এশরার লতিফ : জার্মান সাম্রাজ্য ভেঙে ভাইমার রিপাবলিক হয়েছে। ভাইমার রিপাবলিকের রাজধানী বার্লিন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর ভার্সাই চুক্তির পর ওয়েমার রিপাবলিক অতিমুদ্রাস্ফীতির দিকে পাগলা ঘোড়ার মতো ধেয়ে যাচ্ছে। বার্লিনে তার ছাপ পড়েছে। রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। পথচারীদের পোশাকআশাকে দারিদ্র্যের ছাপ। কদিন পরপর ধর্মঘট হচ্ছে। একদলের সাথে আরেক দলের মারামারি লেগেই আছে। কিন্তু রাজধানী শহর হিসেবে বার্লিন একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়নি। এখনও বার্লিন শিল্প আর সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে আসা বুদ্ধিজীবীরা ক্যাফেতে আড্ডা দিচ্ছে।
সিনেমা থিয়েটার, জ্যাজ ক্লাব আর ক্যাবারে এখনো ধুমসে চলছে। ল্যান্ডর ক্যানেলের কাছে একটা ছোট ক্যাফেতে এসে আগনেস এককাপ কফি অর্ডার করেছে। কেক আর কফি ছাড়া বার্লিনের বেশিরভাগ ক্যাফেতে আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। অ্যাগনেস জানালার কাছে বসে ক্যানেলের দিকে তাকিয়ে আছে। কতগুলো রঙিন পালের নৌকা জলে ভাসছে। দূর থেকে ক্ষণে ক্ষণে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। যুদ্ধের সহিংসতা ভুলে জার্মানরা আবার জীবনের স্বাভাবিক আনন্দে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ একটা ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে অ্যাগনেস ঘুরে তাকালো। আপনি নিশ্চয় অ্যাগনেস স্মিডলি? অ্যাগনেস অনুমান করে নিলো ইনিই বীরেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় মানে চ্যাটো। তবু নিশ্চিত হবার জন্য বললো, হ্যাঁ। আর আপনি চ্যাটো? চ্যাটো সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো, কতক্ষণ হলো এসেছেন? এই তো, বেশিক্ষণ না। চ্যাটো এবার চেয়ার টেনে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে বললো, ক্যানেলের ওই মাথায় লোহার ব্রিজটা দেখছেন না? হ্যাঁ, খুব সুন্দর। ওটা লিখটেনস্টেইন ব্রিজ। আজ আবার জানুয়ারির ১৫ তারিখ। কেন বললেন এ কথা? গত বছর এই দিন ওই ব্রিজ থেকে রোজাকে মাথায় গুলি করে লেকে ফেলে দিয়েছিল প্যারামিলিটারিরা।
রোজা লুক্সেমবার্গ? হ্যাঁ। রোজা বেঁচে থাকলে এতদিনে জার্মানিতে স্পার্টাকিসরা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতো। রোজার কথা বলতে বলতে চ্যাটো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। অনেকটা আপন মনেই বললো, লেনিন অপেক্ষায় ছিল জার্মানিতে আগে বিপ্লব হবে, তারপর রাশিয়ায়। কারণ জার্মানিতে পুঁজিবাদ পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। সমাজতন্ত্রের পূর্বশর্ত পুঁজিবাদের বিকাশ। তার উপর মার্ক্স নিজেই জার্মান। অথচ কী হলো, লেনিন পুঁজিবাদ ডিঙ্গিয়ে সামন্তবাদ থেকে সরাসরি বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলল। কী একটা অবস্থা। অ্যাগনেস বুঝতে পারছে এই লোক ওর মতোই অস্থির প্রকৃতির। তবে চ্যাটো বোধহয় একটা আদর্শ আর ঘোরের ভেতর বাস করে। প্রথম পরিচয়ে একটা যুবতি মেয়েকে মুগ্ধ করবার জন্য পুরুষরা যেসব মনকাড়া টুকুরটাকুর কথা বলে, এই লোক তার ধারেকাছে নেই। (নক্ষত্র-নূপুর, দ্বিতীয় খণ্ড)। ১৯.৪.২৪। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :