শিরোনাম
◈ পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে, জনবল বাড়ানোর তাগিদ  ◈ কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার পরামর্শ দূতাবাসের ◈ কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: সাহায্য চাইলেন বাংলাদেশিরা  ◈ সংসদ ভবন এলাকায় দুই প‌ক্ষে‌র সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত ◈ আবারও বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১১৮৪৬০ টাকা ◈ ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে: এডিটরস গিল্ড ◈ দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ যুক্তরাষ্ট্র স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে ৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে ◈ সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারে দাম কমবে: সাঈদ খোকন ◈ নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত

প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৪৯ রাত
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেয়ালের দেশ : সচেতন যত্ন ও মুন্সিয়ানার ছাপ পাওয়া যায় পুরো চলচ্চিত্রে

আউয়াল চৌধুরী

আউয়াল চৌধুরী : শুরুর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। মর্গে সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশ এলো। আজ আর পোস্টমর্টেম হবে না। সময় নেই। আগামীকাল হবে। মর্গের বক্সে লাশ ঢোকানো হলো। শরিফুল রাজ নির্বিকার। সবাই চলে গেলে মর্গের দরোজা বন্ধ করে দিয়ে সে সিগারেট/গাঁজা ধরালো। লাশ আসা যাওয়া নিত্যকার ঘটনা, তাই এসব স্বাভাবিক তার কাছে। হঠাৎ চকিতে মগজে খোঁচা দিলো একটি শট। লাশ রাখার সময় সাদা চাদরের আড়াল সরিয়ে মেয়েটির একটি হাত বেরিয়েছিল। সেই হাতের আঙুলে আংটি, যেটি রাজের চেনা। শঙ্কা, অব্যক্ত বিস্ময় এবং ভীতিকর কষ্ট নিয়ে সে এগিয়ে বক্স টেনে বের করলো। লাশের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। বুবলীর মুখ! তার নিকট অতীতের প্রিয় মুখ। প্রিয়তমা। 

এ পর্যন্ত ঠিকঠাক। এরপর যা ঘটলো পুরো মুভিতে সেটা কি ফ্যান্টাসি? বাস্তবতাবর্জিত ঘটনার উপস্থাপন? আমি তা মনে করি না। বরং পুরো মুভিতে যা দৃশ্যমান হলো তাতে আমি বাস্তবতা খুঁজে না পেলেও খুঁজে পেয়েছি পরাবাস্তব। সস্তা সেন্টিমেন্টের ভেজাল গল্প বা বস্তাপচা গল্পের বদলে এমন ধরনের কাহিনিচিত্র, যেখানে মানুষ তার ক্লেদাক্ত জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে চায়। একজন বাস্তবের মানুষ যখন বাস্তবে থেকে অবাস্তব বা পরাবাস্তব চিন্তা করে তখন সেটি আর অবাস্তব থাকে না। কারণ এটি বাস্তব মানুষের অনুষঙ্গ হয়ে যায় তখন। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, ইচ্ছা, সাধ, আহ্লাদ মানুষ স্বপ্নে পূরণ করতে সচেষ্ট বেশি। তাই এই অসম্ভব-বাস্তবতা, এই পরাবাস্তবতা কখনও মিথ্যা নয়। এটিও বাস্তবের মতো সত্য, আমরা এটাকে সত্য স্বপ্ন বলতে পারি।

শিল্প সে কথাই বলতে চায় বিভিন্ন আঙ্গিকে। আমার ধারণা নির্মাতা মিশুক মনি সেটাই বলতে বা করতে চেয়েছেন। কাহিনিচিত্রের ডিটেলে যাব না তাহলে স্পয়লার হয়ে যাবে। শরিফুল রাজের আইসক্রিম, ন ডরাই, গুণীন, পরাণ বেশকিছু মুভি দেখা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে তথাকথিত হিরোর ইমেজ ভেঙে অনেক আগেই তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। তবে  এই প্রথম শরিফুল রাজকে খুঁজে পেয়েছি যিনি পরিমিতিবোধ নিয়ে রিয়ালিস্টিক ফর্মে পুরো মুভিতে পারফর্ম করে গেছেন। অতি অভিনয়ের প্রচুর সুযোগ ছিলো যা তাকে প্রলুব্ধ করেনি। বুবলীর কোনো মুভি এর আগে দেখা হয়নি। একটা ওয়েভ মুভি দেখেছিলাম যেখানে তাকে তথাকথিত বাণিজ্যক ঘরানার নায়িকা ছাড়া আলাদা কিছু মনে হয়নি। কিন্তু দেয়ালের দেশে বুবলী সেই ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে একজন অভিনয় শিল্পীর দক্ষতা দেখিয়েছেন, যা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে লাশের চরিত্রে অভিনয়ের সময় দীর্ঘক্ষণ চোখের পলক না ফেলা, নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আটকে নির্বিকার অভিব্যক্তি ধরে রাখা, হঠাৎ মাথা কাত হয়ে যাওয়া, হাতটা হেলে পড়া এসব ডিটেলের কাজগুলো ছিলো খুবই বিশ্বাসযোগ্য। 

সিঙ্গেল ট্র্যাকের গল্প হলেও নন-লিনিয়ার চিত্রনাট্য গল্পে বৈচিত্র এনেছে। না হলে হয়তো দর্শক একঘেয়েমিতে ভুগতো। অন্যান্য চরিত্রে সবাই বিশ্বাসযোগ্য বাস্তব অভিনয় করেছেন। যদিও প্যারালাল স্টোরি লাইনে শাহাদাৎ হোসেনের মতো শক্তিমান অভিনয় শিল্পীকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতো। পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে সমাপ্তি মাশুক স্মার্ট অভিনয় করেছেন। আরেকটি বিষয় না বললে পেটের মধ্যে ভুটভাট করবে। বুবলীর মৃত্যু, পোস্টমর্টেম সময়গুলোতে তার পরিবার, বিশেষ করে মমতাময়ী মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করেছি। 

এসব তো গেলো পর্দায় যা দেখেছি তার কথা। কিন্তু পর্দার নেপথ্যের কুশলীদের কথা যদি বলতে হয় তবে প্রথমেই বলবো চলচ্চিত্র সম্পাদক সিমিত রায় অন্তরের কথা। পুরো চলচ্চিত্রটিকে গতিশীল করতে উনার দক্ষতার ছাপ পাওয়া গেছে। প্রতিটি এডিট পয়েন্ট এতো স্মুথ ছিলো যে টের পাওয়া যায়নি কীভাবে শট থেকে শট, দৃশ্য থেকে দৃশ্য এগোচ্ছে। ধন্যবাদ সিমিত রায়কে। দেয়ালের দেশ চলচ্চিত্রে মেধার পাশাপাশি প্রচুর সময় যে দিয়েছেন তার সুফল পর্দায় পাওয়া যায়। সিনেমাটোগ্রাফি চমৎকার। বিশেষকরে দিনের দৃশ্যগুলোতেও আলোছায়ার ব্যবহার প্রশংসার দাবি রাখে। কালার গ্রেডিং মুভির মেজাজ অনুযায়ী ভালো। আবহসঙ্গীতে পরিমিতিবোধের ছাপ আছে। তবে শব্দ ব্যবহারে কিছু কিছু দৃশ্যে স্টক সাউন্ড/ফলির লেভেল আমার কানে লেগেছে। 

আগের সেই রিপন নাথকে খুঁজে পাইনি। চরিত্র সংখ্যা কম হলেও প্রচুর লোকেশন। নির্মাতা এবং প্রডাকশন টিমকে যে ম্যালা হ্যাপা পোহাতে হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্মাতা মিশুক মনিকে অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে এইজন্য যে, অনুদানের টাকার সাথে নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করে গড্ডালিকা প্রবাহে যুক্ত না হয়ে নিজের মতো করে ভিন্ন মেজাজের গল্প বলতে চেয়েছেন রূপালি পর্দায়। সচেতন যত্ন এবং মুন্সিয়ানার ছাপ পাওয়া যায় পুরো চলচ্চিত্রে। আপনার এই ধারা অব্যহত থাকুক। দর্শকদের জন্য বলতে চাই। দেয়ালের দেশ আমার ভালো লেগেছে। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে। গড্ডালিকা প্রবাহে ডুব সাঁতার কাটার চেয়ে ভিন্ন স্বাদের আমেজ দেবে। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র আমরাই তো দেখবো। জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্রের। ১৯-৪-২৪। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়