সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিনই নতুন নতুন সৌন্দর্যচর্চার ধারা ভাইরাল হয়। সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়েছে এক অভিনব পদ্ধতি— বরফজল ফেইশল। প্রথমে শুনতে ভয়ানক ঠাণ্ডা মনে হলেও অনেকেই দাবি করছেন, এই পদ্ধতি নাকি মুহূর্তেই ত্বকে এনে দেয় উজ্জ্বলতা ও প্রশান্তি।
এমনকি অনেক তারকাদেরও এই ফেইশল করতে দেখা গেছে। তবে আসলেই কি বরফজল ফেইশল উপকারী?
বরফ-পানি ফেইশল যেভাবে করা হয়
পদ্ধতিটি খুবই সহজ। একটি পরিষ্কার বাটিতে ঠাণ্ডা পানি এবং কয়েকটি বরফকুচি দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নোয়া গ্র্যাচ রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, "পানি অবশ্যই ঠাণ্ডা হতে হবে। তবে এতটা ঠাণ্ডা নয় যাতে তা অস্বস্তিকর লাগে।”
এরপর মুখ সেই পানিতে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। এভাবে মোট এক থেকে দুই মিনিট পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি করা যায়।
প্রক্রিয়া শেষে মুখ আলতো করে পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে এবং অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত করার কোনো দরকার নেই।
ডা. গ্র্যাচের মতে, "সপ্তাহে কয়েকবার এই ফেইশল যথেষ্ট। অতিরিক্ত করলে ত্বক শুষ্ক বা জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে।"
যারা এ ফেইশল এড়িয়ে চলবেন
যদিও বরফ-জল ফেইশলের বেশ কিছু উপকারিতা আছে, তবে এটি সবার জন্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও কসমেটিক সার্জন ডা. মেলানি পাম সতর্ক করে বলেন, "যাদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, বা যাদের ‘রোসেসিয়া’ বা একজিমা আছে, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এসব সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।"
তাছাড়া যাদের ‘হাইভস’ বা অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, বিশেষ করে যেটি ঠাণ্ডার কারণে হয় (যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘কোল্ড-ইনডিউসড আর্টিকারিয়া’), তাদের অবশ্যই এই ফেইশল এড়ানো উচিত।
বরফজল ফেইশলের উপকারিতা
ফোলাভাব কমায়: "ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এলে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়। ফলে ত্বকের উপরিভাগের ফোলাভাব কমে যায়। বিশেষত চোখের চারপাশে এই প্রভাব বেশি দেখা যায়" বলেন ডা. নোয়া গ্র্যাচ।
ছিদ্র ছোট দেখায়: রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়ায় ত্বকের ছিদ্রগুলো সাময়িকভাবে ছোট দেখায়। তবে এর স্থায়িত্ব অল্প সময়ের জন্যই থাকে।
প্রদাহ কমায়: ডা. গ্র্যাচ বলেন, "ব্রণ বা প্রদাহযুক্ত ত্বকে বরফ-জল সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। ঠাণ্ডা পানির কারণে প্রদাহ কিছুটা কমে যায় এবং দাগ বা ব্রণ ততটা চোখে পড়ে না। যদিও এটি স্থায়ী সমাধান নয়।"
ত্বকে এনে দেয় উজ্জ্বলতা: ঠাণ্ডা পানি থেকে মুখ গরম হলে রক্তনালী প্রসারিত হয়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
ডা. মেলানি পামের মতে, "এই প্রক্রিয়া ত্বকের কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়, যা ত্বকে এনে দেয় সাময়িক এক প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।"
মনকে শান্ত করে: বরফ জল ফেইশল কেবল ত্বকের জন্য নয়, মানসিকভাবেও আরাম দেয়।
ডা. নোয়া গ্র্যাচ জানান, "ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে শরীরে ‘ডাইভিং রিফ্লেক্স’ নামক একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়। এটি হৃদস্পন্দন কমায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। ফলে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে প্রশান্তি অনুভব করে।"
সতর্কবার্তা ও সীমাবদ্ধতা
যদিও বরফজল ফেইশল মুহূর্তের জন্য ফোলাভাব, প্রদাহ বা ক্লান্তি দূর করতে পারে, এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়।
ডা. মেলানি পাম স্পষ্ট করে বলেন, "বাড়িতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে যত্ন নেওয়া উপকারী হতে পারে। তবে এটি কখনই পেশাদার চিকিৎসা বা কসমেটিক ট্রিটমেন্টের বিকল্প নয়।"
এটি প্রধানত এক ধরনের সাময়িক স্বস্তির উপায়। যেমন ঘুমের ঘাটতি বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আগে দ্রুত ‘ফ্রেশ লুক’ বা সতেজভাব পাওয়ার জন্য এটি কাজে লাগতে পারে। সূত্র: বিডি নিউস ২৪