ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] আমাদেরসময়.কম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকা বা পশ্চিমাদের তৎপরতা। রাজনীতিতে অস্থিরতা। কোন দিকে বাংলাদেশ?
শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : বিদেশি শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডেকে আনার কাজ আওয়ামী লীগ করেছে প্রথমে, এখন বিএনপি করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুটি দলই বিদেশিদের কর্তৃত্ব করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। যদি কোনো অভিযোগ করতেই হয়, তাহলে জনগণের কাছে করতে হবে। জনমত গঠনের চেষ্টা করবে- সংবিধান ও আইন অনুযায়ী। কিন্তু সেটা না করে বিদেশি দূতাবাস বা ফরেন এজেন্সির তৎপরতা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কিছু বলছেন না। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। এই সময়ে বিএনপি আমেরিকা থেকে শুরু করে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে তদ্বির করছে। দৌড়াদৌড়ি করছে। আমাদের সংবাদপত্র, পলিটিক্যাল পার্টির কোনো নেতা অথবা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় কোনো বুদ্ধিজীবী কি বিদেশিদের কাছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়াদৌড়ির বিষয়ে কিছু লিখেছেন? প্রতিবাদ করেছেন? একটু-আধটু লিখে থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। এ ধরনের কাজ যখন রাজনৈতিক দল করে তখন ধারাবাহিকভাবে এর প্রতিবাদ করতে হয়। তাহলে দেশের রাজনীতি সুস্থতার দিকে গেলেও যেতে পারে। রাজনীতি সুস্থতার দিকে নিতে হলে উন্নত চরিত্রের রাজনৈতিক দল দরকার। যে ধরনের রাজনৈতিক দল এখন আছে, তাদের দিয়ে রাজনীতি উন্নতির দিকে যাবে না। এজন্য উন্নত চরিত্রের নতুন রাজনীতি দরকার।
[৩] বাংলাদেশে আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বের এখনকার তৎপরতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমেরিকা আসলে কী চাইছে? কেন তাদের এই অতি তৎপরতা? ক্ষমতার পরিবর্তন, নাকি অন্য কোনো কিছু?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : ক্ষমতার বদলই হবে। কারণ এখন তো আগের মতো কোনো দেশ অন্য দেশকে দখল করতে পারে না। দখল করা যায়ও না। চাপে কিংবা বৃহৎ শক্তিগুলো বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে রাখে। যাতে কোনো দিক দিয়ে ডেভেলপ না হয়, সেই চেষ্টা করে। আগে যুদ্ধ জয় করে একটা কলোনি করে রাখতো। এরপর বিশ^ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে ঋণের শর্ত অনুযায়ী চাপে রাখতো। এখন কোনো বড় রাষ্ট্র, সে যতো বড়ই হোকÑঅন্য রাষ্ট্র দখল করে নেবে না। কারণ কোনো রাষ্ট্রকে দখল করলে অন্য ধরনের এক বাস্তবতা তৈরি হয়। দখলকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এখন কোনো বৃহৎ শক্তি অন্য একটি রাষ্ট্রকে দখল করে না। কিন্তু দেশের বুদ্ধিজীবীদের উচিত আমেরিকা বা পশ্চিমাদের তৎপরতা নিয়ে লেখা। যারা স্বাধীনচেতা সাংবাদিক, তাদেরও উচিত এ সম্পর্কে লেখা। এটা শুধু নানাভাবে প্রচার করলে হবে না, পুস্তিকা বা পত্রিকায় বিবৃতি আকারে ক্রমাগত প্রতিবাদ করে যাওয়া, যা পাকিস্তান আমলে দেশে ছিলো।
[৪] তাহলে কি বাংলাদেশের এখন যে উন্নয়ন, অগ্রগতি, এগিয়ে যাওয়া-তা দাবিয়ে রাখার উদ্দেশেই আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশে^র এখনকার তৎপরতা? কিংবা শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিতে না পারা, পক্ষে না নিতে পারার কারণেই কি আমেরিকা কার্যত বর্তমান সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : বর্তমান সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তবে দেশে অনেক ভালো কাজ এর আগেও হয়েছে, হয়তো এখনকার চেয়ে কম। বিএনপি, জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখনো ডেভেলপমেন্টের অ্যাক্টিভিটিজ হয়েছে। এরশাদের আমলে অনেক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে এসে কমে গেছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করার যোগ্যতা আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে। তারা টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা কিংবা বিদেশি মিডিয়ায় তাদের সময়ে করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খবর প্রচার করছে। এই একই কাজ জিয়াউর রহমান, এরশাদ কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার আমলে তারা করতে পারেননি। এই বোধ-বুদ্ধিও হয়তো তাদের ছিলো না। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় বিরোধী দলগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা আছে। শতশত মামলা। মামলা-মোকদ্দমায় অনেকেই বিপর্যস্ত। এসব কারণে বিদেশিরা এখানে তৎপরতা দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের এতোটা ক্ষমতা নেই যে, বিদেশিদের এই তৎপরতা বন্ধ করতে পারে।
[৫] দাবি যখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিরোধী দলের একদফা দাবিÑসরকারের পদত্যাগ। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে আগেও আমি বিরূপ মতপ্রকাশ করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অকর্মণ্যতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় চরিত্র উন্নত করতে হবে। একইসঙ্গে ক্ষমতায় গেলে তারা ভালো কাজ করবেনÑ এই ধারণা জনমনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় গেলে চাপে থাকতে হয়। সরকার ভালো কিছু করার সুযোগ পায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু এখন আমেরিকা বা পশ্চিমাদের হাতে চলে গেছে গেছে। তারা যদি শেষ পর্যন্ত মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাহলে দেখা যাবে কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে!
[৬] তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু এখন আমেরিকা-ইউরোপের হাতে চলে গেছে, বলছেন। কেন এমনটি মনে হয় আপনার? তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে কি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করেন আপনি?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশের রাজনীতিকে উন্নত বা নির্বাচন ভালোভাবে করবেন-এটা কোনো ভালো ধারণা নয়। রাজনীতি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কাজ। রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। দেশের ভেতরের নানা শক্তি আছে, তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিতে পারে। ভালো বুদ্ধি-পরামর্শ দেওয়ার মতো বুদ্ধিজীবী কিংবা সাংবাদিক এখন আমি খুঁজে পাই না। এক-দু’জন আছেন, যারা সবসময় প্রতিবাদী কথা বলেন। একটু বাহবা বা পুরস্কার পান। কিন্তু তাদের মধ্যেও এমন কোনো চিন্তা নেই যে, দেশের রাজনীতিকে উন্নত করার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
[৭] দেশের বুদ্ধিজীবীরা কি তবে আত্মকেন্দ্রিক? নিজেদের স্বার্থটাকেই প্রাধান্য দিয়ে চলেন বলেই দেশের প্রয়োজনে কথা বলেন কম-ব্যাপারটি কি এরকম? তাহলে কি পশ্চিমাদের অর্থের ফাঁদে পড়েছেন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : এনজিওদের যারা ফাইন্যান্স করেন, তারা সিভিল সোসাইটির অর্গানাইজেশনগুলোকেও ফাইন্যান্স করেন। টাকা দেয়। যখন বুদ্ধিজীবীরা ব্যাপকভাবে ওই সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের সদস্য বা উপদেষ্টা হয়ে যান, তখন তাদের মধ্যে নৈতিক শক্তি থাকে না। টাকার প্রয়োজনে তারা আত্মসর্মপন করে থাকেন। পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলো এ দেশে এই বাস্তবতাই তৈরি করেছে। তাদের ফাঁদে পড়ে গেছেন আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা।
[৮] আওয়ামী লীগ যদি ঘটনাক্রমে রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকে, তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি খারাপ হবে এখনকার চেয়ে? এমন আশঙ্কার সঙ্গে আপনি কি একমত?
অধ্যাপক আবুল কাসে ফজলুল হক : বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ ভালো চলবেÑএমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই ১৫ বছরের শাসনামলে বহু যোগ্য লোক নানা ভাবে অবহেলিত হয়েছেন। ক্ষতি ও বিচলিত হচ্ছেন। তারা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। এ ধরনের মানুষেরা চাইছেন, সরকার পরিবর্তন হোক। আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিগুলো অ্যাক্টিভ হবে সামনের দিনগুলোতে। যেভাবে আগে বিরোধী দলগুলোকে দমন করে রাখতে পেরেছিলো আওয়ামী লীগ সরকার, আগের পদ্ধতিতে তা করতে পারবে না। পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোও অনেক বেশি অ্যাক্টিভ থাকবে। বাংলাদেশের জিওপলিটিক্যাল বাস্তবতা ও অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতেই আমেরিকা ও চীন চায় বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকুক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ লিখিতভাবে সরাসরি চীনের পক্ষে না গেলেও তাদের পক্ষেই আছে। আমেরিকা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, চীনবিরোধী একটা অবস্থানে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসার জন্য। গত ১০ বছর ধরে আমেরিকা আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপ দিচ্ছে, প্রত্যক্ষভাবে। শেখ হাসিনা আমেরিকার পক্ষে যেতে চাইছেন না। এটাকে আমি ভালো মনে করি। আমেরিকার পক্ষে যাওয়া মানেই তো বিশে^ তাদের যতো অপকর্ম আছে, তা সাপোর্ট করা।
[৯] আমেরিকার পক্ষে যাচ্ছেন না শেখ হাসিনাÑএ কারণেই কি দেশটি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী অবস্থান, তৎপরতা কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ^?
আবুল কাসেম ফজলুল হক : হ্যাঁ, সেটাই মূল কারণ। আমেরিকা চাইছে শেখ হাসিনা সরকারকে কিছু চুক্তিতে সই করাতে। ইন্দো-প্যাসিফিকে সদস্য বাড়াতে চায় আমেরিকা। এই সংগঠনটি করাই হয়েছে চীনকে প্রতিহত করার জন্য। চীনের শক্তি যাতে না বাড়ে। ইন্ডিয়ান ওশান, বঙ্গোপসাগর, এদিক দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরÑএই এলাকার রাষ্ট্রগুলোকে আমেরিকা তাদের পক্ষে নিতে চাইছে। কাগজে-কলমে ভারত আমেরিকার সঙ্গেই আছে, কিন্তু বাস্তবে আমেরিকার যেকোনো কাজের প্রস্তাব গ্রহণ করে না। কিন্তু বাংলাদেশ আমেরিকান জোটে যায়নি। কিন্তু আমেরিকা বাধ্য করতে চাইছে। বাংলাদেশ একটা ছোট রাষ্ট্র। কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। ইউরোপের অনেক দেশের জসংখ্যা ১৫-১৬ বা ২০-২৫ লাখ! সেই তুলনায় আমাদের ঢাকা শহরেই তো জনসংখ্যা অনেক বেশি। ২ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে ঢাকায়। জিওপলিটিক্যাল অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে এখানে আমেরিকা খুব দরকার মনে করে। বাংলাদেশকে যদি তারা তাদের পক্ষে নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে দিয়ে মিয়ানমার, চীন, ভিয়েতনামÑএই এলাকাগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের আরও সুযোগ নিতে পারবে। এরকম আশা নানাভাবে প্রকাশ হয়ে যায়।
[১০] দেশে কি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্যতা আওয়ামী লীগের নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্যতা বিএনপিরও নেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি জোটে যেসব দল আছে, তাদেরও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সামর্থ্য নেই। বাম দলগুলোরও সেই যোগ্যতা নেই। ধর্মীয় দলগুলোরও যোগ্যতা নেই একটি ভালো নির্বাচন করার। এটা শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপির ব্যর্থতা নয়। এটা গোটা জাতির ব্যর্থতা। দেশে যে লোকদের সম্মান করা উচিত, তাদের সম্মান করা হয় না। তাদের অসম্মানিত অবস্থায় রাখা হয়। যারা ভালো কাজ করেন তাদের ভুল-ক্রটি খুঁজতে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই! তবে আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
[১১] বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে যাবে-এমন শঙ্কার বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : এই আশঙ্কা আওয়ামী লীগ একভাবে করছে, অন্য দলগুলো ভিন্নভাবে করছে। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি দুর্বল দল সাংগঠনিক দিক থেকে। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ভালো কিছু করবে-এমন কোনো চিন্তাও দলটির মধ্যে নেই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ ভালো চলবেÑএমনটি আমি মনে করি না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও যে, দেশ শান্ত থাকবে- এটাও আমি মনে করি না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো করার জন্য দেশের গণমাধ্যমের অসাধারণ গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে সংবাদপত্রের অসাধারণ ভূমিকা পালন করার জায়গা আছে। তারা ভালো চিন্তা শুরু করলে ৬ মাস বা ১ বছরের মধ্যে ভালো একটি রাজনৈতিক ধারার প্রচলন শুরুর সম্ভাবনা আছে। গণমাধ্যম যদি ক্রমাগত ভালো নির্বাচনের জন্য কথা বলে, লিখে যায়, তাগিদ দেয়, তাহলে পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। জনমত গঠন করলে ভালো কাজ হয়। এরকম কোনো সম্পাদক বা সাংবাদিক কি এখন আছেন? থাকলে সংখ্যায় তা কতোজন?
[১২] কেন আপনি মনে করছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের চেয়ে দেশকে ভালো চালাতে পারবে না?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : বিএনপি অন্তত ১৭ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে আছে। এই ১৭ বছরে বিএনপি কি দেশবাসীর উদ্দেশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য কিংবা কর্মসূচি দিয়েছে? একটু বক্তব্য, একটু বিবৃতি দিলেই তো হয় না। যদি কার্যকর কিছু করার জন্য কোনো বক্তব্য, কর্মসূচি দেওয়া হয়, শেখ সাহেব ৬-দফা দেওয়ার পর যেভাবে প্রচার করেছিলেন, সেভাবেই প্রচার করতে হবে। যদিও শেখ সাবের কাল একরকম ছিলো, এখন অন্য রকম। এই অন্য রকম সময়েও জনগণের কাছে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পৌঁছাতে হবে। যে দল বা নেতা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, জনগণও তাদের আস্থায় নেয়। দেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে ভালোর পরিমাণ বেশি থাকা উচিত, মন্দ কম থাকতে হবে।
[১৩] বাম দলগুলোর অনেক নেতাকর্মীই চাচ্ছেন বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। তাদের এই ডানে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে আপনি কী বলবেন।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : বিএনপি যদি তাদের নিতে চায়, তারা যাবেন। এ ব্যাপারে তো আমাদের আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবো- এতে বিশেষ ভালো ফল হবে না। জনজীবন ও রাষ্ট্র উন্নত করার মতো কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে নিয়ে যদি অগ্রসর হওয়া যায়, তাহলে অনেকটা উন্নতি হবে। প্রস্তুতি না নিয়ে একদল অন্য দলের সঙ্গে গিয়ে কোনো ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারবে না।
[১৪] বাম রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশে অনেকদিন ধরে আছে। তারা অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদের ফলে কখনো কখনো সরকারগুলো অন্যায়-অবিচার কমিয়েছে। এখনো তারা অবিচারের প্রতিবাদই করেন। বামদের আগের মতো শক্তি নেই। তাদের প্রচার-প্রচারণাও অনেক কম। কিন্তু বামপন্থীরা যে এখন উন্নত চিন্তাচেতনা নিয়ে রাজনীতি করছেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রাজনীতি করছেন- এরকম কোনো কার্যকলাপ তারা দেখাননি। এ কারণে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আগেও যেমন মানুষ আস্থা রাখতে পারেনি, এখনো আস্থা রাখে না।
[১৫] অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলাপ-আলোচনা বা সংলাপের কথা কেউ কেউ বলছেন। যদিও সংলাপের অতীত ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। আপনার কি মনে হয়, সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত?
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক : সুষ্ঠু অনুষ্ঠানের জন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে বসা। একটা আলোচনা করে কম্প্রোইজ ফর্মুলা বের করা উচিত। আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের দিক থেকে। প্রধানমন্ত্রী ডাকতে পারেন। রাষ্ট্রপতিও ডাকতে পারেন। জাতি, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খুব কম। কিন্তু বৈঠক ডাকার ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি ডাকলেও তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই ডাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ডাকলেও হবে। হয়তো সবাই আসতে চাইবেন না। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ে সংলাপ শুরু করে দিলে একসময় অন্যরাও হয়তো আসবেন। এই চেষ্টাটা করা উচিত।