শিরোনাম
◈ উইজডেনের সেরা ১৫ টেস্ট সিরিজের দুটিতে বাংলাদেশ ◈ সিঙ্গাপুরে অনেক কম খরচে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ, সময় লাগবে ৪-৬ মাস ◈ এই দীপাবলিতে আপনাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের ব্যবস্থা করছি: নরেন্দ্র মোদী ◈ ইঁদুর-পোকামাকড় দৌড়াতো, এমন কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল: মির্জা আব্বাসের ◈ সন্ত্রাসবাদের মামলায় মালয়েশিয়ায় অভিযুক্ত দুই বাংলাদেশি, হতে পারে ৩০ বছরের কারাদণ্ড ◈ বাংলাদেশে বিপ্লবের এক বছর পর আশা হতাশার দোলাচল: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন ◈ পলাতক ব্যক্তির আত্মসমর্পণ ছাড়া  আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ নেই ◈ জনগণের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে চায় পুলিশ ◈ ‘আমার ভোট আমি দেব, এটার সুযোগ নাই’- বিএনপি নেতার ভিডিও ভাইরাল ◈ এক সময় ভাত খুঁজতো ক্যান্টিনে, এখন হাঁস খোঁজে ওয়েস্টিনে: আন্দালিব রহমান পার্থ

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৪৮ দুপুর
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

পলাতক ব্যক্তির আত্মসমর্পণ ছাড়া  আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ নেই

এল আর বাদল : মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে আপিল করেছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না৷ ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন গ্রহণ করেননি।

জেড আই খান পান্না মনে করেন, আদালত চাইলে তাকে আইনজীবী বা রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবীর পরামর্শক হিসাবে কাজ করার সুযোগ দিতে পারতেন। এই এখতিয়ার আদালতের রয়েছে।  ---- ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

সিনিয়র আইনজীবী ও বিচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পলাতক ব্যক্তির আত্মসমর্পণ ছাড়া তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ নাই। তবে ট্রাইব্যুনালের আইনে পলাতক ব্যক্তির পক্ষে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দেবে এই বাধ্যবাধকতা  আছে। 

এর বাইরে যেসব অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে সেই সব মামলাতেও পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ করে। অন্যান্য মামলাও আদালত চাইলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে  আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে। ন্যায় বিচারের জন্য এটা করা হয়।

গত ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না শেখ হাসিনার আইনজীবী হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল- ১ এ আবেদন করেন।  তিনি নিজে আদালতে যাননি। তার পক্ষে আবেদনটি আদালতে পেশ করেন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার।  

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আবেদনের পর ট্রাইব্যুনাল বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা ওভার (শেষ)। উনি( পান্না) সিভি দিলে অন্য মামলায় তাকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি দেখবেন। তাছাড়া কাকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেয়া হবে, সেটা ট্রাইব্যুনালের বিষয়।

ট্রাইব্যুনাল আরো বলেন, ‘‘তিনি প্রসিডিওর জানেন। যে মামলায় আসামি উপস্থিত নাই, এমন পার্টিকুলার মামলায় আসবেন কেন? তাছাড়া এ মামলায় যখন ডিফেন্স নিয়োগ দেয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এসে বলতে পারতেন। তখন বিবেচনা করা যেত কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর মাস্টারকে বললেন, ট্রেনে উঠিয়ে দেন।

আইনজীবী নাজনীন নাহার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এরপর তার পক্ষ থেকে আমি স্টেট ডিফেন্সের সহযোগী হিসাবে জেড আই খান পান্নাকে নিয়োগের কথা বললে আদালত তাও খারিজ করে দেন।

আদালত বলেছেন, "স্টেড ডিফেন্স নিয়োগ করার আগে সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তখন তিনি আসেননি। এখন তো নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে আর সুযোগ নাই। আর তার স্টেট ডিফেন্সকে সহযোগীতার আবেদনও আদালত গ্রহণ করেননি।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, "শেখ হাসিনার মামলায় পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া শেষ হয়েছে। এর আগে এই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। 

এরপর আসামির আইনজীবীকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এক মাস সময় দেয়া হয়েছে।  এর আগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। অভিযোগ আমালে নেয়া হয়েছে। এবং তাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুইবার সময় দেয়া হয়েছে। দুইটা জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তাকে হাজির হওয়ার জন্য। উনি হাজির না হওয়ায় তার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। তারপর স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয়া হয়েছে মামলার জন্য। এতগুলো ধাপ পার করে রাষ্ট্র পলাতক শেখ হাসিনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছে।  

এতদিন জেড আই খান পান্না আসেননি কেন। তখন তো তার সুযোগ ছিলো। এখন তাকে নিয়োগ করা হলে যাকে নিয়োগ করা হয়েছে তার নিয়োগ তো বাতিল করতে হবে।  এটা আদালত কেন করবে?

"আসলে  জেড আই খান পান্না সাহেব এই মামলার কোনো পক্ষ নন। তারপরও তিনি আবেদন করেছেন। এভাবে আবেদন  গ্রহণ করলে তো ১৭ কোটি মানুষ ১৭ কোটি আবেদন করবে। আমার মনে হয় এই পর্যায়ে এসে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আবেদনটি করেছেন বিচার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে,” বলেন তিনি। আরও বলেন, ‘‘আসামি পলাতক থেকে কোনোভাবেই কোনো দেশে, কোনো বিচার ব্যবস্থায় আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে না। 
 
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন," আসলে আইনজীবী নিয়োগ করতে হলে আসামিকে তো  ওই আইনজীবীকে পাওয়ার দিতে হবে। ওকালত নামায় সই দিতে হবে। পলাতক অবস্থায় সেটা দেয়ার তো বৈধতা নাই। এটা সম্ভব আদালতে হাজির হয়ে বা আত্মসমর্পণ করে। যে মামলায় আসামিকে  আদালত পলাতক ঘোষণা করে সেটার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। আর পলাতক অবস্থায়ই বিচার কাজ চলে। তবে ট্রাইব্যুনাল আইনেই  পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ করবে। এবং এটা করা হয়েছে।''

তিনি বলেন," কাকে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হবে এটা আদালতের এখতিয়ার। জেডআই খান পান্নার আবেদন আদালত গ্রহণ না করায় আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি।  আবার চাইলে গ্রহণও করতে পারতেন। তাহলে সেটা হতো রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। শেখ হাসিনার নিয়োজিত আইনজীবী নয়। কারণ শেখ হাসিনার পলাতক অবস্থায় আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ নাই।

তবে কোনো কারণে যদি কোনো আসামি আদালতে হাজির না হতে পারেন। বিচারক যদি সেই কারণ সন্তোষজনক মনে করেন তাহলে তাকে আদালক হাজির না হয়েও আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিতে পারেন বলে আইনজীবীরা জানান। কিন্তু সেটা পলাতক অবস্থায় নয়। তার অবস্থান এবং তার কাছে পৌঁছার সুযোগ থাকতে হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন," অবশ্যই তার কাছে গিয়ে তাকে অভিযোগ শোনানোর মতো পরিস্থিতি থাকতে হবে। তা না হলে হবে না।”

জেড আই খান পান্না বলেন," আমি অনেক আগেই সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, যে আমি শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাই।”

তাহলে তিনি যখন স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হয় তখন আবেদন করলেন না কেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আমি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আর তখন আবেদন করলে তো বেতনভুক্ত স্টেট ডিফেন্স হওয়ার আবেদন করতে হতো। আমি তো বিনা পয়সায় শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে চাই। আমি তো স্টেট ডিফেন্সকে অ্যাসিস্ট করতে চাই। এর তো উদাহরণ আছে টবি ক্যাডম্যান বিদেশি হয়েও তো এখন এখানে পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাকে আদালত চাইলে স্টেট ডিফেন্সকে অ্যাসিস্ট করা সুযোগ দিতে পারত।

তিনি বলেন," ন্যায় বিচার নিয়ে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় আমি আবেদন করেছি। আদালত আমার আবেদন গ্রহণ না করে যেমন আইনের কোনো লঙ্ঘন করেনি। তেমনি আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমার আবেদন গ্রহনও করতে পারতো। এই এখতিয়ার আদালতের আছে।”

পলাতক আসামির আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ নাই জানিয়ে তিনি বলেন, "আমি তো বিনা পয়সায় স্টেট ডিফেন্সকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। এখন আমি চিন্তা করছি বিষয়টি নিয়ে আমি আপিল আদালতে যাব।”

প্রসঙ্গত, গণ-অভ্যুত্থানের সময়সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার আছেন। তিনি ইতিমধ্যে অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। একই সঙ্গে এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়