মঈন চৌধুরী: জীবন নিয়ে অনেক তত্ত্বকথা আছে। এইসব তত্ত্বকথায় আছে ধধর্মতাত্ত্বিক মতামত, পুরাণকেন্দ্রিক গল্পকাহিনী, অধিবিদ্যাজাত উপস্থাপনা, বস্তুবাদী মতামত আর বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ। আমি জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে তত্ত্বকথা শুনাবো না, বরং আমার সামান্য জ্ঞানকে অবলম্বন করে প্রায় মুর্খের মতো অতি সহজ ভাষায় কিছু বলবো। আমার কথায় অধিবিদ্যাজাত দর্শন, বস্তুবাদ ভিত্তিক কথা আর বিজ্ঞান চিন্তা থাকবে, কিন্তু পুরানকেন্দ্রিক ভাবনা আর ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তাচেতনাকে বাদ দেবো। তবে আমি মানুষের বিশ্বাসের মূল্য দেই, তাই ধর্মতত্ত্ব আর পুরাণকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার সামালোচক হলেও আমি বিরোধী নই।
আমাদের এই মহাবিশ্ব হল বস্তু, বস্তুধর্ম, সময়, স্থান, ঘটনা আর শক্তির এক বিচিত্র সংগঠন। এই মহাবিশ্বের কোন এক অজানা কেন্দ্রে কোন এক এককত্ব বা সিংগুলারিটির অনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণে আমাদের দেখা মহাজগত আর সৌরজগত সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির পর এই মহাজগত আর সৌরজগত বস্তু, বস্তুধর্ম, সময় আর শক্তি নিয়ে, গনিতকে গ্রাহ্য করে, এসে পৌঁছেছে এই বর্তমানে। সৃষ্টির এই ঘটনার কিছু আমাদের জানা, অনেকটাই অজানা, আর তাই জন্ম হয়েছে অধিবিদ্যার। জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে মহাবিশ্ব আর সৌরজগতের প্রসংগ এসে গেল। এবার আসি পৃথিবীর ইতিহাসে। আমাদের পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। পৃথিবীত প্রথম জীবন বা জৈববস্তু আসে প্রায় ৪২ কোটি বছর আগে। মানুষের মত কিন্তু মানুষ নয়, এমন প্রানীর আবির্ভাব হয় ৬০ লক্ষ বছর আগে আর আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে আসে সম্পূর্ণ মানব।
এখন প্রশ্ন আসে, ৪২ কোটি বছর আগে জীবন বা প্রাণ কিভাবে এলো পৃথিবীতে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাদের বস্ত আর বস্তুগুণ বুঝতে হবে। পৃথিবীতে অবস্থানরত বস্তুগুলো বিভিন্ন মৌলিক বস্তু দিয়ে সংগঠিত। এখন পর্যন্ত প্রায় ১১৯ রকম মৌলিক বস্তু খুঁজে পেয়েছি আমরা। অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, কেলসিয়াম, সিলিকন, লোহা, সিসা, নিকেল ইত্যাদি হল মৌলিক বস্তুর কিছু নাম। মৌলিক বস্তুর পরমানুর ভেতর আবার থাকে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন নামের কণা, থাকে কোয়ার্কের জগত। একজন ‘আমি’ হল একটি ‘জীবনবস্তু’। দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করে যেমন একটি পানির অণু (H2O) তৈরি করে, ঠিক তেমন ভাবে কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ক্যালসিয়াম, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য পরমাণু কোন একটি নিদৃষ্ট কোয়ান্টাম তেজে, মাত্রায় ও গঠনে সৃষ্টি করে ‘জীবনবস্তু’।
একটি পানির অণুর যেমন নিজস্ব কিছু মৌলিক ধর্ম আছে, ঠিক তেমন ভাবে অণু পরমাণুর সংগঠন জীবনবস্তুরও কিছু নিজস্ব ধর্ম থাকে। একজন ‘আমি’ জন্ম নেয়ার পর যে সব জৈব কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তাই হল জীবনবস্তুর ধর্ম। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, জীবনবস্তু হিসেবে সব আমি বা মানুষের চরিত্র/ধর্ম এক হয়না কেন? উত্তরে বলা যায়, পরিবেশের উপর নির্ভর করে একটি পানির অণু যদি বরফ, তরল, বাষ্প ও প্লাজমা হিসেবে অবস্থান করতে পারে, তবে পরিবেশের জন্যই জীবনবস্তু হিসেবে মানুষও বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন চরিত্র/জৈবধর্ম নিয়ে অবস্থান করে। ফেসবুক থেকে