শিরোনাম
◈ ওএমএস বিতরণে গাফলতি হলে জেল জরিমানার হুশিয়ারি খাদ্যমন্ত্রীর ◈ তৃতীয় দেশ দু-একশ জনকে আশ্রয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছাড়তে উৎসাহিত করছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ ভ্যাট বসলে মেট্রোরেলের সুনাম নষ্ট হবে: ওবায়দুল কাদের ◈ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সামান্য অর্থ বাঁচাতে গিয়ে দেশকে ধ্বংস করবেন না: প্রধানমন্ত্রী ◈ পাকিস্তানে বাস দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত ◈ ২১ মে ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ◈ ১১ বছর পর পঞ্চমবার এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশের বাবর আলী ◈ গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় ফের বাস্তুচ্যূত ৯ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ আরাকান আর্মির শহর দখল, বাড়িঘর জ্বালিয়ে ফের রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন ◈ জাবালিয়া শরণার্থী শিবির গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল, ২৪ ঘন্টায় নিহত ৮৩

প্রকাশিত : ০৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৩:১৮ রাত
আপডেট : ০৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৩:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুকুমার বড়ুয়া : ছড়া ও ছন্দের বাংলাদেশি জাদুকর

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত : সুকুমার দা না জন্মালে নিজেদের ছড়াকার বলতে কতো সময় লাগতো বলা মুশকিল। শুধু ছড়া লিখে নির্ভেজাল একুশে পদক পাওয়া এটাও কল্পনাতীত। বাংলা ছড়া সাহিত্যে দুজন সুকুমার। দু’জনের পিতৃভূমি, মাতৃভূমি বা আবাস বাংলাদেশে। অগ্রজজন আমাদের দেশের হলেও দেশভাগের পরে ভারতীয়। বাকিজন খাঁটি চাঁটগাইয়া। তাঁকে আমি প্রথম দেখি ঢাকায় তাঁর স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায়। সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, নাট্যশিল্পী সনজীব বড়ুয়া ও আমি ছিলাম হরিহর আত্মা। তিনজন মিলে ঢাকা গিয়ে হানা দিয়েছিলাম তাঁর বাসায়। বড় দীনদরিদ্র হতশ্রী অবস্থা। কিন্তু অসাধারণ সৃজন শক্তি আর উদ্ভাবনীতে তিনি তখন মধ্যগগনে। আমি ভাবছিলাম এমন একজন দিকপাল ছড়াকারের বাসায় ঢুকতে হলো ঘাড় নীচু করে? মাথা উঁচু করে গৃহপ্রবেশের মতো উচ্চতা ছিলোনা সে বাসায়। এই আমাদের ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া। তখন আমাদের অস্থি মজ্জার ভাঁজে ভাঁজে পশ্চিম বঙ্গের ছড়া। সে বাঁধন খুলে দিচ্ছিলেন ইনি এবং এর মতো আরো কয়েকজন। কেউ কেউ বলে তিনি নাকি লেখাপড়া জানেন না। যারা জানেন কথিত উচ্চডিগ্রীধারী তারা কেউ কি স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে ইয়াহিয়া খান কে নিয়ে এমন একটা ছড়া লিখতে পেরেছেন? ব্যাঙের ছানা মাপতে এলো নাম করা এক মাপিয়ে/তিড়িং বিড়িং পালা থেকে সব পড়ে যায় লাফিয়ে/একটা যদি খাবলে ধরে তিনটে আবার উল্টে পড়ে কি আর করে মনের দুখে লোকটা ওঠে হাঁপিয়ে/শেষে কি না কুয়োর জলে নিজেই পড়ে ঝাঁপিয়ে/কি হয় কথিত সার্টিফিকেট বিদ্যার জোরে? 

কে  এমন লিখতে পেরেছেন: একটা ঘোড়ার নাম বেশি আর একটা ঘোড়ার দাম বেশি/দু’ঘোড়াতে পেরিয়ে গেল চওড়া নদী জামবেসী/চওড়া নদী যে জাম্বেসি এটাও জানতেন তিনি। একবার তাঁর ৫০তম জন্মবার্ষিকীতে বিরাট এক আলোচনায় আমাকেও অতিথি করা হয়েছিলো। সে সভায় টাকা পয়সাওয়ালা এক লোক যাদের এখন স্পনসর বলা হয় তেমন একজন খুব গর্ব করে বলছিলেন, আমাদের এই অগ্রজ ছড়াকার কীভাবে তার বাসায় থাকতেন এবং তাকে দিয়ে তিনি কী কী করিয়ে নিতেন। আমার মেজাজ গেলো বিগড়ে। আমি সুকুমার বড়ুয়ার কয়েকটি ছড়ার উদ্বৃতি দিয়ে তাকে বিনীত আদেশ করেছিলাম, কিছুদিনের জন্য সুকুমার বড়ুয়ার বাড়িতে কাজ করে খেতে। তাতে যদি তার পাপমোচন ও বাঁচার সার্থকতা ফিরে আসে। আমাদের দেশের সুকুমার বড়ুয়া একাত্তরের কঠিন সময়ে সাতদিনের বর্ণনা দিয়ে একটি ছড়া লিখেছিলেন আজ অবদি তার যোগ্য ছড়া দেখিনি। সে ছড়ার কয়েকটা লাইন এমন: এক তারিখের কাগজখানা আনলো বিরাট খবর/ঘূর্ণিঝড়ে দশটা লোকের জ্যন্ত হলো খবর/সাত তারিখে উঠলো নড়ে সাত মহলার ভিত/স্বপনপুরের কাচের পুতুল গড়িয়ে পড়ে চিৎ।

সত্তরের ঘূর্ণিঝড় থেকে স্বাধীনতার এমন সহজ বিবরণ ছড়ায় পাওয়া বিরল। সুকুমার বড়ুয়ার ছড়ায় মেহমান সবকিছু ঠিক আছে, ঠিক আছে বলে ছাতা খানা বগল দাবা করে নিয়ে যায় জেগে থাকে ছন্দের অনুপম কারুকাজ। তার ছড়ার ভাঁজে ভাঁজে শিশু কিশোর বালকবেলা বালিকার চুলের ফিতে যৌবনের চোখ আর মনস্কদের ভাবনা ঘুরে বেড়ায়। এমন ছড়াকার আজ অবদি আর জন্মায়নি বাংলাদেশে। যে মানুষটি তোয়াক্কা না করে লিখতে পারেন: দেখছিরে ভাই দেখছি তোমার হক বিচারের নমুনা/খোলা মাঠে ক ইয়া দিমু কানে কানে কমুনা। তিনি যে হক বিচার পাবেন নাÑ এটাই তো স্বাভাবিক। অনেক পুরস্কার আর সম্মাননা পাবার পর আজ তিনি নীরবে নিভৃতে থাকা অদেখা অচেনা এক ছন্দের যাদুকর। ভয় পাই এই ছন্দময় ছড়াকারকে আড়ালে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা ম্যাজিকের লণ্ঠন দিয়ে যাবো কীভাবে? শুরুতে তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখার কথা লিখছিলাম। তখন আমি যৌবনেও পা দিইনি। সে বয়সে তাঁর গৃহপ্রবেশে ঘাড় নীচু করাটা তাঁর জন্য অসম্মানের মনে হয়েছিলো। আজ পরিণত বয়সে জীবনের অপরাহ্নে দাঁড়িয়ে মনে হয় তা ঠিকই ছিলো। অর্থ বিত্তহীন আমাদের সুকুমার বড়ুয়া আমাদের ছড়ার রাজার বাড়িতে যে ঢুকবে যারা যাবে তাদেরতো মাথা নীচু করেই ঢোকা উচিত। এতোবড় একজন মানুষের ছন্দের বাংলাদেশি জাদুকরের জন্মদিন ছিলো ৫ জানুয়ারি। শুভ জন্মদিন বদ্দা। গম থাইক্কন হারাজীবন। লেখক: ছড়াকার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়