শিরোনাম
◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:২৩ রাত
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:২৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে কারণে হুমায়ূন আহমেদ ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন

রাজিক হাসান

রাজিক হাসান: হুমাছুন আহমেদ লিখিত শতাধিক বই আমি পড়েছি। একসময় সত্যি গোগ্রাসে গিলেছি তাঁর লেখা বই। অপেক্ষায় থাকতাম কবে হুমায়ূনের নতুন বই আসবে। তখন তিনি লিখতেন রহস্য পত্রিকায়। বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে অমানুষ তিনি সেখানেই লিখেছিলেন। পরে অমানুষ বইটি বই আকারে বেরিয়েছে। বিদেশি বইটির নাম ছিলো, ম্যান অন ফায়ার। কাজী আনোয়ার হোসেন পরে নিজে লিখেছিলেন অগ্নি পুরুষ বইটি। একই কাহিনি দুইভাবে লেখা। দুইটি বইই আমি পড়েছি। অগ্নি পুরুষ বইয়ে যেই রোমাঞ্চ কাজী আনোয়ার হোসেন দিয়েছেন তার ছিঁটেফোঁটাও অমানুষ বইটিতে আমি পাইনি। লন্ডনের বাঙালি পাড়ার লাইব্রেরিতে পাই হুমায়ূন আহমেদের বাদশাহ নমদার বইটি। বহু বছর পর পড়ছি হুমায়ূন আহমদের বই। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। ইতিহাসে আগ্রহ আমার, তাই বইটি পড়ে আমি শেষ করি। মনে আছে, কলেজে যখন পড়তাম তখন দেখতাম ছাত্রশিবিরের ছেলেদের ইতিহাসের ঘটনার বিশ্লেষণ করেন একরকম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, আবার একই ঘটনা ইউনিয়নের ছেলেরা বিশ্লেষণ করেন সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। সম্রাট আকবরকে শিবিরের ছেলেরা চরিত্রহীন, লম্পট, বেঈমান হিসাবে চিহ্নিত করবে আবার ইউনিয়নের ছেলেরা সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা দেবে। আওরঙ্গজেব, দারাশিকহ, সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়।

এখন প্রশ্ন হলো, হুমায়ূন আহমদ কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বাদশাহ নমদার বইটি লিখেছেন। বইটি পড়ুন, উত্তর আছে সেখানে। হুমায়ূন আহমেদের সমালোচক নই আমি। ওনার সম্পর্কে লেখার ইচ্ছেও আমার ছিল না বা নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা জানতে চান, হুমায়ূন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কী? সেই কারণে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করছি আমি। হুমায়ূন আহমেদ পাঠক সৃষ্টি করেছেন। কথাটি সত্যি। হুমায়ূন আহমেদ পড়ার আগেই আমি ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক্সের বহু বই পড়ে ফেলেছি। সুতরাং আমি এই ক্যাটাগরিতে পড়বো না। তবে আমি বহু হুমায়ূন ভক্ত পাঠক দেখেছি যারা ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক্স তো দূরের কথা, নীল লোহিত, প্রফেসর শঙ্কু বা কুয়াশা পড়ে দেখেননি, এমনকি নামও শোনেন নাই। রবীন্দ্র, তলস্তয়, মোপাসাঁ, গোর্কি পড়ার যোগ্যতা যে সব পাঠকের নাই সেই সব পাঠকদের তিনি বই পড়া শিখিয়েছেন, সন্দেহ নাই। তাই হিমু চরিত্র যে নীল লোহিত থেকে ধার করা সে কথা কেউ বলে না। মিসির আলী পড়ে আর যাই হোক বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া যায় না। এই দুইটি ছাড়া হুমায়ূন আহমদের কোনো শক্তিশালী চরিত্র নাই। অনেকে বলবেন বাকের ভাই, আমি বলবো এই বিষয় নিয়ে আলোচনার দরকার নাই। হুমায়ূন আহমেদর সৃষ্ট শক্তিশালী কোনো নারী চরিত্র নাই। এক্সক্লুসিভভাবে হুমায়ূন আহমেদের পাঠকদের থেকে শুনতে পাই, ‘ভাই, আমি অন্য কারো বই বুঝি না। পড়তে ভালো লাগে না। আমি ভাই আঁতেল না’ বলে অজ্ঞাত কারণে শ্লাঘাবোধ করেন।

