ইমতিয়াজ মাহমুদ: [২] আমাদের জাতীয় দলের ফুটবলার আনুচিং আর ফুটবল খেলবে না বলে অভিমান করে বাড়ি চলে গেছে। যতটুকু বুঝতে পারছি, জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে ওকে বাদ দেওয়ায় অভিমান হয়েছে মেয়েটার। সেই থেকেই তার এই সিদ্ধান্ত। ছোট মেয়ে, কৈশোর মোটে পেরিয়েছে, মাত্র বিশ বছর বয়স। এই ছোট্ট জীবনের বড় অংশটাই ওরা ব্যায় করেছে ফুটবলকে ভালোবেসে ফুটবলের পেছনে। একটু অভিমানী তো ওরা হবেই। আমি অনুমান করি ক্যাম্প থেকে ওকে বাদ দেওয়া, আর সেই সাথে নিশ্চয়ই অন্য কিছু ঘটনাও আছে যেগুলোতে মেয়েটার সম্মানে আঘাত লেগেছে, এইসব কারণে অভিমান করেই আনুচিং অবসরের কথা বলেছে।
আমাদের ফুটবল ফেডারেশন, কোচ, ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদেরকে অনুরোধ করবো, মেহেরবানী করে আপনারা একটু মেয়েটার সাথে কথা বলেন। দেশের জন্যে খেলেছে মেয়েটা। আজকে কোনো কারণে জাতীয় দলে নেই, কিন্তু ফিরে আসার সময়, সক্ষমতা ও সম্ভাবনা সবই আছে আনুচিংয়ের। আর যদি কোনোদিন জাতীয় দলে ফিরে নাও আসে তবুও, আমাদের জাতীয় দলে তো সে খেলেছে। আমাদের জন্যে গৌরব যতটুকু মেয়েদের ফুটবল থেকে এসেছে, সেখানে তো ওর অবদান এক ফোঁটা হলেও আছে। এই মেয়েটার প্রতি আমাদের ঋণ তো আছে, দায়িত্বও আছে।
আর খেলোয়াড় হিসাবেও তো আনুচিং খারাপ না, যোগ্যতা আছে বলেই না সে জাতীয় দলে স্থান পেয়েছিল। বোর্ড এবং ফুটবলের কর্তাব্যক্তি যারা আছেন, একটু কথা বলেন মেয়েটার সাথে। যোগাযোগ করেন। ফুটবলকে ওরা আরও অনেক দেওয়ার আছেÑ এই জাতির সেবা করছে সে, আমাদের ফুটবলের বিকাশে সে কিছু না কিছু অবদান ভবিষ্যতেও রাখতে পারবে। আর এইরকম অভিমান করে একটা বাচ্চা চলে যাবে অথচ বোর্ড থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না, এটা তো ভালো উদাহরণ তৈরি করে না। ছোট মানুষ, অভিমান হয়েছে, হয়তো অভিমানের সংগত কোনো কারণও আছে। বড়দের দায়িত্ব হচ্ছে এটা দেখা।
[৩] আর আনুচিং। মেয়েটা আমার ছোট মেয়েটার চেয়েও ছোট। মা রে, এই পৃথিবী বড় কঠিন জায়গা। এইখানে নারীরা প্রতি সর্বদা একটা বৈষম্য বিরাজ করে। আর সেই সাথে আদিবাসী মানুষের প্রতিও সর্বদা বৈষম্য হয়। আপনার জাতীয় পর্যায়ে ফুটবলার হওয়া সেটা আপনার জন্যে বিশাল একটা অর্জন তো বটেইÑ নিজে সম্মান প্যেছেন, পিতামাতার মুখ উজ্জ্বল করেছেন, এলাকাবাসীকে অহংকার করার সুযোগ এনে দিয়েছেন। কিন্তু এইসব সবকিছুর উপরেও, নারীমুক্তির লড়াইয়ে এবং আদিবাসী অধিকারের সংগ্রামে আপনার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব ও অর্জন একটা ভূমিকা পালন করে।
আনুচিং আপনি হয়তো অনুভব করতে পারেন কিনা জানি না, আপনি যখন আলোকোজ্জ্বল স্টেডিয়ামে ফুটবলে একটা লাথি মারেন সেই লাথি শুধু আপানর দলের জয়ের জন্যেই ভূমিকা রাখে না, আপনাদের প্রতিটা লাথি প্রতিটা ম্যাচ প্রক্রিয়াশিলতাকে পশ্চাৎপদ চিন্তা ও ধারণাকে প্রতিক্ষণ আঘাত করতে থাকে। স্টেডিয়ামের আলো আপনাদের প্রতিটা খেলার সাথে ঠিকরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটা অন্ধকার কোনায়। এই ক্ষেত্রটা ছেড়ে যাবেন না। আপনার অভিমান হয়তো জায়েজ আছে, হয়তো আপনার প্রতি আসলেই অন্যায় হয়েছে। আমি বলবো, আনুচিং, সকল অন্যায় সকল অবিচারের প্রতিকার অভিমান দিয়ে হয় না। লড়তে হয়।
আনুচিং, লড়াই কাকে বলে সেটা তো আর আপনাকে আমি শেখাতে পারব না। কঠিন লড়াই করেই আপনারা আপনাদের যতটুকুই প্রাপ্তি সেটা অর্জন করেছেন। আমি কেবল এইটাই বলতে পারি, অভিমান করেই হোক বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে দেবেন না। আনুচিং মেয়েটার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নাই, থাকলে আমি ওর সাথে দেখা করে ওর কথা শুনতাম। ওকে বলতাম মাঠ থেকে বাইরে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করবেন কীভাবে। মাঠে থাকুন। ওদের অন্যায় অবিচারের জবাব মাঠেই দিতে হবে। আপনার ক্রোধ আপনার লাথিতে বাড়তি শক্তি যোগাবে। মাঠে থাকুন।
[৪] আরেকটা কথা। আমি জানি যে মগদের মধ্যে নারীরা অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ও সপ্রভিত হয়। আশা করি আনুচিং মগিনিও মাথা ঠাণ্ডা করে ভাববে, আবার ফিরে আসবে মাঠে। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :