এ কে আজাদ: জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী, বাংলাদেশের পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্ম ঢাকায় ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭৪ সালে মা শেখ হাসিনা ও বড় ভাই সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে পিতার কর্মস্থল জার্মানিতে চলে যান শিশু সায়মা ওয়াজেদ। তাঁর খালাম্মা শেখ রেহানাও এসময় তাঁদের সাথে জার্মানিতে বেড়াতে যান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী উছৃংখল সদস্যের হাতে তাঁর নানা-নানু, তিন মামা ও নিকটাত্মীয়রা নিহত হলে মা-বাবা, ভাই ও খালাম্মার সাথে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলেরও জার্মানি থেকে ভারতে নির্বাসিত জীবন শুরু হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয় মায়ের সাথে ভারতে নির্বাসিত জীবনে থাকার সময়। তিনি ভারতের নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরবর্তিতে ১৯৭৭ সালে আমেরিকার ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজিতে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন।
একাডেমিক শিক্ষাজীবনের এ পর্যায়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল শিশুদের অটিজম ও স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর কাজ শুরু করেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে হু (ডব্লিউএইচও) এক্সেলেন্স পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তিনি আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার লাভ করেন। নিজের কাজের সক্রীয়তার জন্য ব্যারি বিশ্ববিদ্যায় তাঁকে ‘বিশিষ্ঠ প্রাক্তন শিক্ষার্থী পদক’ প্রদান করে। অটিজম নিয়ে তাঁর গবেষণা ও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
সায়মা ওয়জেদ পুতুল ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক’ নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ১১টি সদস্য দেশের মধ্যে ১০টি দেশ ভোট প্রদান করে। এতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী নেপালের ড. শম্ভু প্রসাদ আচার্যকে ৮-২ ভোটে হারিয়ে এই পদের জন্য নির্বাচিত হন। সদস্য রাষ্ট্রগুলি হলো- বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও তিমুর লেস্তে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সায়মা ওয়াজেদকে ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক’ হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বর্তমান পরিচালক পুনাম ক্ষেত্রপাল সিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
ডব্লিওএইচওর মহাপরিচাক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে সায়মা ওয়াজেদকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে দেয়া এক বার্তায় বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদস্য রাষ্ট্রগুলো ও নির্বাহী বোর্ডের আপনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তিনি আরও লিখেছেন, ‘অবশ্যই, আপনি একা নন। আপনাকে আঞ্চলিক অফিসে একটি অত্যন্ত নিবেদিত ও প্রতিভাবান দল সহয়োগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত। আপনার প্রতি আমার এবং সদর দপ্তরে আমার সহকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন ও বিশ্বাস রয়েছে। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।
যাঁর মাতামহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, মাতা পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর এই সাফল্য নিশ্চয়ই জাতিকে গৌরবান্বিত করেছে। তারকা রাজনীতিবিদদের সন্তানরা জাতির জন্য সম্মান বয়ে আনবে, আগামী প্রজন্মের কাছে রোল মডেল হিসাবে নিজেদের উপস্থাপন করবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। শুভ কামনা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
একেএ/এইচএ