শিরোনাম
◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৩০ মে, ২০২৩, ০১:১৯ রাত
আপডেট : ৩০ মে, ২০২৩, ০১:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাজেটে কোন খাত বেশি গুরুত্ব পেতে পারে?

ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ

ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ: বাজেট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবারের বাজেটটা আসলে তিনটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। একটা আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে। আমরা এখন আইএমএফ-এর সংস্কার শর্তপঝরণ বা পালন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট প্রভাব, দেশে ডলারের সংকট, করোনা উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দ্রব্যমূল্যেও অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, সিন্ডিকেটের প্রাধাণ্য, নির্বাচনী বছর হওয়ায় দুনীতি, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপে অপারগ পরিস্থিতি। নানান কারণে আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যেসব সংকট বা সমস্যাগুলো আছে সেগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলভাবে সেসব কাটিয়ে উঠতে হবে। কারণ আমাদের ২০২৬ সালে আমরা মধ্যমআয়ের দেশ হবার বা উন্নয়নশীল দেশ হবার যে কার্যসূচিতে আছি, সেটা অর্জন করতে হবে এবং আমরা এসডিজি গোল বাস্তবায়নের পথে আছি, ২০৩০ না হলেও হয়তো কিছুটা পেছাবে। কারণ করোনার কারণে ওটা পিছিয়ে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির যেগুলো অভীষ্ঠ তার ভেতর যেগুলো আমাদের অর্থনৈতিক বিষয়ে ব্যবহৃত সেগুলোতে আমাদের অগ্রগতি সাধন করতে হবে। এই দুটো বিষয়ের কারণে ২০২৪-২৫  এর বাজেট এবং আগামী বছর নির্বাচন হওয়ায় ২০২৩-২৪  বাজেটটি  খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

দুই হচ্ছে আমাদের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমাদের রেমিটেন্স কম আসছে। আমাদের আমদানি-রপ্তানি বেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে থাকছে। এসব কারণে আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে আমাদের বাজেটারি এলোকেশনে মেজর কী কন্ট্রোল করা যায়, সেটাই এবারের বাজেটের কাছে প্রত্যাশা বেশি। তৃতীয়ত হলো, মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতিকেই এখন এক নম্বর এজেন্ডা ভাবা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি যদি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ বা প্রশমন করা না যায়, তাহলে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং দ্রব্য মূল্যস্ফীতির ব্যাপারটাকে কর্তৃপক্ষসহ সকলেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।

সম্পদ কমিটির বাজেটের আকার নির্ধারণ করে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সকল বিষয় বা নিউজ মিডিয়ায় এসে যাচ্ছে। তার ভিত্তিতে এই যে যে আলোচনা হচ্ছে এটা ভালো। কারণ খোলামেলা আলোচনার স্কোপগুলো ইদানীংকালে খুব কমে গেছে। আগেকার অর্থমন্ত্রী মহোদয়রা অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একেবারে কিস্তি ধরে ধরে আলোচনা করতেন এবং খুব মুখ্য বা সরাসরি সভায় এসে আলোচনা করতেন। আলোচনা করে তারা নোট নিতেন, আলোচকরাও বুঝতেন যে তাদের কথা শোনা হচ্ছে। তবে বর্তমানে লক্ষণীয় যে অর্থমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ ইদানীং সরাসরি এরকম কোনো প্রকাশ্য আলোচনা করতে পারেননি, গতবারও হয়তো সেভাবে হয়নি। সুতরাং এই দিকটাতেও একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এবং আলোচনার ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বাজেটের কিছু কিছু ট্রিক এবং টিট বিটস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই সময়ে বাজেটের উপর এই আলোচনা কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় থাকবে বাজেট পেশ করলেই তো পাস হবে না, কথা হবে, আলোচনা হবে। তখন এসব আলোচনাগুলো যদি গুরুত্ব পায় তাহলে সেটা ইতিবাচক হবে। কর রাজ্স্ব বাজেট সম্পর্কিত আলোচনায় যেসব বিষয় বেরিয়ে আসছে তাতে আমি মনে করি তিনটি বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। প্রথমত, নিম্নতম করের হার বাড়ানোর দাবিটা বেশ জোরেশোরেই উঠছে এবং এটা হওয়ার পক্ষে যুক্তি ও যৌক্তিকতাও ভালো আছে। 

সুতরাং এই জিনিসটা নীতিনির্ধারক ও বাজেট প্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাজেটের আকার। মানুষকে করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে আইনের যে চাপ, সে চাপ দিলেও হতো না দিলেও হতো, এর আগে থেকেও ছিলো চাপ, আমাদের নিজেদের আন্তঃসমালোচনার মধ্যেও এটা আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মাানুষ  কর দেয় না, যারা ‘টিন’ খুলেছে তাদেরও উল্লেখযোগ্য মানুষ ট্যাক্স দেয় না। এই সমস্যা এড্রেস করার জন্য যে দুই তিনটা উপায়  বেরিয়ে আসছে। যেমন আগে যারা শূন্য কর দিয়ে রিটার্ন সাবমিট করতো, এবার শোনা যাচ্ছে প্রত্যেকেরই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা দিয়ে কর সনদ নিতে হবে এবং সেই সনদ নিয়ে তারা বিভিন্ন সরকারি সেবা নিতে পারবে, যেখানে তাদের ওই সনদ দেখানো দরকার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই ব্যবস্থা নেই। কারণ সেখানে সবকিছুই অনলাইন, কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না, সিস্টেমে গেলে দেখায় যে এই ব্যক্তি ট্যাক্স দেয় কিনা বা কতো দিচ্ছে তার বিস্তারিত । কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেই ডেটাবেজ গড়ে ওঠেনি এবং আমাদের দেশে অনেকেই কর দেয় না। ওই কারণে ধরাধরির জন্যই একটা উপায় হিসাবে গতবার বা তার আগেরবার থেকে ভাবা হয়েছে সরকারি ৩৮টা পণ্য বা সেবা নিতে গেলে আয়কর সনদ দেখাতে হবে। এনবিআর মনে করে এটা করার ফলে তাদের বেশকিছু নতুন করদাতা যুক্ত হয়েছে। কারণ তাদের বিভিন্ন সার্ভিস নিতে গেলে করদাতা সনদ দেখাতে হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও শোনা যাচ্ছে যে এই সনদ নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। তো এজন্য ওই ৩৮টা খাতের সঙ্গে নতুন কিছু খাত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে যেগুলোতে রিটার্ন দেখাতে হবে। 

নতুন করদাতা সৃষ্টির লক্ষেই শূন্য করের পরিবর্তে ২০০০ টাকা দিয়ে রিটার্ন দেওয়ার কথা হয়তো ভাবা হচ্ছে। এখন এখানে পক্ষ-বিপক্ষের বিষয় হচ্ছে এই যে করদাতাকে চাপাচাপি করে করদাতা বানালে সেই করদাতাদের এডমিনিস্ট্রেশন করার সক্ষমতা, লোকবল বা সিস্টেম গড়ে তুলতে এনবিআরের প্রশাসনিক সমস্যার সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতিরই সহজ সমাধান হচ্ছে সব কাজ বাদ দিয়ে যেভাবেই হোক অনলাইনেই কাজটি শেষ করা। সব অনলাইনের মধ্যে আনতে পারলে, এমআইএস ও ডেটাবেজ গড়ে তুলতে পারলে তখন আর এই সমস্যা হবেনা। জনে জনে ফাইল দেখা লাগবে না। তখন এনবিআর তাদের বর্তমান লোকবলকে ইন্টেলেকচুয়াল কাজে লাগাতে পারবে এবং বাড়তি লোকবলও প্রয়োজন হবে না। যাচাই করতে সমস্যা হবে না, কোনো ব্যক্তি করের বাইরেও থাকবে না। আমরা যদি এনআইডি ধরে সার্চ করি তখন ওখানে অটোমেটিক প্রশ্ন আসবে যে আপনার তো করের তথ্য নেই। এটা ম্যান্ডটরি দিতেই হবে, তাহলেই আপনি পরবর্তী কাজ করতে পারবেন। এই সিস্টেমটা বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই আছে। সুতরাং একথা ঠিক নতুন নতুন ভাবনা সমস্যার সৃষ্টি করে, মানুষকে ত্যক্ত-বিরক্ত করে করের আওতায় আনা বা করদাতা বানানোর চেয়ে সহজ সমাধানের পথ হলো অনলাইন ব্যবস্থাগুলোকে জোরদার করা। ভ্যাট অনলাইনে দেওয়ার জন্য যে মেশিনগুলো দরকার, মেশিনগুলো দেওয়ার ব্যপারে শোনা যাচ্ছে প্রাইভেট সেক্টরকে দিয়ে দেবে এই পুরো কাজ। মেশিনও তারা সাপ্লাই দেবে, ভ্যাটও তারা সংগ্রহ করে দেবে। আদায়কৃত ভ্যাট থেকে তারা একটা কমিশন পাবে। এগুলোর জন্য আইনগত অনেক জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে। আশা করা যায় তারা এগুলো দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। ভ্যাট, আয়কর বা শুল্ক আদায়ের জন্য অথরাইজড অফিসার থাকেন, তাদের পাওয়ার থাকে। আয়কর আইনের মধ্যে তাদের জন্য অথরাইজেশন দেওয়া থাকে। এখন বাইরের লোককে এই কাজ দিতে গেলে তার এখতিয়ার, জুরিডিকশান সম্পর্কিত কোনো আইনি জটিলতা যাতে সৃষ্টি না হয় আশা করি সেই বিষয়টি ভেবেই সিদ্ধান্ত নেবে। আরেকটা হচ্ছে যে তারা এগুলো করতে গিয়ে, টাকাপয়সা আদায় করতে গিয়ে তৃতীয়পক্ষকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা আশা করি সেটাও কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

পরিচিতি: সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর। উন্নয়ন-অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক। বিশ্লেষক। অনুলিখন : মুস্তাফিজুর রহমান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়