সুমন জাহিদ: আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, সারাজীবন প্রান্তিক কর্মী ছিলাম, এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্টার্ড কর্মী। সুতরং বলতেই পারেন, দলের সব সিদ্ধান্ত আমি দলান্ধের মতো অনুসরণ করি, আমি দ্বিমতও করছি না। কিন্তু দলীয় কর্মী হিসেবে যতোই সীমাবদ্ধতা থাকুক, সাদাকে সাদা বা কালোকে কালো বলার সাহস এখনও হারাইনি। যা বলি দায়িত্ব নিয়েই বলি। মোহাম্মদ এ আরাফাত ভাই মনোনয়ন পাবার পর যারপরনাই আমি খুশি হয়েছি। ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত শুভাকাক্সক্ষীদের একটা অংশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এর প্রধান কারণ তারা সবাই যে বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের বা আওয়ামীবিরোধী তেমনটা বলছি না, আরাফাত ভাইকে নিয়ে তাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই, এই যা।
আরাফাতের একাডেমিক ও প্রফেশনাল ক্যারিয়ার, তার মেধা ও প্রজ্ঞা, যৌক্তিক মননশীলতা, বাগ্মিতা, রুচি ও পরিমিতিবোধ, অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শিতা, সারল্য ও স্মার্টনেস, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার পরিবারের অবদান সর্বোপরি সংগঠনে তার যে নিঃশব্দ ডেডিকেশন, ত্যাগ...সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন ধারণা নেই শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া।
এর পাশাপাশি আজ আরেকটা অত্যুক্তি করি, আজকের আরাফাত একদিনে তৈরি হয়নি, আরাফাত ইজ মেইড বাই শেখ হাসিনা, সিন্স ফরম হিজ স্টুডেন্ট লাইফ। আরাফাত ভাইয়ের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। তার চাচা পাক সেনাদের দ্বারা নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং শহীদ হন।
যারা ছাত্রলীগ করেছে তারা জানে শেখ হাসিনা মেধাবীদের কতোটা পছন্দ করেন। আর রাজনীতি মানে শুধু রাজপথের সংগ্রাম নয়, রাজনীতি মানে শুভ-অশুভ’র দ্বন্দ্ব; একটি রাজনৈতিক মেনিফেস্টো’র/দর্শনের প্রতি আস্থা রেখে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সামগ্রিক মুক্তির লড়াই। যে যার অবস্থান থেকে নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী সাহস, শক্তি, মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে সেই লড়াইটা চালিয়ে যাওয়াটাই মুখ্য। আরাফাতও তার সমগ্র অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য দিয়ে এই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন গত ২০ বছর ধরে, এবং সেটা শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথেই। আরাফাত ভাইয়ের শিক্ষা জীবনের অধিকাংশটাই কেটেছে দেশের বাইরে। অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন দুই বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২টি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
আজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সাথে নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসেই প্রতিষ্ঠা করলেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। ২০০৪ এর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তিনি আর বিদেশে বসে থাকতে পারলেন না। তিনি তার উজ্জ্বলতম ক্যারিয়ার পিছনে ফেলে, পরিবার ও শুভাকাক্সক্ষীদের বারণ সত্বেও শুধুমাত্র শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে পিএইচডি শেষ না করেই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন ২০০৫ সালে।
২০০৫ সাল থেকেই শুরু তার নতুন জীবন। শেখ হাসিনার নির্দেশে নীরবে-নিভৃতে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জরিপ, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে নিয়মিত রিপোর্ট পেশ করতেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে, বিশেষ করে একটি স্মার্ট প্রজন্ম গড়তে নিভৃতে কাজ করে চলছেন আরাফাত।
৭১ ও ৭৫ এর শত্রুরা রাজনীতির প্রকাশ্য মাঠ থেকে বিতারিত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে তারা আসন গেঁড়ে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একই সাথে ওয়ান ইলেভেনের আস্কারায় তথাকথিত সুশীল টকশোজীবীরা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় আওয়ামী বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। এমনতর প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল জগতে অপশক্তি মোকাবেলায় প্রকাশ্যে আসতে বাধ্য হয় আরাফাত। ডিজিটাল দুনিয়ায় গুজবের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসনে গোটা বিশ্ব যখন অসহায় হয়ে পড়েছে, আরব বসন্তের জোশে বাংলাদেশেও তখন একদিকে চলে জঙ্গী হামলা, অন্যদিকে বিএনপি-জামাতের অগ্নি সন্ত্রাস। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রিত হলো, জনগণের প্রতিরোধে আগুন সন্ত্রাস কমে এলো।
বিলিয়ন ডলারের লবিস্ট মানি, বিশ্বমোড়লদের চোখ রাঙানি, কোন কিছুই যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বানচাল করতে পারে নি তখন ২০১৩ সালের ৩ মার্চ দেশব্যাপী সাঈদীকে চাঁদে পাঠানোর গুজব ছড়িয়ে ৭৮ জনকে হত্য করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার সময় থেকে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন একটি ইউনিক কাজ করছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষতঃ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অজস্র মাদ্রাসায় জয় বাংলা স্লোগানে উদ্দীপ্ত করেছে মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা যখন এসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে থাকে, সেই দৃশ্যের মত মনোরম আর কিছু হতে পারে না।
গণজাগরণ আন্দোলনের বিপরীতে মাঠে নামলো হেফাজত। ২০১৩ সালের ৫মে হেফাজতের মতিঝিল আক্রমনের রাতে তৈরি হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গুজব। সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মোমিন হত্যার অভিযোগ প্রচার করা হলো বিশ্বব্যাপি। আরাফাত তখন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়া, মানবাধিকার সংস্থা ও কূটনৈতিক মহলের সামনে নানা প্রমান, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ দিয়ে গুজবের স্বরূপ উন্মোচন করলো। সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে হেফাজতের লম্ফঝম্প নিয়ন্ত্রিত হলো কিন্তু সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বসে নেই। ফেইসবুক গুজব ছড়িয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হলো দেশব্যাপি। এই প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিজম জরুরী হয়ে পরে। আরাফাত ভাই তখন সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত করার প্রচেষ্টা নেয়। গুজবের বিরুদ্ধে লড়াইটা খুবই দুঃসাধ্য কাজ। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে যতটুকু ফাইটব্যাক হচ্ছে, তা যতই অপ্রতুল হোক তার অন্যতম কৃতিত্ব আরাফাতের। মিডিয়ায় আরাফাত আমাদের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছেন, সেটা আমার মত কর্মিদের জন্য অনুসরণীয়। এতটুকু সত্য প্রকাশ বা কৃতজ্ঞতা জানাতে কোন প্রকার দ্বিধা আমার নেই। আমি তার ধী-শক্তি, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা, পরমত সহিষ্ণুতা কাছ থেকে দেখেছি। অনেক জটিল ও অপ্রিয় প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর কেউ কোনদিন আমাকে দেয় নি, প্রতিটি প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর কতটা সরলভাবে দেয়া সম্ভব আরাফাত ভাই তা আমাদের দেখিয়েছেন।
এই রুচির দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে, ঝড়ের রাতের দক্ষ মাঝি হিসেবে আরাফাতের উপরই ভরসা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বিশ্বাস করি ঢাকা ১৭ এর জনগনও সেই ভরসায় আস্থা রাখবেন। রাজনৈতিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় আরাফাত ভাইয়ের মত প্রজ্ঞাবান সাংসদ সত্যি খুব জরুরী। জয় বাংলা। ফেসবুক থেকে