মিরাজুল ইসলাম: বিদ্যা বালান-নাসিরুদ্দিন শাহ অভিনীত ‘ডার্টি পিকচার’ আমার পছন্দের হিন্দী সিনেমার মধ্যে একটা। ভারী আঁতলামি আর থিয়েটারমুখী চলচ্চিত্র ঘরানার সিনেমা সব সময় ভালো লাগে না। কর্মাশিয়াল সিনেমায় যদি দারুন অভিনয় এবং পরিচালকের কারিশমা থাকে তা দেখে চোখ এবং মনের আনন্দটাই আলাদা। তখন আর্ট ফিল্ম ধারার সিনেমায় মজা পাই না। ‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমাটি পারফেক্টলি আমাদের তৃতীয় বিশ্বের সিনেমা পাড়ার গল্পটা তুলে এনেছিল। সত্যি বলতে কি, নায়ক-নায়িকারা যদি পর্দার বাইরে মুখরোচক স্ক্যাণ্ডালে না জড়ান তবে সিনেমার মজা ষোল আনাই মিছে। যদিও সিনে-রুচি সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। নিজের পছন্দ অন্যকে চাপিয়ে দেবার একটা ট্রেণ্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় চালু আছে।
যে কারণে স্পয়লারগুলো কোন কালেই পাত্তা দিই নি। ইদানীং আরো লক্ষ্য করা গেছে, আমাদের দেশে হুজুর-মার্কা পরিচালক, নায়ক-নায়িকাদের হিপোক্রেটিক চলচ্চিত্র-ভাবনা চর্চার কারনে ব্যক্তিগত কাহিনীগুলো নিয়ে সুশীলদের এতো বিশ্লেষণমুখী পাকনামো। সিনেমার সাথে ধর্মের এই ককটেল হাস্যকর। যেদিন থেকে শাবানা হিজাব ধরলেন কিংবা প্রযোজক-পরিচালকরা মিলাদ পড়িয়ে মহরত অনুষ্ঠান সহী-জায়েজ করার জন্য ধর্মের সাথে সিনেমা-পেশার মহব্বতের গ্যাঞ্জাম পাকানো শুরু করলেন, সেদিন থেকেই সিনেমার সর্বনাশের শুরু। আমরা কেন আশা করি সিনেমার নায়ক-নায়িকারা সমাজের সর্বোচ্চ শুদ্ধিকরণ ফর্মুলায় জীবন কাটাবেন? কিংবা না কাটালেও কেন তাদের অশ্রদ্ধা? কমার্শিয়াল সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের সমাজ পাঠ এবং তার দর্শকদের জীবনের ধারাপাত একই পৃষ্ঠায় ছাপা হলে ফ্যান্টাসীর সুযোগ কোথায়? হলিউডে লিজ টেইলরের একাধিক বিয়ে, মনরো’র অন্ধকার জীবন কিংবা ডিক্যাপ্রিও’র ততোধিক প্রেম কি তাদের সিনেমা বাজারকে নষ্ট করেছে? অনেকের করেছে, তবে সেটি আত্মঘাতী নৈতিকতার স্খলনে। কিন্তু কোনভাবেই দর্শকদের মোরাল পুলিশিং জড়িত ছিল না।
কিন্তু প্রযোজক যাদের ‘জোর করে’ বিছানায় নিয়েছিলো সেসব নায়িকা অবলীলায় ‘মি টু’ আন্দোলনে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পেশাগত জীবনে নৈতিকতার একটা স্ট্যান্ডার্ড ফর্মুলা দাঁড় করিয়েছেন। এটা কর্পোরেট যুগে যে কোন পেশার ক্ষেত্রেই সত্য। তাদের নিয়ে কেউ নোংরা ফতোয়া দেয় নি। এটাই সিনেমার জগত। এই জগতের সব কিছু জেনেই তাদের আত্মোৎসর্গ করা। একইভাবে বলিউডের চেনা গল্পের কেচ্ছা না হয় বাদই দিলাম। ‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমায় উঠতি নায়িকা সিল্ক স্বেচ্ছায় মহানায়কের সাথে বিছানায় ৫০১ বার ‘টিউনিং’ করতে যখন রাজী হয়ে যান, তখন সমালোচনার বদলে এক লড়াকু অভিনেত্রীর প্রতি সহানুভূতি প্রবলভাবে দর্শক মনে কাজ করে। অন্যদিকে, সিনেমার নায়কের ভাষায় তিনটি উপাদান থাকা দরকার দর্শকদের পয়সা উসুল করতে। তাহলো, বিনোদন, বিনোদন এবং বিনোদন। সেটি না থাকলে সিনেমা যেমন মিথ্যে, দর্শকদের চাহিদাও থাকে শূন্য। সেই হিসেবে বলবো, বাংলাদেশের কমার্শিয়াল সিনেমা ঠিক কক্ষপথেই এগোচ্ছে। এজন্য পর্দার ভেতরে এবং বাইরের সকল কলাকুশলীকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য সেই সকল সাংবাদিকদের, যারা জীবন সংগ্রামের সংবাদগুলো লুকিয়ে রেখে জনগণকে সস্তা বিনোদন দিতে বেশি উন্মুখ। লেখক ও চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :