শিরোনাম
◈ দ‌লের বা‌জে পারফর‌মেন্স আর শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে বিসিবি হতাশ ◈ আমার বিশ্বাস শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ : তাস‌কিন ◈ মুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি ফজর আলীসহ আরও ৪জন গ্রেপ্তার (ভিডিও) ◈ কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল খুলনা, প্রেস সচিবকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের অবস্থান ◈ বিষাক্ত কীটনাশক বন্ধে প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ◈ টাঙ্গাইল যৌনপল্লীতে অগ্নিকাণ্ড, ১২টি ঘর পুড়ে ছাই ◈ কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা হরগবিন্দ বিশ্বাস গ্রেপ্তার ◈ শিগগিরই হতে পারে রোডম্যাপ ঘোষণা, প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি ◈ চট্টগ্রামে সরবরাহ বাড়লেও স্বস্তি মেলেনি সবজির বাজারে, বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম ◈ মধুপুরের জঙ্গলে গভীর রাতে ঘোড়ার মাংস প্রক্রিয়াকরণ, একজন আটক

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৫:২০ বিকাল
আপডেট : ২৯ জুন, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরাকান আর্মির সাথে 'লড়াইয়ের প্রস্তুতি' নিচ্ছে রোহিঙ্গারা: একটি সরেজমিন প্রতিবেদন

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের একাংশ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে। গত এক-দেড় বছরে তাদের মধ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে 'জিহাদ' বা 'যুদ্ধ' করার মানসিকতা তীব্র হয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে সরেজমিনে একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে এই আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে।

মাঠের চিত্র: 'যুদ্ধ করে স্বাধীনতা' অর্জনের আকাঙ্ক্ষা

উখিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে এক রোহিঙ্গা যুবক দৃঢ়তার সঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা এখানে থাকব না, মিয়ানমারে ফিরে যাব। প্রয়োজনে যুদ্ধ করে হলেও আমরা আমাদের দেশ স্বাধীন করে সেখানে থাকব। আমরা আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধ করব, আমরা স্বাধীনতা চাই।"

আরেকজন যুবক বলেন, "আমাদেরকে যুদ্ধ করে নিজ দেশে স্বাধীনতা অর্জন করতে বলা হচ্ছে। সবাই জিহাদের জন্য তৈরি আছে। এই লক্ষ্যে আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) এবং আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) এক হয়ে কাজ করছে।"

ক্যাম্পের সাধারণ বাসিন্দা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এমন রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছেন, অন্তত চারটি সংগঠন ক্যাম্পে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে। এই গোষ্ঠীগুলো হলো: আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। এই সংগঠনগুলো নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক করে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা এবং মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে আলোচনা করে।

কুতুপালং ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা জানান, "বৈঠকে নিজেদের মধ্যে সংঘাত এড়িয়ে চলার এবং সঠিক অধিকার ও নিরাপত্তার সাথে মিয়ানমারে ফেরার কথা বলা হয়। সবাইকে সচেতন করা হয় যে এটি আমাদের দেশ নয়, তাই এখানে কোনো ঝগড়া, চুরি, ডাকাতি বা খুনোখুনি করা চলবে না।"

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও আইসিজির প্রতিবেদন

সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থামিয়ে নতুন করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করেছে এবং ধর্মীয় বয়ান ব্যবহার করে তরুণদের যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

আইসিজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট টমাস কেইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "গত এক-দেড় বছর ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকরা ক্যাম্পে এই ধারণা ছড়াচ্ছে যে, 'আমাদের ফিরে গিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে'।"

তিনি আরও বলেন, "এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি বার্তা। কারণ এই বিদ্রোহ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, যে বাহিনী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়বে।"

প্রশিক্ষণ ও সদস্য সংগ্রহ

আইসিজির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ চলছে। টমাস কেইন জানান, ক্যাম্পের ভেতরে অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়া শারীরিক অনুশীলন বা ড্রিলের মতো প্রশিক্ষণ হয়েছে। তবে সম্প্রতি কিছু শরণার্থী জানিয়েছে, তাদের পরিচিতদের ক্যাম্পের বাইরে সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে আরসা'র মতো গোষ্ঠীগুলোর সীমান্ত এলাকায় নিজস্ব প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে।

স্থানীয় বাংলাদেশিরাও রোহিঙ্গাদের এসব তৎপরতার বিষয়ে অবগত। 'বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি'র সভাপতি রবিউল হোছাইন বলেন, "ক্যাম্পের ভেতরে আরসা, আরএসও-সহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের কারাতে প্রশিক্ষণের কথা আমরা জানতে পেরেছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনেছি, ৫০ থেকে ২০০ জনের ছোট ছোট দল সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমারে যুদ্ধ করতে যায় এবং অনেকে ফিরেও আসে। তবে এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে গিয়ে তারা কখনোই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।"

ভূ-রাজনৈতিক সংকট ও বাংলাদেশের অবস্থান

আইসিজির মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এই তৎপরতা সম্পর্কে আরাকান আর্মি पूरी तरह अवगत এবং তারা মনে করে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না এবং এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, "আরসা বা আরএসও বাংলাদেশের কোনো সংগঠন নয়। এগুলো মিয়ানমারের সংগঠন এবং সেখানে তাদের কর্মকাণ্ডের দায় আমরা নেব না। আমরা আমাদের ভূখণ্ডে যেকোনো অবৈধ অস্ত্র বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করি না।"

তিনি আরও বলেন, "সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ হলো, সম্প্রতি আরসা'র প্রধান এবং আরএসও'র রাজনৈতিক প্রধানকে বাংলাদেশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। যদি আমরা তাদের উসকানি দিতাম, তাহলে এমন পদক্ষেপ নিতাম না।"

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি প্রলয় সিসিন জানান, ক্যাম্পে যেকোনো সশস্ত্র তৎপরতা দমনে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি যেন কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে। বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলমান আছে এবং এর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।"

ভবিষ্যৎ শঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যদি আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়, তার পরিণতি হবে মারাত্মক। উত্তর রাখাইনে এখনও বসবাসরত লাখখানেক রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক এই সংঘাতের মধ্যে আটকা পড়বেন। টমাস কেইনের মতে, "তারা এই বিদ্রোহ সমর্থন করে না, কারণ এর পরিণতি সম্পর্কে তারা জানে। সংঘাত বাড়লে তাদেরও বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের ওপর চাপ আরও বাড়বে।"

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়