জিবলু রহমান : রানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে একান্তে গল্প করতেন আবদুল করিম। সাধারণ ভৃত্য থেকে ব্রির্টিশ রানী ভিক্টোরিয়াকে উর্দু শেখানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন ভারতীয় লম্বা ও সুদর্শন তরুণ আবদুল করিম। আস্তে আস্তে করিম রানীর ঘনিষ্ঠতম এক মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। করিম রাজপরিবারে এতটাই অস্বস্তি তৈরি করেছিলেন যে রানীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তার পুত্র সপ্তম এডওয়ার্ড করিমকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই বরখাস্ত করেন। একইসঙ্গে রানী ও করিমের মধ্যকার সম্পর্কের যাবতীয় প্রমাণাদি তার ভারত ও যুক্তরাজ্যের বাড়ি গিয়ে যেন ধ্বংস করা হয় সেই নির্দেশও দেন তিনি।
১৮৬১ সালে স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর নিজের স্কটিশ ভৃত্য জন ব্রাউনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় রানী ভিক্টোরিয়ার। তবে আব্দুল করিম যে জন ব্রাউনের চেয়েও রানীর কাছের মানুষ ছিলেন তারই ইঙ্গিত মিলে আবদুল করিমের দিনলিপি বিশ্লেষণ করে ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল: দ্য ট্রু স্টোরি অব দ্য কুইনস ক্লোজেস্ট কনফিডান্ট’ গ্রন্থে। এটি প্রকাশ করেন শ্রাবণী বসু। কাজ পছন্দ না হওয়ায় চাকরি ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন করিম। কিন্তু রানীর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি থেকে যান।
রানী ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় আগ্রা থেকে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে আসেন করিম। ভারত থেকে রানীর উপহারস্বরূপ তাকে পাঠানো হয়েছিল। ততদিনে জন ব্রাউনের মৃত্যুর পর চার বছর কেটে গেছে। মাত্র এক বছরের মাথায় প্রাসাদের এক ক্ষমতাশীল ব্যক্তিতে পরিণত হন করিম। রানীর শিক্ষক বা মুন্সি হয়ে উর্দু শেখানোর পাশাপাশি ভারত সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তাকে শেখাতে শুরু করেন। রানীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি। জন ব্রাউন তার আস্থাভাজনে পরিণত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু করিমকে তিনি ভৃত্যদের চেয়েও উঁচু মর্যাদায় নিয়ে যান।
শ্রাবণী বসু জানান, করিমের যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকে শুরু করে ১৯০১ সালে রানীর মৃত্যুর মধ্যবর্তী কয়েক বছরে করিমকে লেখা চিঠিতে ‘তোমার স্নেহময়ী মা’ কিংবা ‘তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু’ লিখে স্বাক্ষর করতেন রানী। কিছুক্ষেত্রে লেখা শেষে তিনি চিঠিতে চুমু দিতেন, যা সেই সময়ে অত্যন্ত অস্বাভাবিক একটি বিষয় ছিল। ‘এটা নিঃসন্দেহেই আবেগে ভরপুর একটি সম্পর্ক ছিল। আমার ধারণা মা-ছেলের সম্পর্ক ছাড়াও তাদের সম্পর্কের বহু স্তর ছিল যা এক ভারতীয় তরুণকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী এক নারীর আপন করে তুলেছিল।’ ভিক্টোরিয়া ও করিম হাইল্যান্ড কটেজে নিরিবিলি রাত কাটাতেন। সেই একই কটেজ, যেখানে আগে ভিক্টোরিয়া ও জন ব্রাউন সময় কাটাতেন।
আবদুল ও রানী দুজন রাতভর প্রচুর গল্প করে কাটালেও তাদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল না বলেই মনে করেন শ্রাবণী বসু। প্রিন্স অ্যালবার্ট যখন মারা যান তখন ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন, আমি আমার স্বামী, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বাবা ও মাকে হারালাম। আমার মনে হয় আবদুল করিমও তার জীবনে একই ধরনের ভূমিকা পালন করেছিল। রানীর ওপর করিমের প্রভাব এতটাই বেড়ে যায় যে তিনি করিমকে উইন্ডসর ক্যাসেলে রানীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রধান শোকপালনকারীদের একজন হিসেবে নির্ধারণ করেন। শ্রাবণী বলেছেন,‘বয়স্কা রানী বিশেষভাবে এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যদিও তিনি জানতেন যে পরিবারের কাছ থেকে এরজন্য তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন।’ ১১-৪-২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :