শিরোনাম
◈ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর টি-টোয়েন্টি খেলবেন না ◈ শাহজালালে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ হচ্ছে, স্বল্পমূল্যে মিলবে খাবার  ◈ পদত্যাগ করলেন চেয়ারম্যানসহ পিএসসির অন্য সদস্যরা ◈ ৪ মামলায় জামিন পেলেন সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ◈ মোহাম্মদ আশরাফুল বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের কোচ ! ◈ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন জন হোপফিল্ড ও জিওফ্রে হিন্টন ◈ জাতীয় পার্টিকে সংলাপে চায় না সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিস ◈ হিন্দু সম্প্রদায়ের  নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ  বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : মাহফুজ আলম ◈ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সুখবর দিলেন ইতালি ভিসাপ্রত্যাশীদের  ◈ দলের দায়িত্ব কাকে দেবেন? কোথায় যাবেন শেখ হাসিনা?

প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০২:৫৩ দুপুর
আপডেট : ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. ইউনূসের ভাবনা আজ আমাদের আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজন : এন আর নারায়ন মূর্তির লেখা

গত অর্ধশতাব্দী ধরে দক্ষিণ এশিয়াসহ তার আশপাশের অঞ্চলের উদ্যেক্তারাই ব্যবসার মূল উৎস। আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের অবদানের ওপর নির্ভরশীলতা কম নয়। ভারত ও এর বাইরে সরকারি উদ্দীপ্ত নীতিগুলো তাদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করছে এবং তাদের অবদান বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমাজে উপকৃত করছে। এই উদ্যেক্তাদের অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভজনক ব্যবসার বিস্তার ঘটাচ্ছে, যার ফলে অন্যরা সম্পদের মালিক হতে পারছে এবং সমাজে উদ্যেক্তাদের এই প্রতিভা ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করছে।

এই উদ্যেক্তারা বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে যা সৃজনশীল উপায়ে সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী প্রভাব বিস্তার লাভ করছে। তাদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু লাভজনক আবার কিছু অ-লাভজনক। এছাড়া বেশ কিছু হাইব্রিড প্রকৃতির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব উদ্যেক্তাদের যে বিষয়টিতে মিল রয়েছে তা হল সমাজের দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা, অসুস্থতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলোর বিষয়ে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা অভিন্ন। তাদের এই চিন্তা প্রকৃতপক্ষে সমগ্র জাতির পরিবর্তনের জন্য পুঁজিবাজার, প্রযুক্তি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে।

উদ্যেক্তাদের মধ্যে এই অঞ্চলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশের একমাত্র অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যিনি গত শতকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

কিন্তু তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অন্তত কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তার তৈরি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই বিশ্বমানের। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোটা পৃথিবীর কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। সামাজিক উন্নয়নে তিনি যে মডেল তৈরি করেছেন তা এখন বিশ্বব্যাপী চর্চিত হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ এখন রীতিমতো গবেষণা করছেন। তার তৈরি মডেলগুলো ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, কেনিয়া এবং ভারতের মতো বৈচিত্রময় অঞ্চলেও চর্চিত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের একটি প্রজন্মের চিন্তাভাবনা ও কাজের ওপর তার প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

অবশ্যই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। সমাজের দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশ ভূমিকা রয়েছে এই ব্যাংকটির। বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে আজ আমরা ক্ষুদ্রঋণের ধারণা সম্পর্কে জানি। কিন্তু যতক্ষণ না ড. ইউনূস আমাদের দেখিয়েছেন যে, কীভাবে এই ধারণা সমাজে ব্যাপক আকারে প্রয়োগ করা যায়, ততক্ষণ আমাদের কাছে এই ক্ষুদ্রঋণের ধারণা অযৌক্তিই বলে মনে হয়েছিল। এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণা দিয়ে তিনি এমন কিছু করেছেন যা এক সময় আমাদের কাছে অচিন্তনীয় বিষয় ছিল। গ্রামীণ ব্যাংককে প্রথম দিন থেকেই বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে ইউনূসের ভূমিকা ছিল অনন্য। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি নতুন একটি রূপ পেয়েছে। তার নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক সফলভাবে প্রমাণ করেছে যে একটি ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান একটি কার্যকর ব্যবসা হতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংকের দেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারের হার ৯৬ শতাংশের বেশি ছিল, যদিও ব্যাংকটির ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো জামানত গ্রহণ করেনা। 

কিন্তু অনেকেই জানে না যে, ড. ইউনূসের কাজ ক্ষুদ্রঋণকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত দুই দশক ধরে, তিনি প্রথম উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য একটি মডেল তৈরি করেছেন যাকে তিনি ‘সামাজিক ব্যবসা’ বলে অভিহিত করেছেন। পরে এর মাধ্যমে তিনি কয়েক ডজন সংস্থা তৈরি করেছেন যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ এবং খেলাধুলা খাতে ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে সমাজের উন্নতিতে বেশ ভূমিকা রাখবে। অবিশ্বাস্যভাবে, ৮৪ বছর বয়সে তিনি আগের মতোই গতিশীল রয়ে গেছেন। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে তার চিন্তা পৌঁছে দিতে সারা বিশ্ব ভ্রমণ করছেন।

আজকের অস্থির বিশ্বে, আমাদের ইউনূস এবং তার ধারণার প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি। তার চিন্তা ভারত সহ ছোট ও স্বল্পন্নোত দেশ এবং অঞ্চলে বেশ কার্যকরী। এই মিশনে ইউনূসকে সমর্থন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তাকে তার ধারণা এবং শক্তিকে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং একাডেমিতে কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে। যেন তিনি যা করতে চান তা সর্বাধিকভাবে করতে পারেন। আমার অদম্য আশা যে কোনো মুক্ত সমাজ ড. ইউনূসের অসাধারণ কাজ থেকে উপকৃত হওয়ার আশা করবে এবং তারা তাকে তার মহান কাজটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে দেবে।

ব্যবসায়ীরা প্রায়শই কীভাবে সমাজে বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি হবে সে সম্পর্কে কথা বলেন। এছাড়া সামাজিক উদ্যোক্তারাও এই বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। এ বিষয়ে ভারতে একটি এজেন্ডা তৈরি করতে হবে যার মাধ্যমে দেশের বাইরের সামাজিক ব্যবসা, বিনিয়োগ, সামাজিক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং এর মতো বিষয়গুলিকে উৎসাহিত হয়। এক্ষেত্রে ইউনূসের মতো নেতাদের সৃজনশীল দক্ষতাকে উৎসাহিত এবং সমর্থন করার বিকল্প নেই।

যেমন অ্যাকশন ফর ইন্ডিয়া যা সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে আগ্রহী। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে ড. ইউনূসের প্রভাব সবার নজর কেড়েছে। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, এবারের অলিম্পিক ফ্রান্সের গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে যাতে গেমগুলি শেষ হয়ে গেলে, আবাসন এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নিম্ন আয়ের প্যারিসবাসী সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যবাহার করতে পারে। আয়োজকরা তার ধারণা গ্রহণ করেছেন এবং তাকে তাদের সম্মানিত অতিথি এবং অংশীদারদের একজন বানিয়েছেন।

সূত্র- দ্য প্রিন্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়