মোস্তফা ইংলিশ হোম : বঙ্কিমচন্দ্রের বিবাহ হলো। পাত্রীর নাম মোহিনী। বালিকাবধূ। শ্বশুর বাড়ি কাঁটালপাড়া থেকে হাঁটা দূরত্বে। অসামান্যা রূপসী ছিলো মোহিনী। তেমনি নরম মনের মেয়ে। বঙ্কিম মোহিনীকে চোখে চোখে হারাতেন। বঙ্কিম কিছু লিখলে প্রথম পড়ে শোনাতেন মোহিনীকে। মোহিনী যখন শ্বশুর বাড়ি থাকতো না, বঙ্কিম তখন ছটফট করতেন বিরহের জ্বালায়। প্রায়ই বাড়ির লোককে লুকিয়ে পায়ে হেঁটে মোহিনীর সঙ্গে দেখা করতে শ্বশুরবাড়ি চলে যেতেন। বঙ্কিম খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বঙ্কিম ছাত্র অবস্থায় পড়ার সময় বৃত্তি পেতেন।
একবার বৃত্তির টাকায় তিনি গোপনে মোহিনীকে একজোড়া কানের দুল ও সোনার চুলের কাঁটা উপহার দিয়েছিলেন। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র চাকরি নিয়ে যশোরে চলে গেলেন। মোহিনীর বিরহে বঙ্কিমের মন খুব খারাপ। এ যেন কবির গানের মতো, ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে...!’ বঙ্কিম চিঠি লিখলেন মোহিনীকে, এইবার আমি তোমাকে এখানে শীঘ্রই লইয়া আসিব। চিঠি পেয়ে মোহিনী আত্মহারা। বাড়ির লোকেরাও রাজি। কিন্তু এত সুখের দিন বুঝি সইলো না। কিছুদিন পর বঙ্কিমের কাছে খবর এল মোহিনীর খুব জ্বর। বঙ্কিম খবর পেয়ে বাড়ি এলেন। কিন্তু তার আগেই মোহিনী চিরকালের জন্য চলে গেছে।
বঙ্কিমচন্দ্র আর শ্বশুরবাড়িতে গেলেন না। এমনকি এই ঘটনার অনেকদিন কেটে যাওয়ার পর কাঁটালপাড়ায় নিজের বাড়িতে আসেন নি। শুধু বাড়ি থেকে ফিরে যাওয়ার সময় দাদা সঞ্জীবচন্দ্রকে বলে গেলেন, মোহিনীকে উপহার দেওয়া কানের দুল আর চুলের কাঁটা যেন ফিরিয়ে আনেন। এরপর বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বিতীয় বিবাহ হল আর এক অপরূপা সুন্দরী, গুণী মেয়ে রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে। বঙ্কিম রাজলক্ষ্মীকে অনেক গহনা দিয়েছিলেন কিন্তু মোহিনীকে দেওয়া সেই উপহার দেননি। নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। শুধু বঙ্কিমচন্দ্র রাজলক্ষ্মী দেবীকে বলেছিলেন,‘এগুলি আমার কাছে এখন রহিল। যেদিন তোমায় ভালবাসিব, সেদিন দিব।’
এর বহুবছর পর বঙ্কিমচন্দ্র রাজলক্ষ্মীকে নিয়ে গঙ্গায় নৌকাবিহার করার সময় মোহিনীকে দেওয়া সেই উপহার এক এক করে পরিয়ে দিতে লাগলেন রাজলক্ষ্মীকে। নিজের হাতে রাজলক্ষ্মীর কানে দুল পরিয়ে দিলেন। তারপর খোঁপায় সোনার কাঁটা আটকে দিলেন। গঙ্গাবক্ষে তখন ঢেউয়ের ঝলাৎ ঝলাৎ শব্দ। মাঝি একমনে দাঁড় টেনে চলেছে। শেষ বিকেলের আলোয় গঙ্গার বুকে তখন রঙের খেলা চলছে। নৌকায় শুধু দুটি মানুষ। এক স্বপ্নিল মুহূর্ত। এত প্রেম ভালবাসা যে মানুষটির হৃদয়ে ছিল তিনিই তো সৃষ্টি করতে পারেন অমন সব রোমান্টিক উপন্যাস। তথ্যসূত্র: বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনী (যেগেশ চন্দ্র বাগল), সাহিত্য পত্রিকা, সংবাদপত্রের নিবন্ধ।
আপনার মতামত লিখুন :