শিরোনাম
◈ ১৩ হাজার ৫০০ জন হজযাত্রী মক্কায় পৌঁছেছেন  ◈ জাবালিয়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক, রাফা থেকে পালিয়েছে ৩ লাখ মানুষ ◈ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইতালির ব্যবসায়ীদের প্রতি  প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ◈ সাবেক মন্ত্রীর চার ছেলের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ◈ ১৩০ জনের মনোনয়ন প্রত্যাহার ◈ এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু সোমবার ◈ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে: রিজভী ◈ সরকারি চাকুরির বয়সসীমা ৩৫ চেয়ে আন্দোলনে গ্রেপ্তার ১২ শিক্ষার্থীর জামিন ◈ স্মার্ট হলো হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন রিফান্ড প্রক্রিয়া ◈ জি এম কাদেরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান: আপিল বিভাগ

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ রাত
আপডেট : ০২ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘মুজিবপিডিয়া’র দাম বেশি কেন?

ফরিদ কবির

ফরিদ কবির: এবারের বইমেলায় বইয়ের দাম নিয়ে অনেকেই তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘মুজিবপিডিয়া’ নামের সুবিশাল এ বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ভিত্তিতে এখন বুঝি, বইয়ের দাম আমরা যেভাবে হিসাব করি, তা ঠিক নয়। মুজিবপিডিয়া’র কথাই বলি। এর দাম নিয়েও তীব্র সমালোচনা আমাকে শুনতে হচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, বইটির জন্য স্পন্সর পাওয়া সত্ত্বেও দাম এতো বেশি কেন হবে? এমনকি বইটির ওজন ও সাইজ নিয়েও সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। কথা সত্যি, দু’খণ্ডের মুজিবপিডিয়ার ওজন প্রায় ৫ কেজি। আকারেও সাধারণ বইয়ের দ্বিগুণ, মানে ১-৮ ডিমাই সাইজ। অন্য বইয়ের মতো এটি হাতে নিয়ে কিংবা শুয়ে শুয়ে পড়ার উপায় নেই। 

না থাকারই কথা। বাঙালি পাঠকদের কজনই বা এনসাক্লোপিডিয়া পড়েছেন। পড়লে জানতে পারতেন, খুব কম এনসাক্লোপিডিয়াই আছে যেটি এক হাতে নিয়ে কবিতার বইয়ের মতো পড়া যায়। তবে বইটার দাম কেন বেশি তা নিয়ে একটা ব্যাখ্যা দেওয়া মনে হয় জরুরিই হয়ে পড়েছে। প্রথমেই বলে রাখি, মুজিবপিডিয়ার জন্য যে স্পন্সর পাওয়া গেছে, বইটিতে খরচ হয়েছে তার চাইতেও অতিরিক্ত প্রায় এককোটি টাকা। কিন্তু বইটির দাম রাখতে গিয়ে এসব খরচ যুক্তই করা হয়নি। ইচ্ছে ছিলো, পরের সংস্করণে তা যুক্ত করার। কেন? সে ব্যাখ্যা পরের জন্য তোলা থাকলো। দু’খণ্ডের এ বইটির বক্স, স্পেশাল কভার ও স্পেশাল বক্সসহ ছাপাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২০০ টাকা। 

বই সংক্রান্ত প্রমোশন ও অন্যান্য খরচসহ মোট খরচ ২৪০০ টাকা। কিন্তু এ বইটির দাম কেন ৮০০০ টাকা রাখতে বাধ্য হলাম সেটা পাঠকদের জানা দরকার। বই যারা প্রকাশ করেন তাদের সকলকেই কমপক্ষে ৩৫-৪০% ছাড় পরিবেশককে দিতে হয়। এর চাইতে কম ছাড়ে আপনার বই কেউ নেবেন না। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলিও বই কেনার সময় অন্তত ২৫-৩০% কমিশন চায় এবং তা দিতে হয়। এটাই রেওয়াজ। ফলে বড় একটা কমিশন মধ্যবর্তী একটা গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। এটা সকল প্রকাশকের সকল বইয়ের বেলায়ই প্রযোজ্য। এরপরে আছে রয়ালটির অংশ। মুজিবপিডিয়ার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে যারা কাজ করেছেন তাদের জন্য নির্ধারিত রয়ালটির পরিমাণ ২৫%। অবশিষ্ট ৪০% থেকে বইটির মুদ্রণ খরচবাবদ ২৪০০ টাকা বাদ দিলে লাভের অংশ থাকে ৮০০ টাকা। এই ৮০০ টাকার মধ্যে আছে মাসে অন্তত ২.৫০ লক্ষ টাকা অফিস খরচসহ অন্যান্য খরচ। 

এছাড়া এর ওয়েবসাইট, ফেসবুকপেজ, টিজার, অডিওভিজুয়াল- এসব বাবদ কতো খরচ হয়েছে তা নাইবা বললাম, বইমেলায় মুজিবপিডিয়ার প্যাভিলিয়ন বানানোর খরচ বাদে কেবল ২৮ দিনের জনবল ও আপ্যায়নেই ব্যয় হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। মুজিবপিডিয়ার জন্য পাওয়া স্পন্সর বাদে আমার নিজের খরচটা কোথায় ঠেকবে, কতো বই বিক্রি হবে, এসব বিবেচনায় না নিয়ে, বইটি যাতে সবাই কিনতে পারেন সেটা মাথায় রেখেই বইটির দাম ৮০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে প্রকৃত দাম যাই হোক যে কেউ চাইলে ২৫% কমিশনে মাত্র ৬,০০০ টাকায় বইটি কিনতে পারেন। প্রসঙ্গক্রমে আমার সমালোচকদের জানিয়ে রাখি, ‘এনসাক্লোপিডিয়া অব মহাত্মা গান্ধী’র ৫০০ পৃষ্ঠার এক খণ্ড বইয়ের দাম মাত্র ৫,০০০ রুপি। ছবিবিহীন এক রঙে ছাপা একেকটি খণ্ড আমি কিনেছি ১২,০০০ টাকা দিয়েই। 

এ বইও কি ভারতের সকল পাঠক কিনতে পারবেন? ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’ও কি সকলে কিনেছেন? আগামীতে ‘মুজিবপিডিয়া’ নতুনভাবে ছাপাতে হলে এর দাম অবশ্য ১৫,০০০ টাকাই রাখতে হবে। এমনকি ৬০,০০০ টাকাও হতে পারে। যাদের বেশি দরকার তারা কিনবেন। বাকিরা হয়তো কিনতে পারবেন না। কী করা যাবে। ২৪০০ টাকা যে বইয়ের প্রতি সেটের মুদ্রণ খরচ, সে বইয়ের দাম ২০০০ টাকা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন একজন। তাকে বলি, আসেন ভাই, পরেরবার বইটির ২০০০ কপি আপনি ছেপে দেন, তারপর প্রতি কপি ২০০০ টাকা করে বিক্রির পর পরিবেশকের ৩৫% ও রয়ালটির ২৫% বাদ দিয়ে বাকি টাকার পুরোটাই নিয়ে যান। [২] প্রকাশনাশিল্পের দুই শিল্পী ও শিল্পপতি প্রকাশনাশিল্পে দুজন প্রকাশক আছেন যারা সাধারণভাবে বই ছেপেই তৃপ্ত নন। তারা প্রকাশনাকে দুই অর্থেই শিল্পে (আর্ট এন্ড ইন্ডাস্ট্রি) রূপান্তরিত করেছেন। এদের একজন তারিক সুজাত, অন্যজন কামরুল হাসান শায়ক। তাদের প্রকাশিত যে কোনো বই স্পর্শ করলেই মন ভালো হয়ে যায়। তারিককে বাড়তি একটা কৃতিত্ব দিতেই হয়। একটি বইয়ের প্রডাকশন কেমন হওয়া উচিত- তা নিয়ে ওর নিষ্ঠা দেখলে বিস্ময় মানতে হয়। আর প্রকাশনাকে শিল্পে (ইন্ডাস্ট্রি) উন্নীত করার ক্ষেত্রে তার তুলনা কেবল তিনিই। 

তারিকের ‘জার্নিম্যান’ ও শায়কের ‘পাঞ্জেরী’র জন্য অনেক শুভকামনা। [৩] বইমেলার ইতিহাসে মুজিবপিডিয়াই প্রথম একটি বইয়ের নামে প্যাভিলিয়ন দিলো। বাংলা একাডেমি প্রতি বছর ‘সেরা প্যাভিলিয়ন’ ও ‘সেরা বই’-এর জন্য কয়েকটা পুরস্কার দিয়ে থাকে। আমার ভালো লাগছে যে এ তালিকায় বই বা প্যাভিলিয়ন- কোনো ক্ষেত্রেই বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের তালিকায় ‘মুজিবপিডিয়া’ ঠাঁই পায়নি। তবে, বইমেলায় ‘মুজিবপিডিয়া’র নামে একটি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়ার জন্য বইটির সম্পাদকমণ্ডলী ও গবেষক-লেখকদের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই হয়। বিশেষ করে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদার এ সহযোগিতার কথা আমরা নিশ্চয়ই স্মরণে রাখবো। কারণ এর মাধ্যমে বইমেলার ইতিহাসে একটি পালক ‘মুজিবপিডিয়া’র মুকুটে যুক্ত হলো। বইমেলায় একটি বইয়ের নামে প্রথম প্যাভিলিয়নের নামটি ‘মুজিবপিডিয়া’। লেখক: কবি। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়