শিরোনাম
◈ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: ১ জুলাই থেকে নতুন মহার্ঘ ভাতা কার্যকর, কোন গ্রেডে কত বাড়ছে? ◈ আসিফ-মাহফুজের পদত্যাগের আগে রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা ইশরাকের ◈ জামায়াত আমির ফেসবুক পোস্টে যে বার্তা দিলেন ◈ হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ ◈ রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই ◈ বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাছ রফতানি স্বাভাবিক ◈ ম্যানইউ‌কে কাঁ‌দি‌য়ে ১৭ বছর পর ইউরোপা চ‌্যা‌ম্পিয়ন টটেনহ্যাম ◈ গাজীপুর জেলা বিএনপির সকল ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা ◈ কক্সবাজার সৈকতে প্যারাসেইলিং থেকে ছিটকে পড়লেন স্বামী-স্ত্রী, এরপর যা হল (ভিডিও) ◈ এক রাতে সাত হাজার নিরীহ মানুষ নিধন! পাক সেনাপ্রধান টিক্কা খানকে  বাংলাদেশের কসাই নামে ডাকা হ‌তো

প্রকাশিত : ১৪ জুন, ২০২৩, ০১:১৬ রাত
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৩, ০১:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকা শহরের জন্মকথা ও রাজধানী স্থাপনের কাহিনি

গরীব নেওয়াজ

গরীব নেওয়াজ: বেশ কিছু বছর আগে খুব ঘটা করে ঢাকার চার শ' বছর উদযাপন করা হয়েছিল। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে দুইভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। একটি হচ্ছে, চার শ' বছর আগে ঢাকা বলে কিছু ছিল না, অর্থাৎ এখানে তখন কোনো জনপদ বা শহর গড়ে উঠেনি, চার শ' বছর আগে এর গোড়াপত্তন হয়। অপরটি হচ্ছে, জনপদ বা শহর ঠিকই ছিল, কিন্তু রাজধানী ছিল না, চার শ' বছর আগে ঢাকা আমাদের গর্বের রাজধানীর মর্যাদা পায়।

এসবই হচ্ছে, ইতিহাসের বিষয়ের অন্তর্গত। কবে কখন এখানে জনপদ গড়ে ওঠে, শহর গড়ে  ওঠে, আর কীভাবে রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয় তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা প্রয়োজন। ইতিহাসের বিশ্লেষণই বলে দিবে কোনটা গর্বের, কোনটা কলঙ্কের। প্রথমেই দেখা যাক, ঢাকার জনপদ ও শহর কখন গড়ে ওঠে। ঢাকা ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও ঢাকা নগর জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাষ্টি জনাব হাসেম সূফী যিনি ঢাকার ইতিহাস সন্ধানে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন, তাঁর গবেষণাধর্মী লেখা থেকে দেখা যায় যে, জনপদ হিসেবে ঢাকার গোড়াপত্তন হয় ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে, আর শহর হিসেবে এর গোড়াপত্তন হয় ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে। সমৃদ্ধিশালী জনপদ হিসেবে ঢাকা কলকাতার চেয়ে ৯৪০ বছরের প্রাচীন। বৌদ্ধ আমলে (৭৫০--১০৬৮ খ্রি.) এবং সুলতানি আমলে (১২০১--১৫৭৬ খ্রি.) ঢাকায় মসলিন তৈরি হতো। ঢাকা ছিল মসলিন নামক সূক্ষ্ম বস্ত্রশিল্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল। সুলতানি আমলে মসলিন ছাড়াও ঢাকায় আরও অনেক ধরনের কাপড় উৎপাদিত হতো। যেমন:  সরবতি, মলমল, আলাবালি, তনজবি, তেরিন্দাম, ডুরিয়া, জামদানি, ইত্যাদি। এখান থেকে মসলিন ও অন্যান্য কাপড় বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। ঐতিহাসিক নজির রয়েছে যে, রোমান বাদশাহরা মসলিনের কাপড় ব্যবহার করতেন। সেদিক থেকে ঢাকার জনপদ আরও বহু প্রাচীন সমৃদ্ধিশালী জনপদ। মোঘলদের আগে অর্থাৎ চার শ' বছরেরও আগে সুলতানি আমলেই ঢাকায় তিনটি দুর্গ ছিল। বতর্মান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, মিল ব্যারাক এলাকার একাংশে এবং ফরাসগঞ্জ-মালাকারটোলার কিছু অংশে এ তিনটি দুর্গ অবস্থিত ছিল। ফকরউদ্দিন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮--১৩৫০ খ্রি.) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা থেকে ঢাকার নামকরণ ‘মোবারক নগর’ করেছিলেন। গ্রিক ও রোমান দেশের মিউজিয়ামগুলোতে নিদর্শন রয়েছে যে, সুলতানি আমলে সেসব দেশে ঢাকা থেকে অশ্বরথ ও যুদ্ধ জাহাজ রপ্তানি হতো। ঢাকার উৎকৃষ্ট গজারি কাঠ হতে তৈরি হতো অশ্বরথ। দিল্লির সম্রাট আকবরের (১৫৫৬--১৬০৫ খ্রি.) সময়ে আবুল ফজল রচিত ‘আইন-ই-আকবরী’ এবং আকবরনামাতে ঢাকা জনপদের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। মির্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই গায়েবী’ গ্রন্থতেও ঢাকা জনপদের উল্লেখ রয়েছে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, চার শ' বছর আগে নয়, ঢাকা জনপদের ও শহরের উৎপত্তি আরও-আরও বহু আগে। এবার ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দেখা যাক। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এখানে নন্দ বংশ, মৌর্য বংশ, কাম্ব বংশ ইত্যাদি স্বাধীন রাজবংশ রাজত্ব করেছে।  খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী হতে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত গুপ্ত বংশ, পাল বংশ, সেন বংশ এখানে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। তা ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে বিভিন্ন সময়ে খড়গ বংশ, দেবরাজ বংশ, চন্দ্র বংশ ইত্যাদি রাজবংশের স্বাধীন রাজ্য ছিল।

১২০১ মতান্তরে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়ের পরে সুলতানি যুগ শুরু হয়, যা ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বহাল থাকে। তবে এই সময়ের মধ্যে বাংলা দখল করার জন্য দিল্লি উপর্যুপরি আক্রমণ চালিয়েছে। দিল্লির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় বা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করায় বাংলার অনেক সুলতানকে হত্যা করা হয়। কিন্তু দিল্লি স্থায়ীভাবে বাংলার স্বাধীনতা হরণ করতে পারেনি। এরমধ্যে বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি ইলিয়াস শাহ্ (১৩৪২--১৩৫৮) শুধুমাত্র দিল্লির একাধিক আক্রমণকেই প্রতিহত করেননি, তিনি সমগ্র বাংলাকে একত্রিত করে বৃহত্তর বাংলা সৃষ্টি করেন। যা পূর্বে কখনই ছিল না, জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশ ঘটান এবং স্বাধীনতার ভিত্তি যেভাবে সুদৃঢ় করেন তাতে পরবর্তী দুই শ' বছর দিল্লি আর বাংলাকে পদানত করতে পারেনি। এরপর ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জুলাই সম্রাট আকবরের বাহিনী বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান কররানীকে রাজমহলের (রাজমহল ফারাক্কা বাঁধের অপর পাড়ে) যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করে বাংলা দখল করে নেয়। এবং রাজমহলে রাজধানী স্থাপন করে। রাজমহলের যুদ্ধে জয়লাভ করলেও বহুদিন পর্যন্ত পুরো বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুঘল শাসন উত্তর-পশ্চিম বাংলার শহর ও দুর্গ এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলা নামেমাত্র মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। সুলতান দাউদ খানের অধীনস্থ জমিদার ঈশা খান, প্রতাপাদিত্য, উসমান খান-সহ অন্যান্য জমিদাররা যারা বার ভূইয়া নামে পরিচিত তাঁরা নিজ-নিজ জমিদারিতে স্বাধীনতা অবলম্বন করেন। তাঁরা নিজেদের সৈন্যদল ও শক্তিশালী নৌবহর নিয়ে আকবরের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা  করেছেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ঈশা খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মূসা খান ভাটিরাজ্েযর অধিকারী হন। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ইসলাম খানের সাথে মূসা খানের বহু যুদ্ধ হয়। অবশেষে ১৫ই জুলাই ১৬১০ মতান্তরে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে মূসা খানকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে ইসলাম খান মহাসমারোহে ঢাকায় প্রবেশ করেন। এখানে অবস্থান নিয়েই বিভিন্ন অঞ্চলের সব বিদ্রোহ দমন করে সারা বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাজমহলের পরিবর্তে  ঢাকায় সুবে বাংলার রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম্রাটের নাম অনুসারে এই নগরীর নতুন  নামকরণ করেন ‘জাহাঙ্গীর নগর’। এটাই ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের কাহিনি। জাহাঙ্গীরনগর নামকরণ করে রাজধানী স্থাপন আমাদের জন্য গর্ব করার মতো বা গৌরবের কোনো বিষয় ছিল না। বরঞ্চ এরসঙ্গে রয়েছে, পরাধীনতার গ্লানি, দুই শ' বছরের জন্য দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার গ্লানি। আর তার পথ ধরে আরও দুই শ' বছর অন্েযর পরাধীন থাকতে হয়েছিল। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়