ড. হুমায়ুুন আজাদকে মরতে হলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না। হুমায়ূন আহমেদ মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি গল্পে হিন্দু নাম পরিবর্তন করে  মুসলিম নাম বসিয়ে হুমায়ুন আজাদের কাছে নিয়ে বলেছিলেন, তিনি গল্পটি লিখেছন। হুমায়ুন আজাদ  নাকি বলেছিলেন, গল্পের গভীরতা নেই। এই কথাটি শুধু হুমায়ূন ভক্তরাই বিশ্বাস করবেন। যদি বলি গল্পের নাম কী? কেউ বলতে পারবেন না সেই গল্পের নাম। কারণ হিন্দু নামের জায়গায় মুসলিম নাম বসালে সেই গল্পটি তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। কথাটি ডাহা মিথ্যা সন্দেহ নেই। সে যাই হোক, আমাদের সাংস্কৃতি আমাদের সাহিত্যের নিজশ্বতা গড়ে না ওঠার কারণে আমরা অপসাংস্কৃতিকেও ভ্রমকরে সাংস্কৃতি ভেবে বসি। সমাজে শুধু একটা শ্রেণি নিয়েই গঠিত হয় না, বিভিন্ন মানের বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতা নিয়েই একটি সমাজ পূর্ণাঙ্গতা পায়। হুমায়ূন আহমেদ মধ্যবিত্তের জীবনকে উপজিব্য করে রসালো কিছু উপাদান ধরিয়ে দিয়েছেন সাধারণ পাবলিককে। তাকে সাহিত্য মানে বিবেচনা করলে সহিত্যের প্রতি অবিচার করা হবে। 

জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের চিন্তা ধারার ক্ষেত্রে যে আমূল পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন তা শোধরাতে সময় লাগবে অনেক বছর। আমরা এখন সব কিছুইকেই খুব হালকা এবং কৌতুক হিসেবে নিই। তার কারণেই হয়তোবা জীবনের গভীরতাকে আমরা চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। তিনি কৌতুকপ্রিয় ছিলেন, তিনি আমাদের হাসিয়েছেন। তিনি আমাদের কাঁদিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের ভাবতে শেখাননি কখনও। তিনি আমুদিত করেছেন কোটি-কোটি পাঠকপ্রাণ। আমাদের নিরস মধ্যবিত্ত জীবনে ছিল না কোনো কমেডি, সেখানে তিনি কমেডি এনে দিয়েছেন। এটা তাঁর অবদান। ভাষার জাদুকর তিনি ছিলেন না, ছিলেন তিনি কাহিনীর জাদুকর। আমরা মধ্যবিত্তরা, যে কাহিনী শুনতে চেয়েছি, তিনি শোনাতে পেরেছেন তাই। তিনি যতোটা ভেবেছেন সাহিত্যভাবনা, তারচেয়ে বেশি ভেবেছেন বিপণনের কথা। তিনি শব্দের ফেরিওয়ালা, মধ্যবিত্তের মনস্তত্ত্ব ছিলো তাঁর সাহিত্য ব্যবসার কাঁচামাল। তার গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমায় তিনি তা উজাড় করে দিয়েছেন পাঠকÑদর্শক মনে। সেই অর্থে, তিনি কালজয়ী হতে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন, তার লেখনীর ভেতর কালকে ধরে রাখতে। নিঃসন্দেহে তিনি তা পেরেছেন। শিল্পজগতে ছিলো না তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা। যে কারণে তিনি পেয়েছিলেন ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়