শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০২২, ০২:১০ দুপুর
আপডেট : ১৯ মে, ২০২২, ০২:১০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সড়ক দুর্ঘটনায় আড়াই বছরে ১৬৭৪ শিশুর মৃত্যু

সড়ক দুর্ঘটনায় আড়াই বছরে ১৬৭৪ শিশুর মৃত্যু

শরীফ শাওন : [২] দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ৬৭৪ জন শিশু। সংস্থার মতে, সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের কারণে শিশুরা সড়ক দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিক হারে হতাহত হচ্ছে। 

[৩] বৃহস্পতিবার ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১০২৭ শিশু, যা মোট নিহতের ৬১.৩৫ শতাংশ । বিভিন্ন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩৩১ শিশু, যা মোট নিহতের ১৯.৭৭ শতাংশ। ট্রাক, পিকআপ, ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক ইত্যাদি পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৪৮ শিশু, অর্থাৎ ২.৮৬শতাংশ এবং মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২৬৮ শিশু, অর্থাৎ ১৬ শতাংশ।

[৪] যাত্রী হিসেবে নিহত শিশুদের মধ্যে বাস যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২ শিশু (২১.৭৫ শতাংশ)। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী হিসেবে ২৫ শিশু (৭.৫৫ শতাংশ), থ্রি-হুইলার (সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ১৮৩ শিশু (৫৫.২৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) যাত্রী হিসেবে ৫১ শিশু (১৫.৪০ শতাংশ) নিহত হয়েছে।

[৪] যানবাহনের চাপায় / ধাক্কায় শিশু নিহতের মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের (ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ড্রামট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২৫৮ শিশু বা ২৫.১২ শতাংশ। বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ১৪৩ শিশু বা ১৩.৯২ শতাংশ।  থ্রি-হুইলারের (সিএনজি, অটৈারিকশা, ইজিবাইক ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৩২১ শিশু বা ৩১.২৫ শতাংশ। স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্র, টমটম ইত্যাদি) চাপায়/ধাক্কায় নিহত হয়েছে ২০৮ শিশু বা ২০.২৫ শতাংশ।  বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু বা ৯.৪৪ শতাংশ।

[৫] দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে বলা হয়, ১ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৩৩৭ জন বা ২০.১৩ শতাংশ। ৬ বছর থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৭৫৪ জন বা ৪৫.০৪ শতাংশ। ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু নিহত হয়েছে ৫৮৩ জন বা ৩৪.৮২ শতাংশ।

[৬] রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় নিহত হয়েছে ৭৩১ শিশু, যা মোটের ৪৩.৬৬ শতাংশ। বসত বাড়ির আশে-পাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত হয়েছে ১৯৩ শিশু বা ১১.৫২ শতাংশ। ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসত ঘরের উপর উল্টে পড়ার ৩টি ঘটনায় রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ৭টি শিশু নিহত হয়েছে। 

[৭] ফাউন্ডেশনের মতে, শিশুরা গ্রামীণ সড়কে বেশি হতাহত হচ্ছে। কারণ গ্রামীণ সড়কগুলো বসত বাড়ি ঘেষা এবং এই সড়কের যানবাহনসমূহ কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি মেনে চলে না। সড়ক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও থাকে না। আবার শিশুরাও সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেমন কোনো উদ্বেগ নেই, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো প্রকার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নীরবে আমাদের শিশুরা নিহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ প্রতিটি শিশুই অমিত সম্ভাবনাময় এবং আজকের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিহত শিশুদের মধ্যে মহাসড়কে নিহত ২৮৭ শিশু, যা মোটের ১৭.১৪ শতাংশ। আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ৩২৮ শিশু বা ১৯.৫৯ শতাংশ। গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৮৮৯ শিশু বা ৫৩.১০ শতাংশ। শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৪৭ শিশু বা ৮.৭৮ শতাংশ। অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ২৩ শিশু বা ১.৩৭ শতাংশ।
শিশু নিহত হওয়া দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোরে ১.৫৫ শতাংশ, সকালে ৫১.৭৯ শতাংশ, দুপুরে ১৩.৩২ শতাংশ, বিকালে ২২.৪৬ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬.৫১ শতাংশ, এবং রাতে ৪.৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে বলা হয়, দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব না হওয়া; সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের মধ্যে সচেতনতার অভাব; পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের পরামর্শ ও পশিক্ষণ না দেওয়া; অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো; দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট;. আহত শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা।
ফাউন্ডেশনের সুপারিশে বলা হয়, সড়ক ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য নিরাপদ করা; নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের সচেতন করা; অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক কর্তৃক যানবাহন চালানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; জেলা পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ সরকারি তহবিল গঠন করা; এবং “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়