এ বি এম কামরুল হাসান: রাফসান ও আসিফের এপ্রন গায়ে, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে তোলা ছবি দেখে ৭৪ এর বাসন্তী বালার ছবির কথা মনে পড়ে গেল। বাসন্তী বালা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজিলার জেলেপল্লীর মেয়ে। ৭৪ সালে তিনি ছিলেন কিশোরী। ইত্তেফাকের সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম ও আলোকচিত্রী আফতাব আহমেদ আরো কজন রাজনীতিক নিয়ে নৌকায় করে চিলমারীর সেই প্রান্তিক গ্রামে গেছিলেন ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের ছবি তুলতে। সেই সময়ের ৫০ টাকার চকচকে নোটের বিনিময়ে বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী বাসন্তী ও তার বাকপ্রতিবন্ধী চাচাত বোন দুর্গতিকে রাজি করান জাল পরিয়ে ছবি তুলতে। সেদিনের সেই ছবি দেশে বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল। ৭৪ এ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। কিন্তু সেটা এমন দুর্ভিক্ষ ছিল না যে, লজ্জা নিবারণের জন্য জাল পরতে হবে। আত্মীয়স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পরবর্তিতে বেরিয়ে এসেছে যে, সেদিনের ওই আলোড়ন তোলা ছবিটি ছিল সাজানো। একটি দেশি বিদেশী চক্রান্ত।
রাফসান দেশের মেডিকেল কলেজ সমূহে ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে প্রথম হয়েছে। এক লক্ষ ৩৬ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম। একশ’তে ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছেন নেত্রকোনার আসিফ রহমান নেহাল। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৮৯ দশমিক ৫। দুজনই মেধাবী। দেশসেরা মেধাবী। দুজনকেই অভিনন্দন। যে বা যারা এই দুজন দেশসেরা মেধাবী হবু চিকিৎসককে বাসন্তী দুর্গতির মত সাজিয়ে ছবি তুলেছে তাতে ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছি। বিস্মিত হয়েছি। চিত্রগ্রাহকদের জ্ঞান গরিমার স্তর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ।
তারা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যে ক্লাস শুরু হলেই গায়ে এপ্রোন উঠবে। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে পড়া কালে তাঁদের গলায় স্টেথোস্কোপ উঠছে না। দ্বিতীয় বর্ষ শেষে প্রথম পেশাগত পরীক্ষা। সেটি উত্তীর্ণ হলে হবু ডাক্তারদের ক্লিনিকাল ক্লাস শুরু হবে। তখন থেকে শুরু হবে স্টেথোস্কোপের কাজ। এই প্রাথমিক জ্ঞানটি চিত্রগ্রাহকের নেই। বস্তুত চিত্রগ্রাহক সাহেব নিজের অজ্ঞতাবশত এই মেধাবীদের ‘জোকার’ বানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি হাস্যকর উপাদানে পরিণত করেছেন।
তবে ১৯৭৪ ও ২০২৩ এর এই ছবিগুলো ‘সাজানো’ হলেও বস্তুত পার্থক্য অনেক। বাসন্তী দুর্গতির ছবিগুলো ছিল দেশি বিদেশী চক্রান্তের বাস্তবায়ন। রাফসান আসিফের ছবিগুলো চিত্রগ্রাহকের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের অভাব। বাসন্তী দুর্গতি বাকপ্রতিবন্ধী। রাফসান আসিফ কথা বলতে পারেন। স্মার্ট। মেধাবী। শুধু মেধাবী নন, অতি মেধাবী। জ্ঞান গরিমায় রয়েছে প্রাচুর্যতা। চিত্রগ্রাহককে নিবৃত করতে পারতেন। যেটি বাকপ্রতিবন্ধী বাসন্তী দুর্গতি পারেননি।
আমাদের ছোটবেলায় ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, সংবাদ সহ সেকালের অনেক পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘সাজানবিহীন’ ছবি প্রায় চোখে পড়তো। দেখে মুগ্ধ হতাম। আজকাল আর তেমন ছবি দেখি না। রশিদ তালুকদার, পাভেল রহমানের মত চিত্রগ্রাহক আর দেখি না। সবাই আফতাব আহমেদ হতে চায়। বাসন্তী দুর্গতির মত সাজগোজ করিয়ে ছবি তুলতে চায়। ’ছবি কথা বলে’ জাতীয় ছবি আজকাল আর দেখি না। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট