রুমি আহমেদ: বেশ কয়েক বছর আগে সারেগামাপার সুবাদে প্রথম একটা ভারতীয় বাংলা টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ হয়েছিল। এর আগে বাংলা, হিন্দি কোনোটাই দেখা হয়নি।
সারেগামাপা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের একটা প্রধান মিউজিক ট্যালেন্ট হান্ট আর রিয়েলিটি শো। মোটামুটি সেকুলার সংস্কৃতি অঙ্গনের রথী মহারথিরাই এই অনুষ্ঠানের গুলোর সাথে জড়িত। অনেকাংশে হিন্দি ওয়েভ আর মোদী বিজেপির হিন্দুত্ব ওয়েভের মুখে সেকুলার সংস্কৃতি আর বাংলাকে প্রমোট করার সাহসী প্রচেষ্টা । কিন্তু তারপরও দেখলাম মেইনস্ট্রিম ধর্মকে সেন্টার স্টেজ রাখা, মেজরিটির ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান দেখানো আর এর সাথে কম্প্রোমাইজ করে চলার যে দক্ষতা ওদের সেকুলার ইনস্টিটিউ গুলোর তা পুরোপরি এবসেন্ট বাংলাদেশে।
পুরো বছর ধরে সারেগামাপা মূলমঞ্চে ফুলের মালা দিয়ে সাজানো ছিল স্বরস্বতী মূর্তি। প্রোগ্রামটার শুরুই হয়েছিল স্টেজে পুজো দিয়ে। আর প্রতিদিনের বিজয়ী রা পাচ্ছিলেন একটি করে স্বরস্বতী প্রতিমা। বাংলাদেশের মাইনুল হাসান নোবেলও মনে হয় দশ বারোটা প্রতিমা পেয়েছে ভালো পারফর্মেন্সের জন্য। এখন একটু কম্পেয়ার করুন, বাংলাদেশের সাথে। ভাবতে পারেন ক্লোজআপ ওয়ান বা চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ প্রোগ্রাম টা শুরু হচ্ছে মুনাজাত বা দোয়া খায়ের করে? অথবা দিনের সেরা পারফর্মার সে হিন্দু হোক ক্রিশ্চিয়ান হোক আর মুসলমান হোক- তাকে বোখারী শরীফের সেট উপহার দেয়া হচ্ছে? আমিও ভাবতে পারি না, আর কোনোভাবেই আমি চাইও না এটা হোক।
তবে ভারতীয় বা পশ্চিমা সেকুলার ইনস্টিটিটগুলোর মতো বাংলাদেশি সেকুলার ইনস্টিটিউটগুলোকেই খুঁজে বের করতে হবে কীভাবে তারা মেইনস্ট্রিম ফেইথকে কো-অপ্ট করবে নিজেদেরই বিস্তারের স্বার্থে। আমাদের বাংলা বর্ষবরণ এককালে পূজা আর্চা আর মিলাদ ইত্যাদি দিয়ে উদযাপিত হতো। এখন মঙ্গল শোভাযাত্রার সময়। আমার কাছে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবিগুলো খুব ভালো লাগে। আমি চাই এটা আরো বড় আর স্বতঃস্ফূর্ত হোক। হয়তোবা মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়েই শুরু হতে পারে বাংলাদেশের সেকুলার ইনস্টিটিউটগুলোর ইনকুসিভ হবার প্রচেষ্টা। ইসলামিক ক্যালিগ্রফি গভীর একটা আর্ট। পশ্চিমা আর্ট ওয়ার্ল্ডেও ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি নিয়ে অনেক আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস। উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকলে হয়তোবা এ ধরনের কিছু আর্ট ইনক্লুড করে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আরো ইনক্লুসিভ করা যায়।
আর মঙ্গল শোভাযাত্রার সিম্বলগুলোকে এতো এবস্ট্রাকট রাখার দরকারটা কী? আমাদের কমন কিছু সিম্বল যেমন নৌকা, কুঁড়েঘর, ধানের শীষ, লাঙ্গল, কোদাল, দাঁড়িপাল্লা, পালকি, বিয়ের সাজ গ্রাম্য বধূ, সিনেমা হলের বিলবোর্ড- অঞ্জু ঘোষের বিশাল কাটআউট, জুতো সেলাইওয়ালা, ঝুড়ি মাথায় ফেরিওয়ালা, মাছ (কই/ইলিশ/ পাঙ্গাশ ইত্যাদি), হাল চাষ, একটা মসজিদ, একটা মন্দির( হয়তোবা ঢাকেশ্বরী মন্দির), কৃষক, তসবি হাতে ইমাম সাহেব, শালিক, একটা বৌদ্ধ মঠ, একটা মিশনারী হাসপাতাল, কিছু ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিক আর্ট, বিয়ে বাড়ির গেট, গ্রামের হাট, একটা প্রতিমা, সদরঘাট অথবা খেয়া ঘাট, গামছা, বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত প্রবাসী, রিক্সা, গার্মেন্টেসের ফ্লোর। নারী শ্রমিকের কাফেলা, খড়ের গাদা, সিঁদুর পড়া এক মা, আলাউদ্দিনের মিষ্টির বাক্স। দই এর হাঁড়ি, হিজাব পড়া এক কন্যা, বিশ্ব ইজতেমা, ঢাকা শহর - শহীদ মিনার, শাপলা চত্বর ইত্যাদি আমরা কি একটু রিয়েলিজম আনতে পারি না এই মঙ্গলশোভাযাত্রায়? আমাদের তো কন্ট্রোভার্সি মুক্ত, রিলিজিওন নিউট্রাল সিম্বলের অভাব নেই। লেখক: চিকিৎসক
আপনার মতামত লিখুন :