শিরোনাম
◈ হলমার্ক কেলেঙ্কারির রায় ঘোষণার সময় পালিয়ে গেলেন জামাল উদ্দিন সরকার ◈ ২৯ কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ বাস্তব বিবর্জিত: দোকান মালিক সমিতি ◈ তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদিকে বাড়ি ছাড়তে হবে: হাইকোর্ট  ◈ সরকারের হাত থেকে রক্ষা পেতে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: বিএনপি ◈ সরকারের ফাঁদে পা দেইনি, দল ছাড়িনি, ভোটেও যাইনি: মেজর হাফিজ ◈ আমার একটাই চাওয়া স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ জিম্মি জাহাজ উদ্ধারে অভিযান নয়, আলোচনা চায় মালিকপক্ষ ◈ বিএনপিকে আমরা কেন ভাঙতে যাবো, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের  ◈ হলমার্ক মামলায় তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন ◈ ভোরে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ২০

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:১৭ রাত
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৩:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উৎসের সন্ধানে

গরীব নেওয়াজ

গরীব নেওয়াজ: অনেকেই মনে করেন আমরা শিকড়হীন এক নব্য জাতি, আমাদের নেই কোনো ইতিহাস, নেই কোনো ঐতিহ্য। বাস্তবে অতি প্রাচীন আমাদের এই দেশ। আর প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বহু প্রাচীন জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এই জনপদ এবং বাঙালি সমাজ। এবং এর জনপদ থেকে জনপদে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষর। ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিগত হিম যুগের আগের হিম যুগের শেষ সময় হতে বাংলা অঞ্চলের উৎপত্তি (বরফ যুগ ও হিম যুগ সম্পর্কে এর আগেই আলোচনা করেছি)। এ অঞ্চলের সূচনা আনুমানিক তিন লক্ষ বছর আগে। হিমালয় পর্বতের পাদদেশের উত্থানকালে এর সামনে দক্ষিণ অংশে একটি নিম্ন ভাঁজের সৃষ্টি হয়। তারপর গঙ্গা মেঘনা নদীবাহিত পলি দিয়ে বাংলার বদ্বীপ এলাকা গড়ে ওঠে। মধুপুর গড় ও লালমাই বরেন্দ্র অঞ্চল অবশ্য বদ্বীপের অন্যান্য এলাকা থেকে অনেক প্রাচীন। এ অঞ্চলের মানুষের বসতিও অতি প্রাচীন। আজকের এই পূর্ণাঙ্গ মানুষের আগে নরাকার মানুষ ছিল পৃথিবীতে। যাদেরকে প্রথম মানুষ বলা হয়। লক্ষ-লক্ষ বছর তারা পৃথিবীতে বসবাস করেছে। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় জাভা-মানব ও সোলে-মানব, চীনের পিকং-মানব,  জার্মানির হাইডেলবার্গ-মানব, পশ্চিম ইউরোপের নিয়ান্ডারথাল-মানব ও ক্রোমান-মানব, আফ্রিকার রোডেশিয়ান-মানব হচ্ছে এ ধরনের আদি মানব। 

এ ধরনের মানুষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে মেদিনীপুরে। সেখানে প্রথম মানুষের চোয়ালের হাড় পাওয়া গিয়েছে। শিবলিক পাহাড় অঞ্চলে টারশিয়ারি যুগের নরবানরের চোয়ালের হাড় ও দাঁত পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিম বাংলার বহু জায়গায় প্রথম মানুষের ব্যবহার করা জিনিসপত্র ও অস্ত্রপাতি পাওয়া গিয়েছে। পুরোনো পাথরের যুগ থেকেই এদেশের মানুষের বসবাস ছিল। এ থেকে বুঝা যায় যে, পৃথিবীর অতি প্রাচীন মানব মানব জাতিগুলোর মধ্যে আমরাও একটি জাতি। কখন থেকে সত্যিকারভাবে এখানে আধুনিক মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে একথা বলা যায় যে, শেষ হিমযুগের পর থেকে এদেশ জনশুন্য থাকেনি। এক মতে বলা হয়, ষোল হাজার বছর আগে বার্মা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আদি অস্ট্রিক গোষ্ঠী এখানে প্রথম বসবাস শুরু করে।

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়ে পাথরের যুগের হাতে তৈরি অনেকগুলো কুঠার আবিষ্কৃত হয়েছে। শুশুনিয়ার কিছু দূরে জামথোল পাহাড়। তার চারপাশে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে মেরুদণ্ডী প্রাণীর অনেকগুলো ফসিল। এসব থেকে অনুমান করা হয়, শেষ হিমযুগের পর থেকে এখানে মানুষ বাস করত। অর্থাৎ আমরা শিকড়হীন কোনো নব্য জাতি নই। আমাদের শিকড় আছে, আমাদের আছে ইতিহাস। আমাদের সভ্যতাও অনেক প্রাচীন। মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরু সভ্যতা, মহেঞ্জোদারো-হরপ্পার সভ্যতার চেয়ে  আমাদের সভ্যতা কম প্রাচীন নয়। মানুষের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, জিনিসপত্র এবং জীবনযাত্রা প্রণালি কত উন্নত তার উপর নির্ভর করে সভ্যতার স্তর। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানার পাহাড়ি উপত্যকায় আমজাতহাটে আবিষ্কৃত হয় একটি হাতে তৈরি পাথরের কুঠার। এ ধূসর বর্ণের কুঠারটিই এখন পর্যন্ত এদেশে পাওয়া মানুষের বসতির সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন। কুঠারটি রয়েছে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে। নরসিংদী জেলার বোলাব থানার ওয়ারী ও বটেশ্বর নামের গৈরিক মাটির  উঁচু ভূখণ্ডের গ্রামে অনেক প্রত্ন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, তিন হাজার বছর আগের লৌহ-কুঠার, বর্শাফলক, চার-পাঁচ হাজার বছর আগের নব্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন, তিন-চার হাজার বছর আগের তাম্র প্রস্তর যুগের ব্রোঞ্জ বলয়, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত পোড়া মাটির গোলক, নানা বর্ণের পাথরের পুঁতি, খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা ইত্যাদি। খনন কর্ম চালিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব-রাস্তা ইত্যাদি আবিষ্কার হয়েছে। পরের পর্বে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য দেওয়া হবে।  ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়