শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১২  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘনের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস ◈ ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ◈ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশ: এডিবি ◈ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বিজিপির ১৪ সদস্য ◈ ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলার তালিকা প্রকাশ করুন: মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:৪৫ রাত
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়া কেমন দেশ, কেমন তাদের সংস্কৃতি?

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত: ছাব্বিশ বছর আগে এক ভোরবেলা এদেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম। ট্যাক্সি চড়ে যাবার সময় ছবির মতো বাড়ি-ঘর সামনে বাগান সারি সারি বৃক্ষ ও সাজানো রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিলো, আমি কোন সিনেমার শুটিং স্পটে এসেছি। টালির ছাউনি, মসৃণ রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। যতো মানুষ তার তিনগুণ বাড়িঘর।
তারপর কতো জল গড়ালো। এসেছিলাম অভিবাসন নিয়ে। দু’বছর পর নাগরিক হলাম। জন্মভূমিও ক্যাঙারুর দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় সানন্দে তা নিয়েছি। এর সুদিকটা হলো পৃথিবীর বহু দেশে বিনা ভিসায় ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ, নীল পাসপোর্টের খাতির বা সন্দেহের চোখে না তাকানো। কুদিকও আছে। নাগরিক মানে ভোটার। আর ভোট না দিলে মোটা অংকের ডলার জরিমানা।
শুরুতে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কী জাতীয় চাকরি পাবো। কঠিন শারীরিক কাজ বা তেমন কিছু পারবো না এটা জানতাম। কয়েকমাসের ভেতরই চাকরি পেলাম ব্যাংকে। দেশের অভিজ্ঞতায় বুক দুরু দুরু করতো। ইউনিয়ন যদি বদলি করিয়ে দেয় কালো চামড়া বলে কিংবা বড় সাহেবের বদ নজরে পড়ে যদি কিছু হয়? দেখি পুরা বিপরীত। এরাই বলছে তুমি কিন্তু এ এলাকার বাইরে কোনো অফিসে যাবে না কোনোদিন। রিজিওনাল কর্ত্রী এসে চুপটি করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে কখন হাতের কাজ সেরে তার সাথে দু’মিনিট কথা বলা যাবে। বেশির ভাগ সময়ই তা ছিলো সুখবর কিংবা অভিনন্দন জাতীয় আলাপ।
একসময় দেখি এরাই জোর করে পদোন্নতি দেয়। মনোজাগতিক দুর্বলতা কাটতে কাটতে একসময় সেবা উপদেষ্টা র কাজও করে ফেললাম। সতের বছর পর অর্ধ অবসরে এসে ভাবলাম কিছু তো করা উচিত। অনেকটা যেচেই চাকরি দেওয়া হলো পরীক্ষকের। লেখাপড়া সংশ্লিষ্ট এমন কাজের প্রতি চিরকালের লোভ। তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের। সাথে জুটলো ইংরেজি পরীক্ষা আয়োজনও পরীক্ষকের কাজ। 
আমার ছেলে এদেশে এসেছিল তার শিশু কালে।  একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য  কাঁদা অর্কের ভয় ছিলো ভাষার। পরেও তাদের ইংরেজি পড়িয়েছে। নিজের ইচ্ছে মতো অভিনয় জগত বেছে নিয়ে এদেশের প্রথম এশিয়ান তরুণ ও বাংলাদেশি হিসেবে হলিউড মুভিতে অভিনয় করেছে। এখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল লিবারেল ও লেবর উভয় দলই সম্মান জানিয়েছে তাকে। এবার অস্ট্রেলিয়া ডে উদযাপনে ও রয়েছে বিচারকের আসনে। সিডনি সর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জুরি হয়েছে ও।
এই দেশের নামের অর্থ মিলন স্থল। এই  অস্ট্রেলিয়া নামটি এটি এসেছে এ্যবরজিনাল বা আদিবাসীদের কাছে থেকে। ৫০ হাজার বছরেরও অধিক যাদের ইতিহাস বলে দাবি করা হয় তারা অবশ্য ভাষা লুপ্ত এক জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইংরেজরা জানতো কোন দেশে থাকা যাবে কোন দেশে শাসন করে তারপর ফিরতে হবে। সেভাবেই সেসব দেশকে গড়ে তুলতো সাজাতো বলে অস্ট্রেলিয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের মতো। এটাও ঠিক তারা এসেছিল আর সেভাবে গড়ে তুলেছে বলেই আমরা সবাই এসেছি। নানা কারণে বসত গেড়েছি।
পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট মহাদেশের বড় দেশ। এটাও দেখেছি কথায় না কাজে কতোটা মানবিক কতটা উদার দানে। যে পরিমাণ ডলার মানুষ দান করে তা ভাবাও কঠিন। আজ বেড়াতে এসে এমন এক রেঁস্তোরায় খেলাম যারা একটি মিল বিক্রি করলে একজন অভুক্ত মানুষের খাবারের টাকা দেয় মুনাফা থেকে। এ পর্যন্ত ৬ কোটিরও বেশী মানুষকে খাবার যুগিয়েছ ওরা। সে ছবিটিও যুক্ত করলাম। যেকোনো কাজে ভলনটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ।  নিজের জীবন তুচ্ছ করে কোয়েলা ক্যাঙারুর বাচ্চা বুকে নিয়ে ছোটে নারী। এমন মমতা বিরল।
আমার মতো ঠোঁট কাটা মন খুলে কথা বলা মানুষের বড় বিপদ। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনে পদে পদে ভয় ও অপমান। এদেশ তা থেকে মুক্ত রেখেছে আমাকে। এখানেও বাঙালির  নীচুতা যায় নি। তবে  তাদের আপনি অনায়াসে এড়িয়ে বলতে পারেন, "মেঘেরা যা খুশী লিখে রেখে যাক আকাশের গায়ে কখনো লাগে না দাগ।’
কোন তদবির বা যোগাযোগ ছাড়াই আমি পেয়েছি প্রথম বারের মতো আদিবাসী ও বহুজাতিক পদক। এই সে দিন এখানকার বাঙালিরা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের জন্মদিন উদযাপন করে তাক লাগিয়ে দিলেন পোশাক, খাবার, কথা ও জীবনে উদার আধুনিক সমাজে এই দেশের জাতীয় সঙ্গীতে আমরা গাই, অঁংঃৎধষরধহং ধষষ ষবঃ ঁং ৎবলড়রপব ঋড়ৎ বি ধৎব ুড়ঁহম ধহফ ভৎবব...। ২৬ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া দিবস। ঐধঢ়ঢ়ু অঁংঃৎধষরধ উধু ঃড় ধষষ. আমি এদেশে না এলে জানতামই না ক্ষমতা একটা তুচ্ছ বিষয় যা এক মুহূর্তে ত্যাগ করতে পারেন কোন প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিতে যাওয়া মানুষের পেছনে ফেউ এর মতো ঘোরে না কোন রাজনীতি। কৃতজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া, তোমার ক্রিকেট, তোমার সুইমিং, তোমার রাগবি, তোমার ফুটবলের মতো সুন্দরী রমণীর মতো রমণীয় তুমি। লেখক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়