শাকিল আহমেদ: ভাতের স্বাধীনতা চাইÑ এই কথাটা তো ঠিকই আছে। তাহলে কারো কারো ভাষায়, ‘চেতনা’ ধারীদের সংকটটা কোথায়? কাল থেকে বহু ধরনের কথা মন্তব্য ব্যক্তি আক্রমন শুনেছি। আমার ধারণাটা কেবল বলি, বরং বলি কোথায় এটি অসাংবাদিকতা এবং স্বাধীনতার মৌল ধারণাকে আঘাত করে। ভাত কিংবা মাছের স্বাধীনতা চাইÑযখন স্বাধীনতা দিবসে বলি বা প্রচার করি তার মানে দাঁড়ায় স্বাধীনতা পেয়ে আমরা ভুল করেছিÑএমনকি ভাত মাছও পাই না। তখন ভুলে যাই ‘ভাত দে হারামজাদার’ দিন আমরা পার করেছি, পার করেছি মঙ্গা। মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়। তার উপর ভুলে যাই, স্বাধীনতা না পেলে আমাদের মসজিদগুলোতে বোমা ফুটত। পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ হয়ে থাকত পূর্ববঙ্গ।
কিন্তু সত্যিই ত ভাত মাছ অনেক গরিব মানুষ এখনও তিনবেলা পায় না। নিত্যপণ্যের দামও নাগালের বাইরে। তাহলে এ স্টোরিতে সমস্যা কী। প্রথমত যারা এ কথা বলেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তারা এটা বলেননি। সেনসিটাইজ করা প্রতিবেদন। মূলত ডেস্ক এন্ডে। দ্বিতীয়ত স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে যদি সত্যিই প্রতিবেদনে এই এঙ্গেল রাখতেই হয়, তাহলে কয়েক অর্থনৈতিক শ্রেণীর কাছে একই প্রশ্ন করতে হবে,সুনির্দিষ্টভাবে কেবল দরিদ্র মানুষ নয়। যদি আবার কেবল দরিদ্র মানুষের কথা তুলে আনতে হয়, তাহলে স্বাধীনতার সময় থেকে এখন পর্যন্ত ভাত এবং মাছের প্রাপ্যতার তুলনামূলক চিত্র প্রতিবেদনে যুক্ত থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সংবাদ কনটেন্টের এখানেই পার্থক্য। এটাই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা।
কিন্তু এতোকিছু আমরা নিজেরা কি মেনে চলতে পারি? না পারি না। তবে স্বাধীনতার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে সেইখানে আমার দুইটা কথা আছে। সাংবাদিক তো বটেই, ব্যক্তি নাগরিক কিংবা সংগঠন হিসেবে স্বাধীনতার মর্যাদা প্রশ্নে আমি ছাড় না দেওয়ার পক্ষে। কারণ আমি জানি, সাংবাদিকের অদায়িত্বশীল লেখা আর গুজব প্রকাশের কারণেই একাত্তরের পর পুরো উল্টোপথে হেঁটেছে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু এমন প্রতিবেদনের পরও সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যাবে? পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে, না। কারণ ভয়ের সংস্কৃতি মুক্ত গণমাধ্যমের পথ রুদ্ধ করে। জনগণের পক্ষে অসঙ্গতি তুলে ধরার সাহস হারায়। তার ওপর ভুল প্রতিবেদনের দায়-দায়িত্ব নিরুপন পুলিশের কাজ নয়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালতেরও নয়। কারণ চোর কেমন করে চোর হয়ে উঠলো সাংবাদিক সেই প্রতিবেদনও ছাপে। সমাজ সে মৌলিক কারণ জেনেই সামনে আগায়।
এ কারণে ডাক্তারদের যেমন বিএমডিসি সাংবাদিকের বিচারালয় তেমন প্রেস কাউন্সিল। দুর্বল হলেও বিচারের চর্চা এখানেই হতে হবে। তবে ফৌজদারী অপরাধ ভিন্ন বিষয়, প্রচলিত আইনে সাংবাদিককে গ্রেফতার অপরাধ বিবেচনায় করতে পারে। কিন্তু যে ফাঁদটায় আমরা আছি, প্রেস কাউন্সিল কেবল প্রিন্ট সাংবাদিকদের জন্য। বাকি অনলাইন এবং সম্প্রচার সাংবাদিকের জন্য অপেক্ষায় আছে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট। গ্রেফতার এবং জামিন অযোগ্য। তাহলে উপায়? সুরক্ষা বা সম্প্রচার কমিশন করতে আইনের দাবি তোলা। যেটা লম্বা পথ। আর, সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, ডিএসএ সাংবাদিকের জন্য প্রযোজ্য হবে না। আর সেই কথা রাখলেই হয়। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :