শিরোনাম
◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:২৫ রাত
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৬:২০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: যারা নতুন শিক্ষাক্রমকে ফিনল্যান্ড মডেল বলে প্রচার করছেন তাদের এবং দেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা। ফিনল্যান্ডের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ২টি স্তরে ভাগ করা হয়। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সিক্স একটি স্তর, ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস নাইন আরেকটি স্তর। অর্থাৎ প্রথম স্তরের শিক্ষার্থীদের গড় বয়স ৭-১২ এবং দ্বিতীয় স্তরের শিক্ষার্থীদের গড় বয়স ১২ থেকে ১৫। লোয়ার স্তরে কী কী শেখানো হয়? মূলত মাতৃভাষা ২৩ শতাংশ, গণিত ১৬ শতাংশ, পরিবেশ এবং প্রকৃতি বিজ্ঞান ১১ শতাংশ এবং আরো অন্যান্য। এই ৬-১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের কারা পড়ায়? যারা পড়ায় তাদের বলা হয় ক্লাস টিচার। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো স্কুল শিক্ষা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সাবজেক্ট পড়ার জন্য কঠিন প্রতিযোগিতা। কারণ ফিনল্যান্ডে শিক্ষকদের সম্মান ও বেতন দুটোই বিশ্বসেরা। এই শিক্ষকদের পেডাগোজির উপর পড়াশোনা থাকতে হয়, চাইল্ড সাইকোলোজি সম্মন্ধে পড়াশোনা থাকতে হয়। যদিও এই শ্রেণিতে সবাই সব বিষয় পড়ানোর যোগ্যতা রাখে। তবুও শিক্ষকদের ইচ্ছাকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে কি পড়াতে হবে সেটা নিয়ে তেমন কোনো সিলেবাস নেই। শিক্ষকদের মোটামুটি একটা স্বাধীনতা দেওয়া হয়। 

উপরের স্তরটি বিশেষায়িত। এখানে শিক্ষকদের নির্দিষ্ট বিষয়ের এক্সপার্ট হতে হয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক হতে হলে শিক্ষককে মাস্টার্স করার সময় অন্তত ৭০ স্টাডি উইক ওই বিষয়ের কোর্স পড়া থাকতে হবে। এছাড়া ৩৫ স্টাডি উইক পেডাগোজি নিয়ে পড়া থাকতে হবে। এর মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস অন্তর্ভুক্ত। এই উপরের স্তরে ন্যূনতম বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো হলো মাতৃভাষা, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও ভূগোল। কোথায় তথ্য প্রযুক্তি? কোথায় জীবন ও জীবিকা? এছাড়া ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত কী কী রসায়ন শিখে? বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে বইয়ের কনটেন্ট, কাগজের মান ইত্যাদি সব কিছুতে মায়ার ছাপ থাকবে। আর আমাদেরগুলোতে লোভের ছাপ। তাহলে কি বুঝলেন? প্রাইমারি শিক্ষক যারা হবেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখেছেন? আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট এবং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অনেক শিক্ষকের যোগ্যতার সমান। তাদের বেতনও তেমনি লেভেলের আকর্ষণীয়। তাহলে ফিনল্যান্ড কী করেছে? আগে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় ও উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন করেছে। তারপর কী শেখানো হবে সেটা স্কুল কলেজ শেষে একজন শিক্ষার্থীকে কতটুকু শিখতে হবে সেই টার্গেট স্থির করে বড় পর্দায় কোন ক্লাসে কী পড়ানো হবে এবং কীভাবে প্রোগ্রেশনটা হবে নির্ধারণ করে বই লেখা হয়। এগুলো গবেষণা করে ঠিক করা হয়। 
একটি দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষা নিয়ে ভণ্ডামি করা যায় না। এখানকার শিক্ষক কারা হবে, তাদের বেতন ও সম্মান খুব বিবেচনা ও চিন্তা করে নির্ধারণ করতে হবে। এরা যদি সংসার চালাতে গিয়ে অর্থের টানা টানিতে ভোগে এরা কীভাবে আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াবে এবং শেখাবে? এই শিক্ষকদের একটা সুখি জীবন ধারণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফিনল্যান্ড মডেল ফিনল্যান্ড মডেল বললেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষা হয়ে যাবে না। আপনারা জিডিপির ১.৭৬ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেন যা পৃথিবীতে সর্বোনিম্নদের অন্যতম। আর ফিনল্যান্ড দেয় জিডিপির ৬ থেকে ৭ শতাংশ। ফলে এই মানের শিক্ষকতা যোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক হলে তাদের হাতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষমতা দেওয়া যায়। কারণ তাদের উপর এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপি, পাতিনেতারা এসে মাতব্বরি বা হেডম দেখায় না। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর সম্মান আর বেতনও দেওয়া হয় রাষ্ট্রের অনেক তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর চেয়ে কম। এদের দিয়ে রাষ্ট্র যতরকমের ছোটখাটো কাজ করিয়ে নেয়। এরা অত্যন্ত াঁষহবৎধনষব শ্রেণীর। আর তাদের ওপর নেস্ত করেছেন আমাদের ছোট ছোট সোনামনিদের পড়ানোর দায়িত্ব। আরেকটা কথা। একটি শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলাম হঠাৎ করে শতভাগ পরিবর্তন পৃথিবীর কোথাও করে না। পরিবর্তন আনতে হয় সাম্যাবস্থা বজায় রেখে একটু একটু করে যাতে ভুল হলেও ক্ষতি কম হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে রাক্ষসদের হাতে পড়েছে তার প্রধান প্রমাণ হলো একসঙ্গে শতভাগ পরিবর্তন করা। এটা কেবল এই বাংলাদেশেই সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ আর এই দেশের আমলা মন্ত্রী। ফেসবুকে ৩০-১১-২৩ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়