়টি সূক্ষ্মচিন্তার দাবী রাখে। প্রথমে বুঝা দরকার যে, আলোচ্য ক্ষোভ-উৎপাদকের উৎস রাষ্ট্রিক বা রাজনৈতিক নয়, কিংবা ধর্মীয়ও নয়। অর্থাৎ, এহেন বিয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা আইনও কিছু বলে না, ধর্মও কিছু বলে না। তাহলে? কে বলে তবে? অসম বয়েসী বিয়ের বিরুদ্ধে বলে সমাজ-সংস্কৃতি, যা রাজনীতি ও ধর্মের চেয়ে স্বতন্ত্র এবং শক্তির দিক থেকে অধিক শক্তিধর, যার স্থান প্রকৃতির পর। সংস্কৃতির আছে বিভিন্ন মূল্যবোধ, যা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঋণাত্মক আবেগ সঞ্চারিত হতে সহিংস আচরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করে। বাঙালী সংস্কৃতির মূল্যবোধ অসম-বয়েসী বিয়ের বিরুদ্ধে। যার পেছেনে আছে এনটাইটেলমেণ্টের ধারণা। অর্থাৎ, মূল্যবোধটি হচ্ছে এমন যে,  আপনি যদি প্রৌঢ় হন, আপনি যুবতী স্বামী হওয়ার জন্যে এনটাইটেলড্ নন - আপনি অপাত্র।

তাই আপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়বে আত্ম-বিবেচিত পাত্ররা। কারণ, আপনি তাদের এণ্টাইটেলমেণ্ট অন্যায়ভাবে না হলেও অন্ততঃ অন্যায্যভাবে কেড়ে নিয়েছেন। ফলে, তারা একটা কালেক্টিভ সেন্স অফ ডেপ্রাইভেইশন বা সম্মিলিত বঞ্চনা বোধ কাজ করেছে। আর, এই বোধই গড়ে তুলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

লক্ষ করে থাকবেন, ঐ দম্পতির - বিশেষতঃ পতির - বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে কোনো প্রৌঢ় নেই। কারণ, প্রৌঢ়দের মধ্যে যুবতী নারীকে পাওয়ার কোনো কামনা থাকলেও সাধারণতঃ যেমন কোনো এণ্টাইটেলমেণ্ট বোধ নেই, তেমনি কোনো ডেপ্রাইভেইশন বোধও নেই।

আলোচ্য ঘটনাটির আরেকটি দিক হচ্ছে বাঙালী সমাজে বিয়ের সামাজিকতার ব্যাপ্তি, যা ইউরোপ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে অনেক বেশি। ইউরোপে বিয়ে হচ্ছে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। মধ্যপ্রাচ্যে বড়োজোর পারিবারিক। কিন্তু বাংলায় এটি সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক। ফলে, বাঙালী সমাজে দাম্পত্য সম্পর্ক সামাজিক অনুমোদন সাপেক্ষ। অর্থাৎ, দোঁহের সম্মতিই যথেষ্ট নয়, সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক অনুমোদন প্রয়োজনীয়। উপরের আলোচনায় আমি কোনো ঔচিত্য বা অনৌচিত্যের সুপারিশ করিনি। আমি একটি আলোচিত ঘটনার সমাজ-মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করলাম মাত্র। তবে, আমার বিশ্লেষণ যে আপনাকে মানতেই হবে, এমন বাধ্যতা নেই। ১০/০২/২০২৪। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়