মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ইউরোপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশগুলো যেখানে বিপুল সংখ্যক কর্মী ইউরোপে পাঠাচ্ছে, সেখানে ভাষাগত ও কারিগরি দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
মূল বিষয়সমূহ:
ইউরোপে কর্মী প্রেরণ হ্রাস: ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ১০ লাখ ১১ হাজার কর্মী বিদেশে গেলেও ইউরোপে গেছেন মাত্র ১৬,০৭৭ জন, যা ২০২৩ সালের (৩০,৪২৭ জন) তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
দক্ষতার সংকট প্রধান কারণ: ইউরোপের দেশগুলো অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে দক্ষ কর্মী চায়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশই অদক্ষ। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ মুভমেন্টসের (রামরু) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মাত্র ২৩.৬২% দক্ষ এবং ৫৪.২৩% স্বল্প-দক্ষ বা অদক্ষ।
অকার্যকর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা: প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত পাঁচ বছরে এসব কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৪ লাখের বেশি কর্মীর মধ্যে মাত্র ৮-১২ শতাংশ বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই কেন্দ্রগুলোর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি মান্ধাতা আমলের এবং বৈশ্বিক মানের নয়।
অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা:
চুক্তির অভাব: ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি জনশক্তি রপ্তানির সমঝোতা স্মারক (MoU) নেই।
ইমেজ সংকট: বাংলাদেশি কর্মীদের এক দেশ থেকে অবৈধভাবে শেনজেনভুক্ত অন্য দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা একটি বড় সমস্যা, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।
ভাষাগত দুর্বলতা: ইউরোপের শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষা না জানা একটি বড় বাধা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার মহাসচিবের মতে, সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো (টিটিসি) শুধু সনদ দেয়, কিন্তু কর্মীদের বিদেশে কাজ পাওয়ার মতো অভিজ্ঞ বা দক্ষ করে তোলে না। এই সংকট সমাধানে রিক্রুটিং এজেন্সি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে নিবিড় সমন্বয় বাড়ানো জরুরি।
সারসংক্ষেপ: ইউরোপের শ্রমবাজার ধরতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পেশাদার প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব।
উৎস: বিডি-প্রতিদিন।