ইকবাল আনোয়ার: স্কুলের টিফিনে দেওয়া শুরু হলো বুলগেরিয়ান হুইট। গমের দানা যে কতো বড় হতে পারে, এটা না দেখলে বুঝা যাবে না। এ দিয়ে দুই রকম রেসেপি- একটা ঝাল, মাংস দিতো সঙ্গে তেলে ঝালে গন্ধটা সহ্য হতো না আমার। দু’একদিন চেষ্টা করে ক্ষান্ত দিয়েছি, কিছুতেই নিতে পারি না। স্কুলের পেছন দিকটায় ধর্মসাগরের পাড়ে রান্না ঘর, গন্ধ নাকে আসলেই টের পাই, মনটা বিষণ্ন হয়। স্যারসহ বন্ধুরা জোরাজোরি করবেÑ খা। হাসবে তারা আমায় নিয়ে। মুখে গেলেই গন্ধে আমার চোখে পানি এসে যায়। তাই আমি টিফিন পিরিয়ডে পিছনের জানলা দিয়ে পালাই। বন্ধুদের বড় অংশ এ খিচুড়ি টাইপের খাবারটা ভারী পছন্দ করে। তারা চেটেপুটে খায়। যেহেতু অনেকে খায় না, তাদের ভাগেরটাও খায়। এ মহান পুষ্টিকর পথ্য খেয়ে তারা তাগড়া হয়ে গেলো যে। মিহির ক্লাস ক্যাপ্টেন, টিনের বালতিতে সেই অমৃত নিয়ে আসে ক্লাসে। টিনের প্লেটে প্লেটে আওয়াজ হয়। আমি তখন ভাগলপুর। এই গম দিয়ে দুধের একটা মিষ্টি খাবারও বানাতো।
ওটা আমার কোনো রকম সহ্য হতো। যেদিন চিড়া দই দিতো, সঙ্গে কলা কোনদিন, সেদিন আমার আনন্দ কে দেখে। আরও চমৎকার দিন হলো, যেদিন মাঈনুদ্দিনের প্যাটিস পেতাম অথবা ইমানীয়ার ক্রিমরোল। আহা, সারা দুনিয়ার ক্রিমরোল একা খাওয়া যেতো যদি। এই আকাঙ্খা আমার। সেই যে বিলাতি দুধের কথা, সেটা না বললে কি হয়? এসেম্বলি করে একবার বড় কার্টুনে বিলাতি দুধ দেয়া হলো। বাসায় নিয়ে গেলাম যেনো রোজগার করে এনেছি। এই দুধে চিনি মিশিয়ে হাতে করে নিয়ে জঙ্গলে বসে খেতাম। টাকনায় আটকে দিয়ে জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতাম। গুড়ো অবস্থায় বড় একমুঠ মুখে দিয়ে দম যাবার জোগাড় হয়েছিলো। একবার বিস্কুটও দিয়েছিলো বড় বাক্স করে, চারকোনা বড় মচমচে। ‘টিফিন’ শব্দটার সঙ্গে এভাবেই আমার অষ্টাঙ্গ পরিচয় হয়। টিফিন বক্স, টিফিন পিরিয়ড, টিফিন বাটি, টিফিন ক্যারিয়ার। ওই তো হলো। জলখাবার আর কি। জলখাবার? বাহ সুন্দর কবিতার মতো শব্দ। জল+খাবার...। লেখক: চিকিৎসক