শিরোনাম
◈ আলোচনা চালাতে চান ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, 'আগ্রাসন' বন্ধের শর্ত ইরানের ◈ সৌদি আরবকে হজের কোটা নিয়ে যে অনুরোধ করলেন ধর্ম উপদেষ্টার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের রেকর্ড: কারা পাচার করল, কীভাবে করল? ◈ যুদ্ধের মুখে ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা রাখে ‘মামাদ’ কৌশল ◈ গাজায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’তে শিশুরা তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশের এক বিভাগের চেয়েও ছোট আয়তনের ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? ◈ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ডিবি হেফাজতে, বেইলি রোড থেকে আটক ◈ এই ইসরায়েল হাসপাতালে ক্ষতির অভিযোগ করেছে, অথচ তারা গাজায় ৭০০ হাসপাতালে হামলা করেছে: এরদোয়ান ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই ফিরবেন: আমীর খসরু ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন আগুন জ্বলবে, যা কেউ থামাতে পারবে না

প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:৩০ রাত
আপডেট : ০৪ মে, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

গ্যাস চুরি ঠেকাতে ব্যর্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলার নির্দেশ

মনজুর এ আজিজ: প্রাকৃতিক গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও চুরি ঠেকাতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে যে সমস্ত কর্মকর্তারা গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও চুরি ঠেকাতে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারী মামলা দায়ের এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে রিপোর্ট করার নির্দেশনা দিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আন্তমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে। 

ওই সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বলেছেন, কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জোনভিত্তিক দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। তারা মিটার অনুযায়ী গ্যাস বুঝিয়ে দেবে। জোন ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ ও সিস্টেম লস কমাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বার্ষিক বোনাস বন্ধ করতে হবে। আর যারা সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে তাদেরকে পুরস্কার প্রদান করতে হবে।

সকল কোম্পানিকে সিস্টেম লস শূন্যে নামিয়ে আনতে রোডম্যাপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয় ওই সমন্বয় সভায়।
অন্যদিকে অবৈধ ব্যবহারকারি গ্রাহকের জন্য আইনের কঠোরতা অবলম্বন করতে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ঠেকাতে জরিমানার পাশাপাশি ফৌজদারী মামলার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে নীতিমালা আপডেট করার কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি একজন মহাব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অপরাধী যদি আমার গ্রাহক হন, তাহলে তার জরিমানা করতে পারি। ক্ষেত্র বিশেষে জরিমানার পরিমাণ ভিন্ন রয়েছে। আবাসিকে কেউ অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করলে তার জন্য এক বছরের সমপরিমাণ বিল আদায় করতে পারি। তবে ব্যবহারকারী যদি তিতাসের গ্রাহক না হন, তাহলে আমরা শুধু লাইন কেটে দিতে পারি। কিছু ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। অবৈধ ব্যবহারকারি শাস্তি কিংবা জরিমানা করতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লাগবে।

কেউ যদি চুরি করে, প্রচলিত আইন রয়েছে বিচার বিভাগ রয়েছে, অনেক সংস্থা রয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালায় পেট্রোবাংলা কিংবা তিতাসের শাস্তি দেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই বলে জানান তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বিষয়ে কঠোর আইন করা সময়ের দাবী। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আবার সেই সংযোগ চালু হচ্ছে। একই এলাকায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এভাবে চললে গ্যাস চুরি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শুধু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারি। আমাদের আর কিছুই করার নেই। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ যাচ্ছি তিনি জরিমানা কিংবা শাস্তি দিচ্ছেন। তখন জরিমানার পাশাপাশি কখনও কারাদন্ডও দিয়ে থাকেন।

সূত্র মতে, সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং বেশি চুরিও তিতাসেই। গ্যাসের ৬টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিতাস একাই ৫৫.২৩ শতাংশ গ্যাস বিতরণ করে আসছে। সারা বছর অভিযান চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না গ্যাস চুরি। প্রতিদিনেই অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে, মোবাইল কোর্টে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি অভিযানে তিতাসের লোকজনের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবুও থামানো যাচ্ছে গ্যাস চুরি।

অভিযোগ রয়েছে তিতাসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, যারা এসব অবৈধ সংযোগ থেকে মাসোহারা আদায় করেন নিয়মিত। যে কারণে অভিযান পরিচালনার পরেই আবার সচল হচ্ছে সংযোগ। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়েরে ভালো ফল আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, এতোদিন সিস্টেম লস পরিমাপ করার পদ্ধতি বেশ জটিল ছিল। কিন্তু এখন তিতাস গ্যাসের জোনগুলোতে মিটার বসানো হয়েছে, যে কারণে কোন জোনে কত শতাংশ লোকসান হচ্ছে তা দৃশ্যমান। গজারিয়াতে একটি এলাকায় এক সময় ৪০ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল, পরে ওই এলাকার পুরো লাইন বন্ধ করে দিয়েছিল তিতাস গ্যাস।

গ্যাসের সামগ্রিক সিস্টেম লস প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোন তথ্য প্রকাশ করা হয় না, ধারণা করা হয় ১০ শতাংশের উপরে। সে হিসেবে দৈনিক সরবরাহ করা ২৮০০ মিলিয়ন গ্যাসের মধ্যে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিইআরসির নির্দেশনা রয়েছে সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সেই আদেশের কোন বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। 

সিস্টেম লসের দিক থেকে তিতাসের পরেই রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। কুমিল্লা, চাঁদপুর এলাকায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিটির কোন কোন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লোকসান হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি ঠেকানো গেলে এ খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর মুনাফাও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।  

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেছেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর (সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই সময়ে ১৭২টি শিল্প, ৯৬টি বাণিজ্যিক, ২১ হাজার ৫১২টি আবাসিকসহ মোট ২১ হাজার ৭৮০টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে ১০৮ কিলোমিটার। অভিযান অব্যাহত রয়েছে, এখানে কোন রকম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সিস্টেম লসের নামে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুরি হচ্ছে। সিস্টেম লস (বর্তমান লস ৯.৮২) যদি অর্ধেক কমানো যায়, তাহলে বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়