জিল্লুর রহমান: ‘যাবতীয় পদার্থ আল্লাহ্কর্তৃক সৃষ্ট ও সেসবের কর্মক্ষমতাও স্রষ্টা প্রদত্ত, তাঁর বিনা অনুমোদনে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই জীব জগৎ, উদ্ভিদ জগৎ এবং নূরী ও জড় জগতের গুণ ও কার্যাবলীর মূলে এক আল্লাহ্ ভিন্ন কিছুই নেই। মানুষ ও জীব-জানোয়ারের কর্ম ইন্দ্রিয়সমূহ আল্লাহ্া সৃষ্টি করেছেন এবং সে সকল ইন্দ্রিয়ের কর্মক্ষমতাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও প্রকৃতির সকল কার্যকলাপ আল্লাহ্ প্রদত্ত উপাদান ও তাঁর সৃষ্ট নিয়মানুসারে ঘটে থাকে। সেসব নিয়ম-শৃঙ্খলাকে কার্যকারণ সম্পর্ক বলা হয়। অনেক সময় দৃশ্যমান জগতের সুসংগঠিত কার্যাবলীর কার্যকারণ অদৃশ্য জগৎ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
মানুষ তার নিজের বা সৃষ্ট পদার্থের ক্ষমতা আছে বলে মনে করে, বাস্তবে তা আল্লাহ্ শক্তি। সকল পদার্থসহ মানুষ আল্লাহ ্শক্তি প্রবাহের একটি মধ্যবর্তী অবস্থা। বাতাস প্রবাহিত না হলে যেরূপ বৃক্ষলতার পাতার নড়ার শক্তি নেই, তেমনি আল্লাহ্ ক্ষমতা প্রবাহের কারণেই ইন্দ্রিয়সমূহ নড়াচড়া করে এবং কার্যক্ষম হয়। এসব খোদা প্রদত্ত শক্তি ও উৎপত্তি, বিকাশ ও লয়ের আইনের অধীন। আসলে সাকুল্য কাজের মূলকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ্ ছাড়া কাজ করার পরিবেশ ও আনুকূল্য কেউ সৃষ্টি করতে পারে না।
আল্লাহ্ এ একত্ব, শক্তি ও দয়ার উপর যার দৃঢ় বিশ্বাস আছে, তিনিই কেবল তাঁর উপর পরিপূর্ণ নির্ভর করতে পারেন। আল্লাহ্ কার্য সম্পাদনের কারণ-উপকরণ সৃষ্টি করে দান করেছেন। কার্যকারণ ও উপকরণের উপর নির্ভর না করে এসবের মালিকের ওপর নির্ভর করে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মুতাবিক পার্থিব দুনিয়ার পরিণামের দিকে না তাকিয়ে কাজ করার নাম তাওয়াক্কুল।
-বই: মারিফাত ও দিদার-এ- ইলাহি। লেখক: শায়েখ আলাউদ্দিন খান আল ক্বদমি (র:)’।
সূরা আল-ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এবং কাজে কর্মে তাদের-অর্থাৎ মুসলমানদের-সাথে পরামর্শ করুন। এরপর যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করুন। কেননা আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন’। এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীজীকে বলছেন যে, পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করার পর আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ বাস্তবায়ন করুন। তাওয়াক্কুলের প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে পরিপূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস এবং ভরসা কেবল তার স্রষ্টার ওপরই করা উচিত। এ অবস্থায় পার্থিব জগতের সকল বস্তুরও সহায়তা নেওয়া উচিত। কেননা বস্তুজগতের সকল উপায় উপকরণ আল্লাহর অধীন।
আল্লাহর ওপর ভরসা করার তাৎপর্য সম্পর্কে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মরহুম আল্লামা সাইয়্যেদ হোসাইন তাবাতাবায়ি বলেছেন, ‘মানুষ অনেক সময় তার লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে প্রস্তুতি নেয় এবং প্রয়োজনীয় সকল শক্তি-সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখে। কিন্তু আত্মিক বা মানসিক কিছু বিষয় যেমন ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তাহীনতা, ভয়ভীতি, অভিজ্ঞতার স্বল্পতা,উৎকণ্ঠা ইত্যাদি তার এবং তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। এরকম অবস্থায় মানুষ যদি আল্লাহ সুবহানের ওপরে ভরসা করে তাহলে আর ইচ্ছা এবং সংকল্পগুলো দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার ফলে মানসিক সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা, মানসিক সকল দুর্বলতা কেটে যায় এবং নির্ভরতার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগসূত্র স্থাপিত হবার ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আর কোনো কারণ থাকে না। লেখক: সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক গণকণ্ঠ