শিরোনাম

প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৫, ১২:১৭ রাত
আপডেট : ১৩ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

লন্ডনে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন, হাসিমুখে উত্তর দিলেন ড. ইউনূস (ভিডিও)

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা নিয়ে লন্ডনে আয়োজিত এক সংলাপে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সেই সরকার দেশে কী করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করবে– এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, দেশের পরিস্থিতি এখন ‘শান্ত’, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠাই সরকারের ‘এক নম্বর লক্ষ্য’।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন–এ বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে রীতিমত উৎসবের আমেজে বাংলাদেশের নানা ঐতহাসিক ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত ওই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

চারদিনের সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থানরত মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইন্সটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (চ্যাথাম হাউজ) আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিলে সেখানে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

প্রবাসী একজন সাংবাদিক বলেন, “আপনি যখন ২০২৪ সালের ৭ অগাস্ট ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান, তখন আপনি বলেছিলেন যে আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবাইকে একত্রিত করা। কিন্তু আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আমরা প্রশাসনের নীরবতা লক্ষ্য করেছি।

“এর ভিত্তিতে আপনি নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা তাদের সমর্থকদের আলাদা করে দিয়েছেন, বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কীভাবে বাংলাদেশকে সংস্কার করতে চান বা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চান—তাদের গ্রহণ না করে?”

জবাব দিতে গিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর ইউনূস দেননি।

উত্তরে তিনি বলেন, “এখন সবকিছুই আমরা সামাল দিতে পারছি। এটা এমন এক সময়, যখন আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত, শৃঙ্খলায় এসেছে এবং আমরা এগুলো মোকাবেলা করছি।”

ইউনূসের ভাষায়, ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিকে ‘শৃঙ্খলায় আনা’ ছিল তাদের জন্য ‘বড় একটি কাজ’।

“কারণ, আমাদের যে পুলিশ বাহিনী ছিল, তারাই গতকাল শিশুদের গুলি করেছে। এখন যদি তারা হঠাৎ বলে যে ‘রাস্তা খালি করো‘, ‘তুমি কে?’, ‘এটা করো’… তারা (ছাত্ররা পুলিশকে) মারতে চায়, কারণ ‘তুমি আমার ভাইকে মেরেছ, তুমি আমার ছেলেকে মেরেছ, তুমি আমার বোনকে মেরেছ। এখন আমাকে বলছ কী করতে হবে?’

“তারা (পুলিশ) এখন রাস্তায় যেতে ভয় পাচ্ছে। একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমরা জানতাম না কীভাবে এই অবস্থা সামলাতে হবে। তাই সময় লেগেছে।”

পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ভাগ্যক্রমে আমি আপনাকে জানাতে পারি, এখন পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। মানুষ এখন পুলিশকে গ্রহণ করছে। যারা সমস্ত নৃশংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিচারাধীন।

“এই বিচার প্রক্রিয়াই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো গুজব নয়—আমি জানি কে এটা করেছে। ভিডিওতে আছে। বাংলাদেশের যা ঘটেছে, সব ভিডিওতে রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাই ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে—একটি ক্যামেরায় নয়, সবাই ক্যামেরা ব্যবহার করেছে। সব ভিডিও একত্র করা হয়েছে, অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে, এবং আমরা দেশকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।”

ইউনূস বলেন, “আমরা বলছি না যে আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। তবে পুলিশ বাহিনী এখন দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।”

ঐক্যের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আমাদের এক নম্বর লক্ষ্য। আমরা একসঙ্গে বসছি, আলোচনা করছি, একটি ‘জুলাই চার্টার’ তৈরি করার চেষ্টা করছি। এটা সহজ কাজ নয়—সব দলকে একসঙ্গে বসিয়ে আরোচনা করা। কিন্তু আমরা সেটা করছি।

“আমি এখানে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এবং আশা করি আমি তা রাখতে পারব—জুলাই মাসেই, সব দলের উপস্থিতিতে সেই চার্টার ঘোষণা করা হবে।”

ইউনূস বলেন, “এইটাই একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঐক্য হতে পারে।” সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়