শিরোনাম
◈ পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে, জনবল বাড়ানোর তাগিদ  ◈ কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার পরামর্শ দূতাবাসের ◈ কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: সাহায্য চাইলেন বাংলাদেশিরা  ◈ সংসদ ভবন এলাকায় দুই প‌ক্ষে‌র সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত ◈ আবারও বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১১৮৪৬০ টাকা ◈ ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে: এডিটরস গিল্ড ◈ দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ যুক্তরাষ্ট্র স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে ৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে ◈ সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারে দাম কমবে: সাঈদ খোকন ◈ নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত

প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৪৭ রাত
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৪৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেন কট্টর ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন মালদ্বীপের মুইজ্জু সরকার?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা 

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় নিজের শক্ত অবস্থার জানান দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মেহাম্মদ মুইজ্জু। তার দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) ৯৩ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে ৬৬টি আসন পেয়েছে। মোহাম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ভারতের প্রভাব কমাতে চান তার দলের এ জয়কে সুপার-মেজরিটি হিসেবে বর্ণণা করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদে দুই তৃতীয়াংশ আসন থাকা প্রয়োজন এবং এ নির্বাচনের মাধ্যমে মুইজ্জুর দল তা অর্জন করেছে।

মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় এসেছিলেন গত বছরের শেষ দিকে নির্বাচনে তার প্রধান প্রচারণা ছিলো ভারত আউট। প্রেসিডেন্ট পদ আসীন হবার পর দিল্লি সফরে যাননি তিনি এবং তার ভারত আউট প্রচারণা বিপুলভাবে সফল হয়েছেন। মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাদের দেশে ফেরত পাঠানেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি, সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা অনুযায়ী চলতি বছরের ১০ মে মাসেই মালদ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার কথা ভারতীয় সেনাদের। বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা পেতে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের দিন মোহাম্মদ মুইজ্জু বলেন, ১০ মে থেকে মালদ্বীপে কোনো ভারতীয় সেনা থাকবে না এবং বেসামরিক পোশাকেও নয়।

কট্টর ভারত বিরোধিতা করেই রাজনীতি করছেন মোহাম্মদ মুইজ্জু এবং তার প্রতি জনগণের তীব্র সমর্থন আছে নির্বাচনে তা প্রমাণিত হলো। কিন্তু মালদ্বীপের ভেতরে কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি দল মুইজ্জুর ভারত বিরোধিতার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করছে। ভারতের বিরুদ্ধে একগুঁয়েমি বন্ধ করতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালেহ একইসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে প্রতিবেশির সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইন্ডিয়া আউট স্লোগান দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালেহকে পরাজিত করেন ৪৫ বছরের মোহাম্মদ মুইজ্জু। ভারত সম্ভবত নিজের পরিস্থিতি নিজে বুঝতে পারছে যে এভাবে প্রভাব বিস্তার করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা দুষ্কর। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয় শংকর মালদ্বীপের বর্তমান সরকারের ভারত বিরোধিতা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, সব দেশ সবসময়  ভারতের সঙ্গে একমত হবে, সমর্থন করবে এমন কোনো গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।

ভারতীয়দের অনেকই সমালোচনায় করছেন যে, মালদ্বীপ অতি চীননির্ভর। ভারতীয় কূটনৈতিকদের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে চীনের ঋণ শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলেছিলো। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বিশটি চুক্তি করেছে মালদ্বীপ উন্নয়ন ও অবকাঠামোর জন্য আরো ঋণ করেছে মালদ্বীপ ফলে ক্রমেই চীনের কাছ হাত-পা বাঁধা হয়ে যাচ্ছে। ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মালদ্বীপের তিনজন মন্ত্রী বেশকিছু কুমন্তব্য করা হয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ তিন মন্ত্রীকে মালদ্বীপ সরকার বরখাস্ত করে দেন। মোহাম্মদ মুইজ্জ চান মালদ্বীপ থেকে ভারতের ছায়া দূর করতে তার এ ভারত বিরোধিতা নীতিকে অনেকেই মালদ্বীপের অনেকেই বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন, ভারতের ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে নতুন বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করছেন মুইজ্জু এবং রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার একটি নমুনা হয়ে রইলো। মোহাম্মদ মুইজ্জু যে নীতি নিয়ে রাজনীতিতে নেমেছেন তা একবোরেই হালকাভাবে দেখা বোকামি এবং অনেকেই মনে করেন ভারতবিরোধী মনোভাব তাঁকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ধরে রাখতে সাহায্য করবে। 

ভোটে জয়ী হবার পর থেকে ভারতকে যে চাপে রেখেছিলো এখনো তা বজায় রেখেছেন। মালদ্বীপের সব প্রধানমন্ত্রীরা শপথ নেওয়ার পর ভারত সফরে গিয়েছিলেন কিন্তু মোহাম্মদ মুইজ্জু এ প্রথা ভেঙে তুরস্ক সফরে যান। তুরস্ক ভারতরে কাছে গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্র নয়। কারণ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলো তুরস্ক। ভারত মনে করে যে, মুইজ্জুর ইন্ডিয়া আউট নীতিতে চীনের উস্কানি আছে। ভারতের প্রতি বৈরিতা দেখিয়ে চীনের সঙ্গে কৌশলগত সর্ম্পক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে মালদ্বীপ সরকার। চীনের আগ্রহ থাকার কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে। মালদ্বীপের দ্বীপগুলো ব্যস্ততম সামদ্রিক বাণ্যিজিক পথের ওপরে অবস্থিত যে পথ দিয়ে চীনের প্রায় ৮০ শতাংশ তেল আমদানি হয়। 

ভারতীয় কূটনৈতিকরা বলছেন, ভারত-মালদ্বীপ বির্তকে আগ বাড়িয়ে খেলতে চাইছে চীন মালদ্বীপে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়ে উঠেছে বেইজিং। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের নাগরিকদের একাংশ মালদ্বীপ বয়কটে ডাক দিয়েছেন। কারণ মালদ্বীপে পর্যটকদের বিরাট অংশ ভারত। ভবিষ্যতে সামরিক এবং বেসামরিক অবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে নির্মাণ হচ্ছে বিমান বন্দর। মালদ্বীপ ক্রমেই ভারতের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, যা ভারতের জন্য চিন্তার বিষয়। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আধিপত্য মোকাবেলায় তৎপর রয়েছে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া স্কোয়াড তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, কিন্তু তার আগে সমুদ্র পথে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে তার অন্যতম কারণ হলো মালদ্বীপের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একজন চীনপন্থী ব্যক্তি। পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক। সূত্র: সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার ফেসবুক পেজের ভিডিও কন্টেন্ট থেকে  শ্রুতিলিখন করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়