শিরোনাম
◈ ক্লাব চেলসির বি‌ক্রির অর্থ ইউ‌ক্রেনে মান‌বিক সহায়তা ক‌রায় সাবেক মালিকের বিরুদ্ধে সরকারের মামলার হুমকি ◈ ইসরায়েল যে গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই: ম্যাথু মিলার ◈ জুলাই যোদ্ধাদের জন্য যেসব বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন ◈ পাকিস্তানের ১৭ বছর বয়সি টিকটকার সানাকে গুলি করে হত্যা ◈ ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝে রাফাল প্রস্তুতকারী ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব ◈ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা ◈ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে শুভযাত্রা বাসে হেনস্তা, হেলপার শনাক্তে বাস জব্দ ◈ ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশে কলেজ ও প্রাথমিকের ছুটি শুরু ◈ জবির সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের জামিন মঞ্জুর ◈ আমেরিকার সাথে সংলাপের আগে শতাধিক পণ্য আমদা‌নি‌তে শুল্ক কর ছাড় বাংলাদেশের

প্রকাশিত : ০১ জুন, ২০২৫, ১১:৩৮ রাত
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার টোকিওতে নিক্কেই ফোরাম ফিউচার অব এশিয়ার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার টোকিওতে নিক্কেই ফোরাম ফিউচার অব এশিয়ার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের জুনের মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু জাপান সফরে গিয়ে শুধু একটি রাজনৈতিক দল সেই পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে বলে দাবি করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সেই মন্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। আজ রোববার প্রেস উইং তাঁর সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

আজ বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। ডিসেম্বরের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায় বলে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপ্রেস সচিব বলেন, ‘বড় দলগুলোর মধ্যে একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, সেটি বুঝিয়েছেন।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ফিউচার অব এশিয়া’র উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রথমটি হচ্ছে, সংস্কার, দ্বিতীয়টি হলো, যারা অপরাধ করেছে (জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে), তাদের বিচার এবং তৃতীয়টি হলো, নির্বাচন। তিনি বলেন, নির্বাচন এ বছরের শেষে ডিসেম্বরে অথবা সর্বোচ্চ আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কার কতটা সম্পন্ন করা হচ্ছে, পুরোপুরি তার ওপর নির্বাচন নির্ভর করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি দেশকে আগের অবস্থায়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের অবস্থায় রেখে যেতে চাই, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলতে পারি। আমরা যদি খুব তড়িঘড়ি করি, কিছু সংস্কার করি এবং অন্যান্য সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা এটা (নির্বাচন) ডিসেম্বরে করতে পারি। তবে আমাদের যদি ভালো সংস্কার দরকার হয়, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।’

কিন্তু কিছু ব্যক্তি সংস্কার রেখে নির্বাচন শেষ করতে বলছেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল এটা বলছে। তিনি আরও বলেন, তাঁর কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফর ‘খুবই সফল’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই সফরের ফলে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হলো।

জাপানের সঙ্গে ছয়টি এমওইউ সই হওয়ার কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য উন্নয়ননীতি ঋণ হিসেবে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদীকে ডুয়েল গেজ ডাবল রেলপথে উন্নয়নে ৬৪১ মিলিয়ন ডলার এবং বৃত্তির জন্য অনুদান হিসেবে আরও ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দেবে জাপান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা যে ধরনের আশ্বাস চাচ্ছিলাম, তার প্রতিটিই পেয়েছি। তাঁরা বলেছেন, জাপান এই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে থাকবে এবং মহেশখালী ও মাতারবাড়ী ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। জাপান থেকে একটা সাপোর্ট আমরা পাব।’

এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, বাংলাদেশকে একটা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়া উনার স্বপ্ন, সে জন্য আমাদের প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। জাপানিরা পুরো বিশ্বে এখন বিনিয়োগ করছে, তারা “চায়না প্লাস ওয়ান” নতুন নীতি নিয়েছে। আগে তাদের বিনিয়োগ চীনমুখী ছিল, এখন তারা বাইরে গিয়েও অনেক বিনিয়োগ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের প্রধান বিনিয়োগ এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বড় কিছু কোম্পানির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। বিনিয়োগকারীদের এক ইভেন্টে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর সে দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসেছেন। এখন জাপান সফরের পর দেশটির বড় বড় বিনিয়োগকারী আসবেন এবং তাঁদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।’

জাপানের জনশক্তির বাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন দুয়ার খুলেছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কিছু চুক্তি হয়েছে। আমরা আশা করছি এবং জাপানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে এ দেশ থেকে ১ লাখ লোক নেবে। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। একটা সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলে ১ লাখের বেশি লোকও পাঠানো যাবে। দেশটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৪০ হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। এই সরকারের সময় রেকর্ডসংখ্যক ৩ হাজার শিক্ষার্থী গেছেন জাপানে। আরও বেশিসংখ্যক সামনে যাবে বলে আমরা আশা করছি। ভবিষ্যতে জাপান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তি ডেসটিনেশন হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘ভাষার ক্ষেত্রে জাপান ছাড় দিচ্ছে। আমরা আশা করছি, সামনে আরও আলোচনা হবে। যত দ্রুত ও যত বেশি জনশক্তি পাঠানো যায়, সে চেষ্টা করছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

জনশক্তির দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিভাগীয়-জেলাপর্যায়ে সরকার উদ্যোগ নেবে কি না, জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা দেখছি এ ক্ষেত্রে নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে। তারা কাজটা ইতিমধ্যে করেছে, তারা কীভাবে এত বেশিসংখ্যক লোক পাঠাল, সেই অভিজ্ঞতা আমরা নেব। আমরা জানবে চাইব, তারা কীভাবে ধাপে ধাপে এগিয়েছে। খুব দ্রুত স্কেলআপ করতে হবে, এ-সংক্রান্ত যত বাধা আছে, তা দ্রুত সমাধান করতে টাস্কফোর্স কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে জাপানে থাকা বাংলাদেশিরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। সামনে এটি আরও বেগবান হবে।’’

গুমসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘গুম কমিশনের সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। ইতিমধ্যে দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আরও একটি রিপোর্ট সামনে আসবে। তাতে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনারা গুম কমিশনে যান, তাঁদের কাজগুলো একটু দেখেন। যাঁরা গুমের শিকার হয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ন্যায়বিচার চাইবেন। অনেকে এখনো নিখোঁজ আছেন। তাঁরা কোথায় গেলেন, তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটল—সেটি পুরো জাতি জানতে চায়। এ ব্যাপারে কমিশন কাজটা করুক, তারা ফাইন্ডিংস জানাক। তারপর আমরা পরবর্তী কাজ করব।’ উৎস: আজকের পত্রিকা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়