শিরোনাম
◈ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৭২, খাদ্যের জন্য অপেক্ষমাণ ত্রাণপ্রার্থীরাও রক্ষা পাননি ◈ সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের! (ভিডিও) ◈ বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টায় ইসলামী দলগুলো, প্রাথমিক আলোচনা চলছে ◈ নবীগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সেনা-পুলিশ-র‌্যাবের যৌথ অভিযান, আটক ১৩ ◈ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে তরুণীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নেপথ্যে কি? ◈ সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আহত ৫ ◈ বাহরাইনকে ৭-০ গো‌লে হা‌রি‌য়ে এশিয়ান কাপের বাছাই শুরু বাংলাদেশ নারী দ‌লের ◈ বিমানবন্দরে ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ ◈ এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউনসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার ◈ প্রবাসী আয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ: এক বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:৫৪ রাত
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২৩, ০১:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আফ্রিকা অন্ধকার মহাদেশ, তাহলে আলোকিত কে?

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: আফ্রিকাকে যে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়, এর পেছনে কারণ কী? সেখানকার মানুষগুলো দেখতে কালো? নাকি তারা বর্বর? কিন্তু ইতিহাস বলে বেলজিয়ামের লিওপোল্ড এক কংগোতেই যতো মানুষকে হত্যা করেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও এতো মানুষ মরেনি। তাহলে কারা বর্বর হলো? সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং তথ্য এই, বেলজিয়ান সম্রাট কিন্তু কাজটা সপ্তদশ শতাব্দীতে করেননি, করেছেন যখন পৃথিবীতে রেডিও আবিষ্কার হয়ে গেছে, টিভি আবিষ্কার হয়ে গেছে, রকেট আবিষ্কার হয়ে গেছে। এমনকি মানুষ চাঁদে যাওয়ার ১০ বছর আগ পর্যন্ত কুকুর বিড়ালের মতো মানুষ মেরেছে আফ্রিকায়। শুধু বেলজিয়াম বলে নয়, ফ্রান্স আলজেরিয়ায় যে ম্যাসাকার করেছে সেই ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে? 

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশদের তৈরি এপারথাইট স্টেটের কথা বাদই দিলাম। কারণ যেকোনো কারণেই হোক সেই সব তথ্য অনেকেই মোটামুটি জানেন। কিন্তু এই যে নাইজারে এখনো বিদ্রোহ হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থান হচ্ছে, এর পেছনেও সেই কলোনিয়াল ফ্রান্স। কী সুন্দর নানা এথনিক গ্রুপের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়ে তারপর তারা আবার ত্রাতার ভূমিকায় যায়, মীমাংসা করতে। কিন্তু আফ্রিকার তথাকথিত বন্য মানুষগুলো ইউরোপিয়ানরা যাওয়ার আগে বনে জঙ্গলে পশুর সঙ্গে মিলে মিশে থাকতো তাতে সমস্যা কী ছিলো? মাসাইরা গরু পালতো, যৌতুক হিসাবে গরু দিতো বিয়েতে তাতে সমস্যা কী? তাকে সভ্যতা শেখাতে গিয়ে তাঞ্জানিয়ায় কি শান্তি এসেছে? সভ্য ইউরোপীয়ানদের ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেডের ইতিহাসে একটু চোখ বুলিয়ে দেখেন। আজকের ঘানা, মোজাম্বিক, জায়ার, বেনিন-সহ পশ্চিম আফ্রিকার মানুষদের চিড়িয়াখানায় যেভাবে পশুদের আটকে রাখে এইভাবে খাঁচায় বন্দী করে আমেরিকায় নিয়ে আসতো। ব্রাজিলে নিয়ে আসতো। এই যে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের চেহারা আফ্রিকার অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে এটাও হয়তো তার পূর্বপুরুষদের কাউকে আফ্রিকা থেকে শেকড় দিয়ে বেধে দাস হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছিলো। আমেরিকার রাজধানী যে ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে লাগোয়া মেরিল্যান্ডে ছিলো আমেরিকার বৃহত্তম দাস কেনাবেচার হাট। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি (আইভী লীগ) কয়েকবছর আগে স্বীকার করেছে তাদের ক্যাম্পাস তৈরিতে অনেক কালো দাসকে ব্যবহার করা হয়েছে তখন অনেকে অমানুষিক পরিশ্রম করে মারাও গেছে। তাদের স্মরণে এখন একটা মনুমেন্ট তারা বানিয়েছে (যেকেউ রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইনিভার্সিটির সুন্দর ক্যাম্পাসের মিউজিয়ামের সামনে গেলেই সেই মনুমেন্ট ও তাদের স্বীকারোক্তির নোটটা পড়তে পারবেন।) 

আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে দাস বাজার ছিলো। রোড আইল্যান্ডে ছিলো। নিউইয়র্কে ছিলো। জর্জিয়াতে ছিলো। ক্যারোলাইনায় ছিলো। পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এই যে কালো মানুষ এগুলো সব দাসদের বংশধর। এদের আফ্রিকা থেকে ধরে এনেছে সভ্য ইউরোপিয়ানরা আখ চাষ করতে। জর্জিয়ায় তুলা চাষ করতে, মিসিসিপির নদীর অববাহিকায় তুলা চাষ করতে, তামাক চাষ করতে। বিখ্যাত নৃ-বিজ্ঞানী, সিডনী মিন্টজের ‘ঝবিবঃহবংং ধহফ চড়বিৎ’ নামে একটা বই আছে। পড়ে দেখতে পারেন। কীভাবে ক্যারিবিয়ানে আখ চাষ করে বিশ্ব বাণিজ্য ও ক্ষমতার এক নতুন ধরনের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেছে সাদা ইউরোপিয়ানরা এবং সেই ক্ষমতার পেছনে কীভাবে আফ্রিকা থেকে ধরে আনা দাসদের ব্যবহার করেছে সেই ইতিহাস পাবেন। যারা মুভী দেখতে ভালোবাসেন তারা একদম সাম্প্রতিক টরেন্টিনোর ক্লাসিক ‘উলধহমড় টহপযরধহবফ’ দেখতে পারেন (নেটফ্লিক্সে পাবেন)। এটা দাস ব্যবসার ইতিহাস নিয়ে নয়, বরং ওয়েস্টার্ন জনরার কিন্তু আপনাকে কালো দাসদের মুক্তির যে আকুলতা সেটা বুঝতে সহায়তা করবে।

আচ্ছা, দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ করলো ইউরোপ আর তারা সভ্য বাকি সব অসভ্য? সব বাদ দিলাম, শুধু নেপোলিয়ন একাই মিশরে যে লুটতরাজ চালিয়েছে তারপর তাকে আধুনিক ইউরোপের জনক ভাবা (অন্তত ফরাসি বিপ্লবের পরে ইউরোপে ভূমি ও মানবাধিকার আইন সংস্কারে এবং  রাষ্ট্র ও ধর্মের ক্ষমতা পৃথকীকরণে নেপোলিয়নের পদক্ষেপের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে আজকের ইউরোপ) আসলেই যে ইউরোপের সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স- এভাবেও বলাটা দোষের কিছু নয়। ছোটবেলায় বইতে পড়তাম নেপোলিয়নের নামে একটা বাণী, ‘আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটা শিক্ষিত জাতি দেবো’। পরে ইতিহাস পড়ে দেখলাম, নেপোলিয়ন মিশরে গর্ভবতী কতো মাকে পেটে লাথি দিয়ে মেরেছেন। কতো শিশু হত্যা করেছেন। আর তার ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন নারী নিপীড়ক (যে কেউ ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে তার পারসোনাল লাইফ পড়ে নিতে পারেন)। কিন্তু এই বাণী দিয়ে আমাদের সামনে নেপোলিয়নকে মহান করে দেখানোর যে বীজ বপন করে দেওয়া হয়েছে, এটা ও কি একধরনের কলোনিয়াল প্রজেক্ট নয়? নেপোলিয়ানিক ওয়ারগুলোর ইতিহাস এখন চাইলেই পড়ে নিতে পারেন, আমি এই লেখায় এনে আর দীর্ঘায়িত করলাম না। একটা কৌতুক আছে এইরকমÑ পিরামিডগুলো মিশরে কেন? কারণ এগুলো এতবড় যে ল্যুভ মিউজিয়ামে জায়গা হয়নি, তাই মিশরে থেকে গেছে। আফ্রিকা অন্ধকার মহাদেশ, তাহলে আলোকিত কে? ইউরোপ? পৃথিবী দখল করে মানুষকে মেরে, লুট করে তাকে নিজের মতবাদকে গিলতে বাধ্য করা যদি আলো হয় তাহলে ইউরোপ আলোকিত মহাদেশ আর বাকি পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন, এটা মিথ্যা নয়। লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেইন, যুক্তরাষ্ট্র

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়