ইমতিয়াজ মাহমুদ: নারীকে কি সবসময়ই মাথায় একটা ন্যাকড়া পেঁচিয়ে রাখতে হবে? চোখের জায়গায় দুইটা ফুটাওয়ালা কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হবে? এই সিদ্ধান্তটা কে নেবে? এই সিদ্ধান্তটাও কি নারী নিজে গ্রহণ করতে পারবে না? যে মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইতিহাস বা সাহিত্য বা নৃতত্ত্ব যাই পড়ুকÑ সে মাথায় ওই জিনিস প্যাচাবে কি প্যাচাবে না সেইটা ব্যাটাছেলেরা নির্ধারণ করে দেবে? ব্যাটাছেলেরা নির্ধারণ করে দেবে আর নারীদের সেটা বিনা বাক্যব্যায়ে মেনে চলতে হবে? একজন নারী যিনি চাকরি করেনÑ ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, চিকিৎসক বা সরকারি কর্মকর্তাÑ ওদেরও কোনো অধিকার থাকবে না নিজের বস্ত্রের ধরন রঙ বা পরিধি নির্ধারণ করার? নারী তো জীবনের নানা পর্যায়ে নিজের জন্যে বা নিজের কর্মক্ষেত্রে বা ওদের সন্তানের হয়ে নানা রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নিজের পোশাকের ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা ব্যাটাছেলেরা কেন নেবে?
ইচ্ছার কথা হচ্ছে না। কেউ চাইলে মাথায় ওই সব পরতে পারেন, যার যেটা ইচ্ছা। যারা বলেন যে হিজাব আমার অধিকার সেটা নিয়েও আমি আপত্তির কোনো কারণ দেখি না। শুধু হিজাব কেন, শাড়ি, সালওয়ার-কামিজ, প্যান্ট-শার্ট, বোরকা, হাফপ্যান্ট বা বিকিনি সবকিছুই নারীর অধিকার। যা ইচ্ছা তাই পরবে। কিন্তু আপনারা ব্যাটাছেলেরা যখন নারীর পোশাক নিয়ে নানাপ্রকার কটু কথা বলতে থাকেন তখন তো আপনি নারীর অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন। বিশেষ করে যেসব লোক নারীদের ওড়না না পরা বা প্যান্ট শার্ট পরা বা স্কার্ট ইত্যাদি পরা নিয়ে কটু কথা বলেন, তখন তো আপনি নারীর অধিকারকেই অস্বীকার করছেন।
অধিকার কথাটার অর্থ জানেন? অধিকার আর বাধ্যবাধকতা এক নয়। এই যে অস্নগবিধান অনুযায়ী আমার ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার আছে। একদম মৌলিক অধিকার হিসাবেই লিপিবদ্ধ আছে। এর মানে কিন্তু এই না যে আমাকে বাণিজ্য করতেই হবে। এর অর্থ হচ্ছে আমি চাইলে বাণিজ্য করতে পারি, কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না এবং আমি চাইলে বাণিজ্য নাও করতে পারি, কেউ আমাকে বাধ্য করতে পারবে না। একই কথা সকল অধিকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যখন বলেন হিজাব নারীর অধিকার, আমি সঙ্গে সঙ্গে আসমানে বাহু ছুড়ে দিয়ে আপনার সঙ্গে কণ্ঠ মেলাইÑ হ্যাঁ, হিজাব নারীর অধিকার, বাধ্যবাধকতা নয়।
আমি যখন দেখি যে আপনারা ফতওয়া দিয়ে, বাসে ট্রেনে হামলা করে, রাস্তাঘাটে হয়রানি করে নারীদের পোশাকের একটা বিশেষ ধরন কায়েম করতে চান এইগুলো অন্যায়ের চয়েও মন্দÑ অপরাধ। স্রেফ গুন্ডামি ছাড়া আর কিছু নয় এবং যেসব লোক একই রকম কথা প্রেসক্লাবের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে মাইক ইত্যাদি লাগিয়ে সেমিনার বা অইরিকম কোনো সভ্য উপায়ে বক্তৃতা দিয়ে বলেন, আপনারাও ওই একই কাজই করছেন, স্রেফ গুন্ডামি। না, পোশাক ফ্যাশন স্টাইল ইত্যাদি নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু সেই আলোচনা করবেন ওরাই, যারা পোশাকটা পড়বেন। একদল ব্যাটা এক জায়গায় বসে মিহি গলায় বলতে থাকবেন নারীকে হিজাব পরতেই হবে, হিজাব অতি উত্তম বা হিজাব এটা হিজাব সেটা এরা তস্কর। আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাইলে আমি সেইরকম সভায় গিয়ে এসব ব্যাটাদের মাথায় মুখে ওই সব ন্যাকড়া বেঁধে দিয়ে আসতাম। তোর পছন্দের পোশাক তুই পর আর অন্যকে ওদের নিজের পছন্দের পোশাক পরতে দে। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে