আহসান হাবিব: মানুষ এক আশ্চর্য জীব। একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়ে গেলেই ভালো লাগতে শুরু করে অন্য আর একজনকে। একদিন যাকে দেখার জন্য মন পাগল থাকতো, এখন তাকে নয়, চুরি করে অন্যকে দেখার জন্য মন উতলা হতে থাকে। একদিন ঠিকঠাক ধরা পড়ে যায়। উভয় উভয়ের কাছে। ততদিনে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হতে শুরু করে। আগের মতো আর উচাটন হয় না মন। ডাকলেই ধড়ফড় করে ছুটে যেতে ইচ্ছা করে না। ফোন বাজলেও চটজলদি ধরা হয় না। মেসেজের উত্তর দিতে দেরি হয়ে যায়। দেখার জন্য মন উতলা হয় না। তখন আশ্চর্য অন্য আরেকজন উঁকি মারতে শুরু করেছে। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না লজ্জায়। এদিকে প্রেম শুকাতে শুরু করে দিয়েছে। আর প্রেম যদি বিয়েতে গড়ায়, তাহলে দিন গুনতে থাকে কখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি আসবে ডিভোর্সের। যেন দুটি মানুষ বন্দী হয়ে আছে খাঁচায়। কিন্তু যেই প্রেম ভেঙে গেলো কিংবা ডিভোর্স হয়ে গেলো, তখন শুরু হয় হিপোক্রেসি। বেদনার পেয়ালা ভরে যায়। একে অপরকে কে কত ভালোবাসতো, তার ফিরিস্তি শুরু হয়ে যায়। অথচ তার মন ততক্ষণে অন্য কারো আকাশে উড়ছে। তারপর কটা দিন যেতেই থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ে। নতুন মানুষের সাথে সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়ে পড়ে। লোকে তখন বুঝতে পারে আসলে মানুষ এক বহুগামি মিথ্যুক। তথাপি মানুষ প্রেমে পড়ে। যতদিন প্রেম হয়নি, দুজনে হ্যাঁ বলেনি, ততদিন সুখ। প্রেম প্রেম সময়গুলির মতো এমন অনির্বচনীয় সময় আর জীবনে হয় না। কিন্তু মানুষ বেশিদিন সুখের ঘোরে থাকতে পারে না, তার সুখ সয় না, বেরিয়ে আসে এবং দুঃখের খাতায় নাম লেখায়। সে আবার প্রেমে পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
[২] একটি সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি কীসের জন্য ভাঙে? আমার মনে হয় দু’জনের মাখখানে তৃতীয় একজন ঢুকে পড়ে। এই ঢুকে পড়া কেউ রোধ করতে পারে না। কারণ প্রেম হয়ে গেলে আগেই বলেছি অন্যজনকে ভালোলাগতে শুরু করে। এই অন্যজনই তৃতীয়জন হয়ে পড়ে। অথবা দেখা গেলো প্রেম হয়েছে একজনের সঙ্গে, কিন্তু ভালোবাসে অন্য কেউ যার সঙ্গে প্রেম হয়নি। প্রেমের পর দেখা গেলো যার সঙ্গে সম্পর্ক হয়নি তাকে ভালো লাগতে শুরু করলো এবং একদা সে ঢুকে পড়লো। ব্যস, সম্পর্কের বারোটা বেজে গেলো। আসলে প্রতিটি সম্পর্কে একসময় বারোটা বেজে যায়। কোনোটা একটু আগে, কোনোটা পরে। যেকোনো সম্পর্কের নিয়তি এটাই। তাই আমার কুপরামর্শ হচ্ছে সম্পর্ক কর, ভালোবাসি বলিও না। যতদিন এই না বলা, ততোদিন সুখের বজরায় ভেসে বেড়ানো।
লেখক: ঔপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :