শামসুদ্দিন পেয়ারা: সব উৎসব সবার নয়। ঈদুল ফিতর বাঙালির কোনো জাতীয় উৎসব নয়, এটা বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর মুসলমানদের একটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় উৎসব, হিন্দুরা এটা পালন করবে কোন দুঃখে? তা তারা বাঙালিই হোক কি কাশ্মিরী-ই হোক। হিন্দুরা কি বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করে? আল্লাহু আকবর বলে শেষ করে? করে না। একইভাবে, দুর্গাপূজা হচ্ছে হিন্দুদের একটি অতি বড় ধর্মীয় উৎসব, মুসলমানরা ওটা কেন পালন করতে যাবে? মা দূর্গা কি মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে পড়েন। মুসলমান কি ওঁ নমঃশিবায় দিয়ে শুরু করে?দূর্গা মাই কি জয় বলে শেষ করে?
ইদ বা পুজা কোনটাই আমাদের জাতীয় উৎসব নয় - দুটোই যথাক্রমে মুসলমান ও হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব। সর্বজনীন উৎসব নয়। মানে সবাই তাতে অংশগ্রহণ করেন না। করার কথাও না।
তবুও, শিশুরা যেহেতু ধর্মীয় বিভাগ ও বিরোধে জড়িত নয়, তাই তারা দুটোকেই উৎসব মনে করে। ইদের দিন হিন্দু -বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ছেলে-মেয়েরা তাদের মুসলিম বন্ধু ও প্রতিবেশীদের বাড়ি যায়, সেমাই জর্দা পোলাও খেয়ে খুশি হয়। একইভাবে দূর্গা পূজার ঢাকে কাঠি পড়লেই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে শিশু মাত্রেরই মনের ঢাক বাজতে শুরু করে। মুসলমান শিশুরাও বাবা-চাচার কাঁধে চড়ে প্রতিমা দেখতে আসে। স্কুলগামীরা দল বেঁধে পুজো দেখতে যায়। দেখে আনন্দ পায়। মুসলিম ছেলেমেয়েরা হিন্দু বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে প্রসাদ খায়। তবে ইদ, আশুরা, শবে বরাত, ইদ-এ- মিলাদুন্নবি এবং নানা পুজা অর্চনা, ক্রিসমাস - এগুলো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক উৎসব, সর্বজনীন বা জাতীয় উৎসব নয়।
বাংলাদেশের সর্বজনীন জাতীয় উৎসব হচ্ছে পহেলা বৈশাখ, বৈশাখী মেলা, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, ফসল কাটার উৎসব, নবান্ন, ফেব্রুয়ারির বইমেলা, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ডিসেম্বরের বিজয় মেলা, এসব। এগুলো ধর্মনিরপেক্ষভাবে পালিত হয়ে থাকে। সব ধর্মের বর্ণের জেন্ডারের বয়সের ও আয়ের বাঙালিরা এসব উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। অবাঙালিরাও করেন। জাতীয় উৎসবগুলো বাঙালিমাত্রেই সর্বজনীন উৎসব। যারাই বাঙালি তারাই এতে অংশগ্রহণ করেন। লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :