শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:৫৬ রাত
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পিয়া চক্রবর্তীর নিজের পরিচয়ের চেয়ে তাঁর প্রাক্তন বিবাহের পরিচয়কে কেন অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে?

ইমতিয়াজ মাহমুদ

ইমতিয়াজ মাহমুদ: [১] পিয়া চক্রবর্তী বিবাহ করেছেন পরমব্রতকে, এই খবরটা দিতে গিয়ে প্রায় সকলেই পিয়া চক্রবর্তীর নিজের পরিচয়ের চেয়ে তাঁর প্রাক্তন বিবাহের পরিচয়কে কেন অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে? লক্ষ্য করবেন শুধু যে ব্যক্তিগতভাবে লোকে ফেসবুকে আলোচনায় এই প্রবণতা দেখাচ্ছে তা তো নয়, দায়িত্বশীল খবরের কাগজ বা অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোও এই প্রবণতা থেকে বাইরে নয়। দুয়েকটা ব্যতিক্রম হয়তো থাকতে পারে, আমার চোখে পড়েনি। আপনি কি ভেবেছেন মানুষের এরকম আচরণের কারণ কী? এটা কি কেবল কিছু ব্যক্তির চিন্তার দীনতা বা মানসিক হীনতা? 

না, এই জুটির বিবাহ নিয়ে মানুষের যত আচরণ দেখেছেন, হোক সে সংবাদপত্রের শিরোনাম বা ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট, এইগুলো সবই হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন মাত্র। অন্য ভাষায়, নারী পুরুষের সম্পর্ক এবং পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ নারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে লৈঙ্গিক রাজনৈতিক দর্শন যেটা, সেই দর্শনের প্রতিফলনই হচ্ছে এটা, যে পিয়া চক্রবর্তীর পূর্বতন স্বামীর পরিচয় পিয়ার বিবাহের খবরে মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হয়ে গেছে। 

[২] পিতৃতন্ত্রের অর্থ কি আর পিতৃতন্ত্রে নারীর অবস্থান কী? পিতৃতন্ত্র হচ্ছে সেই সামাজিক বিধান যেখানে পুরুষকে ধরে নেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে আর নারীকে ধরা হয় খানিকটা কম মানুষ হিসাবে যার মালিক প্রতিপালক ও শাসক হয় পুরুষ। একদম দিন তারিখ বছর হিসাবে করে পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব কবে থেকে হয়েছে সেটা বলে দেওয়া কঠিন, আর সব সমাজে পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব সম্ভবত একই সময়ে হয়নি। পিতৃতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে উদ্বৃত্ত সম্পদ, উৎপাদন যন্ত্র ও সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা এবং রাষ্ট্র (অথবা রাষ্ট্র ধরনের সামাজিক কাঠামো) এবং পরিবারের সৃষ্টির সাথে সাথে। ধরে নাওয়া যায় যে শিকার ও সংগ্রহ ভিত্তিক সমাজ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজের উত্তরণের সাথে এই সামাজিক পরিবর্তন সম্পৃক্ত। 

প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদন যন্ত্রের ধরন খুবই সরল ধরনের ছিল কৃষিকাজে ব্যবহৃত পাথর বা ধাতুর স্থূল ধরনের যন্ত্র ও গৃহপালিত পশু ইত্যাদি। পশুকে পোষ মানানো এবং আদিম সেইসব হাতিয়ার আবিষ্কারের ফলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য ইত্যাদি মিলে যাওয়ার ফলে জীবন সহজ হয় বটে, সেই সাথে জমি, গৃহপালিত পশু ও উদ্বৃত্তের মালিকানার প্রশ্নটাও চলে আসে। সেইখানে নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের প্রথম বিজয়টা অর্জিত হয়, নারীর উপর পুরুষের মালিকানাটাও জরুরি হয়ে পড়ে পুরুষ উত্তরাধিকারী নির্ধারণের নিমিত্তে। 

[৩] পিতৃতন্ত্রেরই একটা অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে পড়ে নারীর শরীরের উপর পুরুষের সার্বভৌমত্বের। সেইটারই প্রকাশ হয় এভাবে যে জন্ম থেকেই নারীর পরিচয় হয়ে যায় কারো কন্যা, কারো ভগিনী, কারো স্ত্রী এবং কারো মা হিসাবে। নিয়মটা হয়ে যে পিতা কন্যাকে লালন পালন করবে, সন্তান জন্মদানে সক্ষম হবার পর কন্যাকে পিতা দান করবে অপর পুরুষের কাছে, সেই পুরুষটি হবে নারীটির স্বামী বা প্রভু বা মালিক। এই নারীটি যখন বুড়ো হবে তখন সে হবে তার পুত্রের আশ্রিত। নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে যত নিয়ম প্রাচীনকালে ছিল এবং এখনো যেগুলোকে পবত্র বা অলংঘনীয় মনে করা হয় সবগুলোই দেখবেন এই ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। 

সতীত্ব, নারীর একগামিতা বা স্বামী পরিত্যাক্তা হওয়া বা এসব যতপ্রকার ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে সবকিছুরই ভিত্তি হচ্ছে নারীর শরীরের উপর পুরুষের সার্বভৌমত্বের প্রতিফলন মাত্র। এ কারণেই একজন পিয়া চক্রবর্তীর পরিচয় তার প্রথম স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পরেও সেই ব্যক্তির সাথে জুড়ে থাকে। এমনকি স্বামীর যদি মৃত্যুও হয় তখনো নারীটির পরিচয় হয় অমুকের বিধবা হিসাবে অথবা, শুনতে খারাপ শুনায়, অমুকের ব্যবহৃত বস্তু হিসাবে। আপনাদের মনে আছে কিনা জানি না, বাংলাদেশে একজন অতি লোকপ্রিয় ওয়াজী মৌলানাও একবার প্রফেটের প্রথমা স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে বলেছিল, তিনি ছিলেন সেকেন্ড হ্যান্ড বা সেরকম কিছু। 

[৪] যেখানে মুসলিম মৌলানা প্রফেটের স্ত্রীর প্রসঙ্গে এই বর্ণনা ব্যবহার করতে পারে, সেখানে পিয়া চক্রবর্তী তো কিছুই না। আর এটা যেকোনো বিশেষ ধর্মের বিধান বা প্রবণতা সেটা কিন্তু নয়- এটা হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক বিধান, প্রায় সকল ধর্মই এসব বিধানের পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং এইগুলোকে ঐশ্বরিক বিধান হিসাবে প্রচার করে। তাইলে পিতৃতান্ত্রিক এই দৃষ্টিতে পিয়া ও পরমের বিবাহকে কীভাবে দেখা হবে সেটা কি অধিক ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে? এইটাকে দেখা হবে হয় অনুপমের মালিকানার নারীটিকে প্রমব্রত নিয়ে গেছে, অথবা অনুপমের ব্যবহৃত পুরনো মাল গেছে প্রমব্রত, বা পরমব্রত একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বৌ পেয়েছে ইত্যাদি রূপে। এইটারই প্রতিফলন আপনি দেখতে পেয়েছেন অনলাইনে সর্বত্র। হোক সে খবরের কাগজ, নিউজ পোর্টাল বা সাধারণ কোন মানুষের ফেসবুক পোস্ট। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুকে ২৯-১১-২৩ প্রকাশিত হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়