বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান শুল্ক বিষয়ক আলোচনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া হলে তার প্রভাব বাংলাদেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের, বিশেষ করে ইইউ-এর ওপর কী পড়বে, সেটিই তাদের মূল উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা ও সম্ভাব্য ফলাফল:
যুক্তরাষ্ট্র মূলত কয়েকটি দাবি সামনে রেখে এই আলোচনা করছে:
১. বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস: বাংলাদেশ যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ায় অথবা সেখানে বিনিয়োগ করে।
২. ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব: চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সীমিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
এই দাবিগুলো মানতে গেলে বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক: বাংলাদেশ ইউরোপ থেকে এয়ারবাস কেনার আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বোয়িং বিমান কিনলে ইইউ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেহেতু ইইউ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়, তাই এই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক: যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে, জাপানের গাড়ির বাজার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী এবং শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধাও দিয়ে থাকে। এমন সিদ্ধান্ত জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি: যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশ যেন চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমিয়ে দেয়। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী এবং বাংলাদেশকে একটি "হয় আমাদের অথবা শত্রুকে বেছে নাও" ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মত:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি বাণিজ্য আলোচনা নয়, বরং এর পেছনে গভীর ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ককে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বে তার প্রভাব ও আধিপত্য ধরে রাখতে চাইছে।
করণীয়:
এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শুধুমাত্র বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে চলবে না। এর জন্য কূটনীতিক এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।