ড. মোহম্মদ ফজলে আলী: [২] গত ২৩ মে, ২০২৪ এ ১৪ দলের সংগে বৈঠকে বিশ্বের একটি অন্যতম পরাশক্তি বাংলাদেশ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ এবং বাংলাদেশের একটি অংশ ভাগ করে তার সাথে মিয়ানমারের অংশ যোগ করে নতুন একটি খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের রাষ্ট্র গঠনের ষড়যন্ত্র করার যে পরিকল্পনা করছে তা প্রকাশ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একজন অসাধারণ অনন্য সাহসী ও দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জানাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
[৩] বঙ্গবন্ধুকে যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনীর সরকার দ্বারা ফাঁসির আদেশ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে নিজেদের ইচ্ছা পূরন করতে পারে নি। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তার জন্য আর সারা বিশ্বের গনতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষের জন্য তারা এ জগন্য কাজে ব্যার্থ হয়।
[৪] সে জন্য তারা পাক হানাদার বাহিনীকে সমর্থন যোগিয়ে এবং অস্ত্র সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। তারা বর্বর পাক হানাদার বাহিনীর মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করে গড়ে তুলেছে কয়েকটি স্বসস্ত্র বাহিনী ও সামাজিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য সংগে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী দল সহ আরো কয়েকটি দলকে। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্বকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় মনবল বঙ্গবন্ধুর প্রতি সারা দেশের মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন, মহান ভারতের মহিয়সী প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার ও আপামর জনগনের সমর্থন, তাঁর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রঞ্জা এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অকুন্ঠ সমর্থনে সেই পরাশক্তিধর আমেরিকাকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। এসবই আজ ইতিহাসের অংশ।
[৫] অত্যন্ত দু:খের সাথে উল্লেখ করতে হয়, সেই ব্যর্থতা মেনে নিতে আমেরিকা পারে নি, সে জন্যই ১৯৭৪ এ তারা বঙ্গবন্ধুকে জনগনের মন থেকে সরাবার জন্য কৃত্রিম উপায়ে বাংলাদেশে একটি দূর্ভীক্ষ সৃষ্টি করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন মুক্তিযোদ্বাদের একটি অংশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়ে যায় এবং তাদের দ্বারা প্রচন্ড অপপ্রচারের মাধ্যমে আরো একটি কৃত্রিম রাজনৈতিক সংকট তৈরী করে। সবই করেছিল বঙ্গবন্ধুকে তার প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য। তাতে তারা অনেকটা সফল হয়েই একটি সামরিক অভূথ্যান সংগঠিত করে নারকীয় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকলকে জগন্যভাবে হত্যা করে। যা ইতিহাসে বিরলতম।
[৬] সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কোন দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু ইতিহাস তো কাউকে ক্ষমা করে না। মহান আল্লাহ তায়ালার কৃপায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা সে সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। তাদেরকে হত্যা করার চেষ্টাও কম কর হয় নি। এসবই আজ ইতিহাসের স্বাক্ষী। বাংগালীর অহংকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে এসে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ এর সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সুদীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে একত্রিত করে গনতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিক পথে নিয়ে আসার প্রানান্ত চেষ্টা করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তো থেমে থাকে নি। শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে নিশ্চিতভাবে একই সংগে হত্যা করার জন্য দিনের বেলায় জনসভা চলাকালীন মঞ্চে আর্জেজ গ্রেনেড ছুড়ে ২১ শে আগষ্টে নারকীয় তান্ডব ঘটায়। মহান আল্লাহ তায়ালার একান্ত ইচ্ছায় শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবারও আহত হলেও প্রানে বেঁচে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী মৃত্যু বরন করেন ও আহত হন। দেশের ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ হতবাক হয়ে পড়ে। দেশের মানুষের দোয়ায় শেখ হাসিনা ২০০৮ এ গনতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কঠোর পরিশ্রম, অসীম সাহসীকতা ও বিরল নেতৃত্বের গুনাবলীতে সকল বাঁধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে সেই আমেরিকার দুষ্ট ব্যক্তি হেনরি কিসিঞ্জারকে বলতে বাধ্য করেছেন যে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ একটি বটমলেস বাস্কেট অর্থাৎ তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই পাকিস্তানই আজ বাংলাদেশের মত উন্নত হতে তাদের এক যুগের বেশী সময় লাগবে বলে স্বীকার করছে। সমস্যা কেবল আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির লোকজন, তারা সব উন্নয়নের সুযোগ ভোগ করবেন আর বিদেশি শক্তির সাথে স্বক্রিয় থেকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে শেষ করে পরাশক্তির ইচ্ছা পূরন করবেন অর্থাৎ আমাদের প্রানপ্রিয় মাতৃভূমির নিরাপত্তা বিনষ্ট করে আমাদেরকে একটি পরাধীন জাতি ও দেশে পরিনত করতে চাচ্ছে। আমাদের বঙ্গোপসাগরে আমেরিকাকে সামরিক ঘাঁটি গড়তে দিলে এবং আমাদের দেশের একটি অংশ মানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গেলে আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে এবং দুই লক্ষের বেশী মা, বোনের সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা তো হারিয়ে যাবে। আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানের গোলামী ও পরাধীনতা থেকে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা চিনিয়ে এনেছি এবং অর্জন করেছি, সে স্বাধীনতা আবার আমরা আমরিকার নিকট বিলিয়ে দিয়ে কত শত বছর গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ব হওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছি।
[৭] আমাদের মনে রাখতে হবে গোলাম আজমের প্রেতাত্মা ও খোন্দকার মোসতাক এর প্রেতাত্মারা খুবই তৎপর। আজ যখন আমাদের অহংকার, অতি সাহসী এবং বর্তমান বিশ্বের অন্যতম নন্দিত ও গ্রহণযোগ্য সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন একটি অন্যতম পরাশক্তি প্রানন্ত চেষ্টা করছে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য। তখন আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের কথা মনে করে ভাবতে হবে আমরা ১৯৭১ এ পরাশক্তিধর দেশের সকল অপচেষ্টাকে ব্যার্থ করতে পেরেছি। আজ আমরা জাতি হিসেবে একটি গর্বিত জাতি। একই সংগে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং উন্নত দেশ ও জাতি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আজও অনেকে বেঁচে আছেন। আছে তাদের লড়াকু সন্তানেরা, আছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দেশপ্রেমিক অসংখ্য মানুষ ও অনেক রাজনৈতিক দলও। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ পড়ন্ত বয়সে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে বলবো স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি অংশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যেভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চলে গিয়ে দেশের সর্বনাশ করেছে, ঠিক সে কারনে না হলেও সাময়িকভাবে সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না পাওয়ায় অভিমান করে নিস্ক্রিয় না থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয়ভাবে ঐক্য গড়ে তুলে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনাদের মূল্যায়ন করবেনই।
[৮] আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধারা এখনও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ডাকে আবারো যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে জীবন দিতে প্রস্তুত। বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে আমাদের প্রানপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী একজন অসাধারণ দূরদর্শী সফল প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি এ সময়কার একজন অসাধারণ সাহসী ও অভীঞ্জ কূটনীতিকও। বর্তমান বিশ্বে পরাশক্তি সমূহের এবংআঞ্চলিক পরাশক্তি সমূহের মধ্যে ভূরাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার জন্য যে যুদ্ধ তীব্রভাবে চলছে এবং আরো বেশ কিছু দিন চলবে। আগামী বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের জন্য, যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হতে বাদ্য। এশিয়ার ঘোষীত পরাশক্তি চিন, রাসিয়া হলেও বর্তমানে বৃহৎ গনতান্ত্রিক ভারত অবশ্যই একটি পরাশক্তিধর দেশ। ভারত সম্প্রতি এক প্রসঙ্গে আমেরিকাকে বলতে বাদ্য হয়েছে আমেরিকা এখন আগের অবস্থানে নেই তাই সেভাবে আচরন করতে হবে। ১৯৭৫ এর ভারত আর আজকের ভারতের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এক নয়। রাসিয়া ও চিনের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত তলানিতে।
[৯] এমতাবস্থায় আমাদের কূটনৈতিক কাজে জড়িত কর্মকর্তাদের অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তৎপর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। বিশ্ব ব্যবসৃহাপনায় একক কতৃত্ব বজায় রাখা আর একক কতৃত্বকে পরিবর্তনের জন্য ভূরাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করার যে যুদ্ধ চলমান রয়েছে এতে আমেরিকার পরাজয় নিশ্চিত। আমাদের প্রয়োজন শুধু জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং এ অঞ্চলের পরাশক্তি, যারা আমাদের পরিক্ষিত বন্ধু তাদের সাথে সখ্যতা অটুট রাখা। কারণ ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আমাদের সকলেরই অভীন্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার অসাধারণ সাহস, দেশপ্রেম ও সময়োচিত পরাশক্তির ষড়যন্ত্রের কথা জাতির নিকট প্রকাশ করায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনাকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এ জাতি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মত আপনাকেও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
লেখক: বীরমুক্তিযোদ্বা
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ভারত সম্প্রীতি পরিষদ।