লুৎফর রহমান হিমেল: কবিতা নিয়ে খুব কথা হলো কয়েকদিন ধরে। বিশেষ করে এক অতিরিক্ত সচিবের কবিতা এবং কবিতার বই গত কয়েকদিন ছিল ভাইরাল। সরকারি একটি প্রকল্পে বই কেনায় নাকি ওই সচিবেরই ছিল ২৯টি বই, সেসব বইয়ের বেশিরভাগই আবার কবিতার বই! সে যা-ই হোক, কবিতা কবিতাই। কবিতা মানুষকে বিবাগী করে। কাউকে করে প্রেমিক। কাউকে তোলে সম্মানের চূড়ায়, কাউকে করে সিংহাসন ছাড়া। আমরা জানি জেনারেল এরশাদ গদিচ্যুত হয়েছিলেন তীব্র গণআন্দোলনে। কিন্তু সেই গণআন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল সেই সময়ের দুরন্ত কবিদের আগুন-কবিতাগুলো।
সেই সময়ের আলোচিত অনেক কবিতা ছিল। তারমধ্যে অন্যতম হল কবি মোহাম্মদ রফিকের ‘খোলা কবিতা’ নামের একটি কবিতা। যে কবিতাটি তখন গোপনে হটকেকের মতো বিক্রি হতো। কারণ কবিতাটি নিষিদ্ধ করিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। কবিতাটি এতোই আলোচিত যে এর কয়েকটি লাইন এখনো প্রসঙ্গক্রমে নানাজন মুখস্ত বলে দেন ক্ষোভ প্রকাশে। কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি এরকম: ‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই, দাঁতাল শুয়োর এসে রাজাসনে বসবেই।’
এই কবিতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আচমকা প্রশ্নের মুখেও পড়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। বাসসের সেই সময়ের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন এক সংবাদ সম্মেলেনে এরশাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনি ক্ষমতায় আসার আগে কেউ জানতো না আপনি একজন কবি। এখন সব পত্রিকার প্রথম পাতায় আপনার কবিতা ছাপা হয়। পত্রিকার প্রথম পাতা তো খবরের জন্য, কবিতার জন্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানেরও তো এই ভাগ্য হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপানোর জন্য কি কোনো নির্দেশ জারি করা হয়েছে?’
এই প্রশ্ন শুনে একজন প্রবল ক্ষমতাধর সামরিক শাসক সেদিন একেবারে চুপসে গিয়েছিলেন। গোটা সংবাদ সম্মেলনই তখন হতচকিত। কারণ এমন প্রশ্নের জন্য এরশাদ আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না। প্রতাপশালী একজন সামরিক শাসককে এমন এক প্রশ্ন করে সেদিন জাহাঙ্গীর হোসেন কার্যতঃ বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সাহসী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে