ফয়জুল লতিফ চৌধুরী: ২০০২ সালের শুরুর দিকে কে একজন বললো কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহির একজন সরকারি কর্মকর্তা। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের একজন সদস্য। কোথায় থাকেন সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও এইটুকু জানা গেলো তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক। কয়েকমাস পর সুযোগ হলো দেখা করার। তার অফিস রুমে গিয়ে দেখি তিনি উদাস হয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং তার অফসেট প্রিন্টারে কিছু একটা ছাপা চলছে। প্রফেশনাল কোয়ালিটির প্রিন্টার অনবরত ছেপে যাচ্ছে। ছেপে যাচ্ছে। কৌতূহল হলো। কিছুক্ষণ পরপর তার সহকারী এসে কাগজের ট্রে ভরে দিয়ে যাচ্ছে। ছাপা কাগজ স্ট্যাক করে রাখছে।
শহীদুল জহির ভাই কথা বলেন কম। আমিও। তাতে সমস্যা হয় না। চা এবং সিঙ্গাড়ার জন্য বললেন। শহীদুল ভাই, আপনার প্রিন্টার কেবল কর্মক্ষম না, নিরলসও বটে। শহীদুল জহির ভাই বেশ একগাল হাসলেন। হাসলে তার গাল দুদিকে ফুলে যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোনো লম্বা ডকুমেণ্ট? না। চিঠি। শত শত চিঠি। একই চিঠি? আমি সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রিন্টারের কাছে গিয়ে এক প্রস্থ চিঠি নিয়ে এলেন। আর সামনে থাকা এক তাড়া কাগজ আমার দিকে ঠেলে দিলেন। চিঠির প্রাপক ‘শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক‘ এবং লেখক মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী। যাকে বলে ডিও লেটার বা আধাদাপ্তরিক চিঠি। চিঠির বক্তব্য হচ্ছে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়েছে, এখনই গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। দশটি গাছ লাগলে একটি টিকবে এই হিসাবে প্রধানশিক্ষক মহোদয় যেন অন্তত একহাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
সরকারের বন বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে গাছের চারা পাওয়া যাবে। এক তাড়া কাগজ তিনি এগিয়ে দিয়েছিলেন। দুই শতাধিক পৃষ্ঠা হবে। সেটিতে অসংখ্য স্কুলের ঠিকানা টাইপ করা। শহীদুল জহির ভাই ইউএনওদের চিঠি লিখে ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। আরো ঠিকানা আসবে। জিজ্ঞেস করি, এই সব চিঠিতে কাজ হয়? হয়। গ্রামের প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে চিঠি যাওয়াটা বিরাট ব্যাপার। শহীদুল ভাই ফাইল খুলে আরেকটি চিঠি দেখালেন। সব জেলা প্রশাসক, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে লেখা চিঠি। বক্তব্য, দুই মাস আগে একটি চিঠিতে বনৌষধি উদ্ভিদের বাগান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। তা কী ইতিমধ্যে করা হয়েছে? গাছকাটা ও লাগানো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে দু সপ্তাহ যাবৎ। সেই সুবাদে ঘটনাটি মনে পড়লো। ২৭.৪.২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :