আজিজুর রহমান আসাদ: ১৯১৭ সালে নভেম্বর বিপ্লব বা প্রথম ‘সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’ সম্ভব হয়েছিল মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন-সহ অনেক মানুষের ৩ (তিন) ধরনের জ্ঞান চর্চার ফলে। একধরনের জ্ঞানচর্চা ছিল, সমাজ ও জীবন বাস্তবতা নিয়ে, যার দার্শনিক নাম Ontological প্রশ্ন মীমাংসা, গবেষণা, অন্য কথায় আর্থসামাজিক প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ, সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই জ্ঞান আসে দর্শন (দ্বন্দ্ববাদ) ও সমাজবিজ্ঞান থেকে। যেমন, লেনিন লিখেছেন ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’, অর্থনীতির দ্বন্দ্বের ইতিহাস বিশ্লেষণ।
বিপ্লবী তত্ত্বের দ্বিতীয় উৎস ‘মতাদর্শ’। কিছু মূল্যবোধে বিশ্বাস বা আস্থা, যা সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর। যেমন সাম্য, স্বাধীনতা, সহভাগিতা, সহযোগিতা, যত্নশীলতা ইত্যাদি মূল্যবোধ। এটি আসে, কল্পনা, ইমাজিনেশন, ভিশন, বা রূপকল্প থেকে। আগামী সমাজের রূপরেখা, যে সমাজে এই মূল্যবোধগুলো চর্চার বাস্তবতা থাকবে। কাজটি তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নয়, কাজটি ভবিষ্যৎ সমাজের রূপকল্প নিয়ে, যা দাবি করে ‘সৃজনশীলতা’। কল্পনায় আগামী সমাজের ছবি আঁকা, নতুন নামে তা চিত্রিত করা। যেমন, ইউরোপীয় সাম্যবাদীদের রূপকল্প ছিল, ‘সমাজ গণতন্ত্র’, চিনাদের ‘নয়া গণতন্ত্র’। অন্য কথায় ‘সমাজতন্ত্র’।
বিপ্লবী তত্ত্বের তৃতীয় উৎস আসে কর্মকৌশল বা স্ট্র্যাটেজি, সংগঠন বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান থেকে। কীভাবে ভিশন বা রূপকল্প বাস্তবে রূপায়িত হবে? কীভাবে ভবিষ্যৎ অর্জন করা হবে? এই প্রশ্নের সমাধান। এই সব জ্ঞানের নির্মাণ না হলে, বিপ্লবী তত্ত্ব অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিপ্লবের জন্য প্রথম শর্ত, বিপ্লবী তত্ত্ব নির্মাণ। তা না হলে বাস্তব রাজনৈতিক সমাবেশিকরণ হয়ে যায় একটি অন্ধ ও বন্ধ্যা রাজনীতি চর্চা, বিপ্লবী অনুশীলনের নামে, যা পথ হারায় শাসকশ্রেণির রেজিমচেঞ্জের রাজনীতির চোরাগলিতে। লেখক : গবেষক