শিরোনাম
◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৩৪ দুপুর
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৩৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ই ছিল কিসিঞ্জারের একটি ব্যক্তিগত পরাজয়

ইমতিয়াজ মাহমুদ, ফেসবুক থেকে, হেনরি কিসিঞ্জার ঠিক একশ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন গতকাল রাতে। একশ বছর বয়স হয়েছিল, পুরো সুস্থ স্বাভাবিক বা শক্ত পোক্ত তো থাকার কথা না। ঠিকমত হাঁটতে পারতেন না, দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন না আরও কিছু সমস্যাও নিশ্চয়ই ছিল, তথাপি তার  মস্তিষ্ক সচল ছিল। মৃত্যুর কয়েক মাস আগেও চীন সফরে গেছেন, পরামর্শক হিসাবে কাজ করতেন, কংগ্রেসের কিসব কমিটির সামনে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন, নিজের বই প্রকাশ করেছেন - সক্রিয় ছিলেন।   

১৯২৩ সনে জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন, ইউরোপে হিটলারের ইহুদী নিধন যজ্ঞ শুরু হওয়ার আগেই ১৯৩৮এ পরিবারের সাথে আমেরিকা চলে আসেন কিশোর কিসিঞ্জার। জন্মের সময় নাম তার নাম ছিল হেইঞ্জ আলফ্রেড কিসিঞ্জার। আমেরিকাতে আসার পর নিজের জার্মান নামটিকে পাল্টে ইংরেজি স্টাইলে হেনরি করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার সেনাবাহিনীর হয়ে ইউরোপে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। হার্ভার্ড থেকেই স্নাতকোত্তর করেছেন, পিএইচডি করেছেন, সেখানেই শিক্ষকতা করেছেন নিক্সনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত। 

(২) দেখতে যে খুব একটা সুদর্শন ছিলেন সেকথা বলা যায় না। ইংরেজি উচ্চারণে জার্মান প্রভাব ছিল কানে লাগার মত। কূটনৈতিক আলাপ আলোচনায় চৌকশ হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথাবার্তায় খুব যে আকর্ষণীয় কথক ছিলেন সেকথা বলা যায় না। তারপরেও তিনি নারীদের আকর্ষণ করতেন প্রবলভাবে। সম্পর্কও হয়ে যেতো তার অনায়াসেই, নারীসঙ্গ উপভোগও করতেন। যৌবনে ওয়াশিংটনে ও নিউ ইয়র্কে অসংখ্য তারকা ও রূপসী নারীদের সাথে হয়েছিল তার ঘনিষ্ঠতা। নারীদের আকৃষ্ট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতা হচ্ছে অতি উত্তম কামোত্তেজক।

১৯৭৩ সনে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ভিয়েতনামের সাথে প্যারিস চুক্তি সম্পাদনের জন্যে। তাকে শান্তি পুরস্কার দিয়ে নোবেল একাডেমী সারা দুনিয়ায় সমালোচিত হয়েছিল। যে লোকটা সারা দুনিয়ায় যুদ্ধ বিগ্রহ লাগানো, নানা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করা, নানা কায়দায় নানা দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটানো এইসব কুকর্ম করে গেছে, তাকে কিনা দেওয়া হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার! সমালোচনা তো হবেই। দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে তাকে যুদ্ধাপরাধী বিবেচনা করা হতো, এই কারণে তিনি চট করে দক্ষিণ আমেরিকার কোন দেশে যেতেও পারতেন না গ্রেফতার হয়ে যাবেন এই ভয়ে। 

(৩) লোকটি লিখতেন চমৎকার। ঢাকায় কারা যেন একবার হেনরি কিসিঞ্জারের বেশ কয়েকটা বই বিক্রি করতো। আমি দুইটা বই কিনেছিলাম, এর মধ্যে ‘ডিপ্লোম্যাসি’ বইটার অর্ধেকটার মত পড়েছি। কূটনীতি বিষয়ে তো খুব একটা কিছু বলতে পারি না, তবে ইতিহাস পাঠকদের জন্যে ‘ডিপ্লোম্যাসি’ একটা চমৎকার গ্রন্থ। অনুমান করি যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিদ্যা বা কূটনীতি ইত্যাদি পাঠ করেন ওদের কাছে এইটা একটা প্রয়োজনীয় এবং অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ হবে। চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে হেনরি কিসিঞ্জারের লেখা, ঠিক পণ্ডিতদের সিরিয়া গ্রন্থ বেশীরভাগ সময় যেরকম শুষ্কং কাষ্ঠং ধরনের খটমটে হয় সেরকম না- আমার মত অল্পজ্ঞানি মানুষের জন্যেও সুখপাঠ্য। 

ব্যক্তিগত জীবনে কিরকম মানুষ ছিলেন সেটা বিশেষ জানিনা। বিবাহ বন্দনে  আবদ্ধ হয়েছিলেন দুইবার। প্রথম স্ত্রী এন ফ্লিশারের সাথে ১৯৬৪ সনে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়; পরে নিউইয়র্কের গভর্নর নেলসন রকফেলারের তরুণী সহকারী ন্যান্সি ম্যাগিনেসকে বিবাহ করেছিলেন। প্রথম ঘরে তিন সন্তান ছিল, দ্বিতীয় ঘরে সন্তানাদি নেই। 

(৪) এই লোকটাকে বাংলাদেশের কোন মানুষ খুব একটা পছন্দ করার কথা নয়। ওর নামেই ‘কিসিঞ্জার’ এবং ‘কিসিঞ্জারি’ এইসব নেতিবাচক কথা বাংলায় চালু হয়েছে। কিসিঞ্জার নিজেও বাংলাদেশকে যে খুব একটা ভালবাসতেন সেকথা বলা যায়না। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ই ছিল কিসিঞ্জারের একটি ব্যক্তিগত পরাজয়- বলতে পারেন তার জার্মান ফোলা গালে আমাদের বিজয়টা ছিল একটা পরিষ্কার উচ্চ শব্দের বাংলা থাপ্পড়। আমাদের প্রতি তার বিদ্বেষ ছিল। পৃথিবীব্যাপীই মানুষের মুক্তির সংগ্রামে ও সমাজতন্ত্রের লড়াইয়ে কিসিঞ্জার ছিলেন চেনা দুশমন। আমিও তাকে সেইভাবেই দেখি। 
সবকিছুর পরেও বলতেই হয়, এই লোকটা যে কাল মরে গেল, এই মৃত্যুতে পৃথিবীব্যাপী একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে। শত্রু বলেন বা মিত্র, পৃথিবীর ইতিহাসের গতি পরিবর্তনে একজন ব্যক্তির ভূমিকা যে কতোটা ব্যাপক হতে পারে সেটার উদাহরণ হতে পারে হেনরি কিসিঞ্জার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়