অজয় দাশগুপ্ত: আমার মায়ের পিতা দাদু ছিলেন বৃটিশ ভারতের স্কুল হেডমাস্টার। আমার সবচেয়ে সুখী দিদি প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক। চাকরি জীবনে গলদঘর্ম বলদের ব্যাংক চাকরির পর ভাগ্য জুটিয়ে দিয়েছে পরীক্ষকের চাকরি। শিক্ষার সাথে জড়িত এই কাজটিতে এসে জেনেছি, শিক্ষক হবার মর্যাদা কতো। আমার জীবন ও জীবনবোধ তৈরির সূচনালগ্নে বহু শিক্ষকের অবদান আছে। প্রাইমারি স্কুলের দেবতাতুল্য সে সব শিক্ষকদের ভারী ভারী ডিগ্রি ছিল না, ছিল বুক ভরা ভালোবাসা, সাইকেল চড়ে পড়াতে আসা সে সব শিক্ষকদের ছিল আদর্শ আর মেরুদণ্ড। হয়তো সে কারণেই মেরুদণ্ডটি এখনো বাঁকা হয়ে যায়নি।
হাই স্কুলে আমাদের হেডমাস্টার প্রয়াত এ কে মাহমুদুল হক ছিলেন এক বাতিঘর। সুদর্শন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অথচ মজার মানুষ। যিনি ছাত্রদের ভালো ফলাফল করলে প্রেম করিয়ে দেয়ারওলোভ দেখাতেন। এমন গুরুতুল্য প্রধান শিক্ষক না থাকলে কবে ছড়াকার হতাম আর কবে লিখতাম জানি না। কলেজ জীবনে বেশকিছু শিক্ষকের ভেতর ইংরেজির অধ্যাপক প্রয়াত রণজিৎ চক্রবর্তী ছিলেন গুরুতুল্য। অমন সুবেশী স্যুট টাই পরা ভদ্রলোক এখন চোখেই পড়ে না। স্যার কোনো বই পড়াতেন না, কবিতাও কবিকে পড়াতেন। জলদগম্ভীর কণ্ঠটি অনায়াসে মূর্ত করে তুলতো জন কীটস, শেকসপিয়ার, ব্রাউনিং কিংবা রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তী কালে ইংরেজি সাহিত্য পাঠ ও ভালোলাগার সূত্র আমার এই শিক্ষক। যেমন বাংলা নাটক উপন্যাস চিনিয়েছিলেন প্রয়াত মমতাজউদ্দিন আহমেদ।
জীবনে যাদের কাছে শিখেছি তাঁরা সবাই শিক্ষক। ক্লাস করিনি বলে কি সরদার ফজলুল করিম, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল কিংবা সৈয়দ মুজতবা আলী শিক্ষক নন? সবার ওপরে সেই রবীন্দ্রনাথ যাঁর কাছ থেকে রোজ শিখি, আমৃত্যু শিখব। তবে আমার প্রিয়তম শিক্ষক একজনই তিনি আমার মা প্রভাবতী দাশগুপ্ত। শিক্ষা বললেই মনে পড়ে মায়েরর কাছ ঘেষে বসে অ আ ক খ থেকে ছড়া পড়তে শেখা। এমন শিক্ষক আর কেউ হয় না। শুভ শিক্ষক দিবস। লেখক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :