হ্যাপি আক্তার: সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। আবার ঘুমাতে গিয়ে কিছু নিয়ম না মানলেও হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুমের পরিবেশ ও আলোর বিষয়টি। অনেকেরই রাতে মৃদু আলো না হলে ঘুমাতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অনেকেই নীল আলো ব্যবহার করে। ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে এই নীল আলো। টিভি৯
সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি বা আল্ট্রা-ভায়োলেট রে-এর নাম অনেকেরই জানা। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে ইউভি রে প্রোটেক্টিভ সানস্ক্রিন কিনে থাকি আমরা।কিন্তু শুধু ইউভি রে নয়, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ‘ব্লু লাইট’ বা নীল আলো। এর প্রভাব বাড়ির চার দেওয়ালের ভিতরেই সবচেয়ে বেশি। আমাদের জীবন এখন গ্যাজেটের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের চারপাশে সারাক্ষণ যেসব গ্যাজেট থাকে, যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব— এই সবকিছুর থেকেই নির্গত হয় ব্লু লাইট। এমনকি ঘরে যে এলইডি লাইড থেকে, সেই আলোও আপনার ত্বকের বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট।
ব্লু লাইট আসলে কী?
এটি এমন একপ্রকার রশ্মি যার রঙ নীল কিংবা বেগুনি। একে হাই এনার্জি ভিসিবল লাইটও বলা হয়। ব্লু লাইটের রেডিয়েশন দৈর্ঘ্য কম কিন্তু এর শক্তি অনেক বেশি। আমাদের আশপাশে থাকা সমস্ত ডিজিটাল ডিভাইস থেকেই নীল আলো নির্গত হয়। বিশেষ করে রাতের বেলা যখন কেউ ঘরের আলো বন্ধ করে মোবাইল স্ক্রল করেন, কিংবা ল্যাপটপে কাজ করেন, তখন এসব ডিভাইস থেকে নির্গত ব্লু লাইট ত্বকের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শুধু ত্বক নয়, প্রভাব পড়ে চোখেও।
ত্বকের ওপর নীল আলোর প্রভাব-
*** দীর্ঘক্ষণ এই নীল আলো ত্বকের ওপর পড়লে স্কিন সেল বা ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। বয়সের আগেই মুখে দেখা দিতে পারে বলিরেখা। মূলত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ঘাঁটাঘাঁটির সময় আমাদের মুখেই সবচেয়ে বেশি নীল আলো এসে পড়ে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুখের চামড়া।
*** আমাদের ত্বকে দু’টি মুখ্য উপাদান থাকে। collagen এবং elastin। এদের প্রভাবেই ত্বক থাকে প্রাণোজ্জ্বল। কিন্তু একটানা ব্লু লাইট মুখে এসে পড়লে ত্বকের এই দুই উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মুখের স্কিন ডাল অর্থাৎ শুকনো-রুক্ষ-জৌলুসহীন হয়ে পড়ে। দেখা দেয় বলিরেখা। চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। বিশেষ করে চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কল এবং চামড়া কুঁচকে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
*** নীল আলোর প্রভাবে ত্বকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন দাগ-ছোপ, কালচে ভাব।
শুধু ত্বক নয়, ব্লু লাইট প্রভাব ফেলে স্লিপ-সাইকেলেও-
রাতের বেলা ফোন ঘাঁটলে ঘুম আসতে চায় না। বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য আগেই প্রকাশ পেয়েছে। এর কারণ মোবাইল থেকে নির্গত হওয়া নীল আলো। এই রশ্মির প্রভাবে মানবদেহের স্লিপ হরমোন মেলাটোনিন ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে আচমকাই এনার্জির সঞ্চয় হয় এবং নাগাড়ে ফোনে স্ক্রলিং করার ফলে আর কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। টানা এমনটা চললে, ঘুমের সমস্যায় জেরবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ স্লিপ সাইকেল নষ্ট হলে আপনি স্লিপ ডিস-অর্ডারের শিকার হবেন। যার ফলে বিগড়ে যাবে আপনার বায়োলজিকাল ক্লক। তাছাড়া ঠিকমতো ঘুম না হলে একটা ক্লান্তির ছাপ সারাক্ষণ লেগে থাকবে আপনার চোখে-মুখে। আপনার ত্বকও যেন ঝিমাতে শুরু করবে।
সমস্যা এড়াতে যা করবেন?
*** অতি অবশ্যই অন্ধকার ঘরে ডিজিটাল ডিভাইস ঘাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় ফোন রাখবেন না। একান্তই যদি রাত জেগে কাজ করতে হয়, তাহলে ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখুন।
*** রাতে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার না করাই ভাল। কাজের স্বার্থে করতে হলে ফোনের ‘নাইট শিল্ড’ মোড অন রাখুন। ল্যাপটপের ব্রাইটনেস কিছুটা কমিয়ে নিন।
*** ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্কিন ময়শ্চারাইজিং করা প্রয়োজন। তাই ক্রিম ম্যাসাজ করুন। মুখে-গলায় ভাল করে ক্রিম লাগিয়ে ঘুমোতে যান।
*** জিঙ্ক-অক্সাইড বেসড সানস্ক্রিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট, আপনার ত্বককে ব্লু লাইট থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
এইচএ