শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:১৩ রাত
আপডেট : ০৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমাজ নিয়ে সমালোচনা

মঈন চৌধুরী

মঈন চৌধুরী: আমাদের দেশে সমালোচক এবং সমালোচনার অভাব নেই। যে কোনো বিষয়ে সমালোচনা করতে বললেই হলো। হাজার-লাখ সমালোচকের লাইন পড়ে যাবে, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনী ডাকতে হবে, আর পুলিশরাও এই ফাঁকে দু-পয়সা কামিয়ে নেবে। ‘লিপটন তাজা’ চায়ের কাপেই বলুন কিংবা রাস্তা-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, পত্রিকা অফিসে, বেশ্যা বাড়িতে যেখানেই বলুন না কেন, সমালোচক পাবেন, সমালোচনাও হবে। এর কারণ হলো, আমাদের দেশে সমালোচনা করার জন্য কোনো যুক্তি লাগে না, বিষয় লাগে না, তত্ত্ব লাগে না, বিবেক লাগে না, শুধুমাত্র ‘অহং’ থাকলেই হলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সমালোচনায় কোনো কাজও হয় না। আমাদের দেশের সবচেয়ে নামিদামি লোকদের বলা হয় রাজনীতিবিদ, কখনো কখনো ‘ভোট পরীক্ষায়’ পাস করার পর আমরা তাদের বলি সংসদ সদস্য। কিন্তু পবিত্র জাতীয় সংসদে বসে মাঝেমধ্যে এই সংসদ সদস্যরা এমন অযৌক্তিক ভাষায় আলোচনা-সমালোচনা করেন যে, ওই সব কথা শোনার চেয়ে গোপনে বাসায় বসে লারেলাপ্পা সিনেমা দেখা ভালো। নিজস্ব অর্থনীতির উন্নতির জন্য এসব রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যরা এমন কোনো কাজ নেই যা করতে পারেন না এবং এ কারণে তাদের সমালোচনা করা হয় প্রচুর, কিন্তু তাতে আসে যায় কী? যুক্তি আর তত্ত্বহীন বিশ্ব থেকে সমালোচনা করা আর না করার মাঝে কোনো বেশকম আছে বলে মনে হয় না।

দেশ ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার জন্য আমাদের দেশে অনেক পত্রিকা আছে (নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে)। সমাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার জন্য আরও আছে অসংখ্য টিভি চ্যানেল। এইসব পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের প্রেক্ষাপটে আছে ‘ক্ষমতা কাঠামো’ বা চড়বিৎ ঝঃৎঁপঃঁৎব। অনেক ‘টাকার কুমির’ অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের পর তাদের অর্থ সংরক্ষণ আর ক্ষমতার ভাগ নেয়ার জন্যই এই পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছেন, মালিক হয়েছেন টিভি চ্যানেলের। এই পত্রিকায় বা চ্যানেলে কর্মরত সাংবাদিক-সম্পাদক যারা আছেন, তাদের বলা যায় ‘ক্ষমতার গোলাম’। আত্ম-বিক্রয় করে তারা সাহায্য করছে ওই-সব ‘টাকার কুমির’কে, যারা সমাজকে শোষণ করে, অন্যায় করে, গড়ে তুলছেন টাকার পাহাড় (অবশ্য সাংবাদিক/সম্পাদকের খুব একটা দোষ দেয়া যাবে না, জীবন-ধারণের জন্য তাদের এ-কাজ করতেই হয়)। ক্ষমতার ইঙ্গিতেই তারা দেশের ‘ভালো-মন্দ’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেন, মাঝেমধ্যে অনেক পত্রিকা ও চ্যানেলের সাংবাদিক/সম্পাদক ‘কলম-সন্ত্রাসে; জড়িয়ে পড়েন তার নিজস্ব অথবা গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একটি পত্রিকার সম্পাদক বা চ্যানেলের কর্ণধার ‘মুখোশ’ পরে থাকেন। ওই ‘মুখোশ’ আমাদের বলে যে তিনি একসময় প্রগতিশীল বাম-রাজনীতি করতেন, মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সে-বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার মতো লোকও নেই, আর থাকলেও সব কথা কী সবসময় বলতে আছে?

আমি দৈনিক সংবাদপত্রে লিখি না, তার কারণ কিন্তু প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা নয় (প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা একটি পশ্চিমবঙ্গীয় ধারণা এবং এই ধারণার প্রেক্ষাপটে যে খুব ভালো এবং স্বচ্ছ যুক্তি আছে, তা নয়)। আমার দৈনিকে না লেখার কারণ হলো, দৈনিকগুলোকে আমি চড়বিৎ ঝঃৎঁপঃঁৎব-এর অংশ হিসেবে সমাজশোষণের হাতিয়ার ভাবি, আর ২৪ ঘণ্টার জীবন নিয়ে প্রকাশিত একটি দৈনিকের শুধুমাত্র ‘পাঠকের জন্য দৈনন্দিন খাদ্য’ ছাপা হতে পারে। কোনো সৃষ্টিশীল লেখা প্রকাশের জন্য দৈনিক পত্রিকা নয় (অবশ্য যারা খুব বিখ্যাত হতে চান, তাদের জন্য দৈনিক পত্রিকা ভালো)। বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মাঝে অন্যতম। এই দুর্নীতির জন্য গ্রামের ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার, মুদি দোকানদার, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, টিএনও, পুলিশ, ট্যাক্স কর্মকর্তা, সচিব, উজির, নাজিরসহ সরকার ও বিরোধীদলের সব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী দায়ী। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন হলেও, শুধুমাত্র গুটিকয়েক ‘দুর্নীতি দমন অফিসার’ দিয়ে দেশের সমস্ত দুর্নীতি দমন করা যাবে না। কিন্তু যদি আমাদের পত্রিকা আর চ্যানেলগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাহায্য করতো, যদি প্রতিটি দুর্নীতির খবর কোনোরকম দুর্নীতি না করে পত্রিকায় ছাপা হতো, চ্যানেলে দেখানো হতো, তবে দেশে দুর্নীতি কমে যেতো সন্দেহ নেই। আমাদের পত্রিকা ও চ্যানেলগুলো দেশের মানুষকেও সচেতন করতে পারতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ থাকার কারণে এ কাজটি করা আদৌ সম্ভব নয়।

সমাজের আলোচনা করতে হলে সমাজতত্ত্ব জানতে হবে, জানতে হবে গুস্তাভ ইয়াং কথিত মানুষের ‘যৌথ-অচেতনের’ মনস্তত্ত্ব-কে। কিন্তু দুর্নীতির মনস্তত্ত্ব আর সমাজতত্ত্ব লেখার চেয়ে পত্রিকায় সস্তা ‘কলাম’ লেখা অনেক ভালো, খুবই তাড়াতাড়ি ‘মহা বুদ্ধিজীবী’ হওয়া যায়। আর তাই খুব সহজেই কেউ আর তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। আর একটি সমাজ যখন তত্ত্বহীন হয়ে পড়ে, তখন দুর্নীতির পাহাড় পর্বত হয়ে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এখন আমাদের দেশের যে অবস্থা, তাতে মনে হয় আমরা দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার, জুলুম, মূর্খতা নিয়ে এতোটাই এগিয়ে গেছি যে আমাদের আর ফেরার উপায় নেই। আমিও তাই আমাদের জন্য সারসংক্ষেপে একটি প্যারা যোগ করলাম। আমরা বাবুদের পুকুর পাড়ের বাগানের পেয়ারা চুরি করে, পরীক্ষায় নকল করে, গম চুরি করে, মানুষ গুম করে, ফাইল গায়েব করে, ঘুষ খেয়ে, নারীদের ভোগের বস্তু বানিয়ে, মানুষ পুড়িয়ে এবং আরো অনেক অকাজ করে আমরা মানুষ হইছি। এখন পুকুর চুরি করলে, ব্রিজ চুরি করলে, অন্যান্য সব অকাজ কুকাজ করলে চিৎকার কেন করি বুঝতে পারি না। যাদের ন্যাশনাল ক্যারেক্টারে এইসব বদগুণ নেই, তারা এই দেশের লোক না, বিনা ভিসায় তারা এই দেশে বসবাস করছেন কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত। ৩১-৩-২৪। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়